দেশকে নিয়ে থেমে নেই শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্র

সিলেটে মতবিনিময় সভায় মির্জা ফখরুল

প্রকাশ | ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

সিলেট অফিস
শনিবার সিলেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগৃহীত
'দেশকে নিয়ে শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্র থেমে নেই' বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকার যখন দেশকে একটি স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, দেশ যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তখন ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছেন। এটি সফল হবে না।' শনিবার বিকাল ৩টায় সিলেটের এয়ারপোর্ট এলাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। 'অতীতের সব জঞ্জাল পরিষ্কার করে সত্যিকারার্থে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার' তাগিদ দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, 'এজন্য রাষ্ট্রকে সব প্রতিষ্ঠান সংস্কার করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই, তবে এটি অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়। বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার মাত্র তিন মাসে সব জঞ্জাল দূর করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছিলেন।' তিনি বলেন, 'বর্তমানে দেশের একটি অংশ ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। গত ১৫ বছরে এমন আকস্মিক বন্যা আমরা দেখিনি। ভারত তাদের বাঁধ খুলে দেওয়ায় এই ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। তারা বাঁধ খুলে দেওয়ার আগে কোনো পূর্বাভাসও দেয়নি। উজানের পানির বেশির ভাগই ভারত থেকে আসে। অভিন্ন নদীসমূহের পানিবণ্টনের কোনো সুরাহা আজও হয়নি। পানি আগ্রাসনকে ভারত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। সিলেট থেকে এই পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল। এম ইলিয়াস আলীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যার ফলে তাকে গুম করা হয়েছে।' আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, '১৯৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত তারা জনসমর্থনহীনভাবে ক্ষমতায় ছিল, যার ফলে তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল কায়েম করে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা শুরু করেছিল। এবারও তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা করার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছিল। কিন্তু দেশের সাধারণ ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। মানুষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভয়ে মুখ খুলে কথা বলতে পারত না। সাংবাদিকরা ও গণমাধ্যমে এই আইনে দমন করা হতো। এখন মানুষ বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। আমরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে বাতিল করে দেব।' তিনি বলেন, 'ছাত্র-জনতার এই বিপস্নবে সিলেটের সাংবাদিক আবু তুরাবসহ অসংখ্য মানুষ পুলিশের গুলিতে শাহাদাতবরণ করেছেন। আমরা তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।' মির্জা ফখরুল বলেন, '২০১২ সাল থেকে আমরা এই সংগ্রাম করছি। সেই থেকে আমাদের প্রায় ৭০০ জন গুম করা হয়েছে, প্রায় ২ হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার গায়েবি মামলা করা হয়েছে, এসব মামলায় বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মুক্ত হয়েছেন, তিনি কখনো মাথা নত করেননি। আমাদের তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা আইনিভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি। আমরা ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া সবাইকে নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন, জাতিসংঘের একটি তদন্ত দলও এসেছে। আমরা এখনো আশাবাদী, আমরা সঠিক তথ্য পাব। সরকারও সুনির্দিষ্টভাবে এখনো কিছু বলেনি। আমরা তাদের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানতে চাই।' সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, উপদেষ্টা ও ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী প্রমুখ। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আকাশপথে বিএনপি মহাসচিব সিলেটে আসেন। পরে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে হযরত শাহজালাল ও শাহপরান (রাহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এই প্রথম সিলেট সফরে আসলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।