বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

সহিংসতায় অপেশাদার কর্মকর্তাদের দায় দেখছেন ডিএমপি কমিশনার

যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
সহিংসতায় অপেশাদার কর্মকর্তাদের দায় দেখছেন ডিএমপি কমিশনার

কোটা সংস্কারের দাবি থেকে সরকার পতনের আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতার পেছনে কিছু পুলিশ কর্মকর্তার অপেশাদারিত্ব দেখছেন ডিএমপি কমিশনার মাইনুল হাসান।

তিনি বলেছেন, 'বিগত সময়ের উচ্চাভিলাষী ও অপেশাদার কিছু পুলিশ কর্মকর্তা সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। এর ফলে ছাত্র-জনতার আন্দোলন, গণঅভু্যত্থান এবং বিগত সরকারের পতনকে ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছিল।

তিনি বলেন, ডিএমপিসহ সারাদেশে অনেক পুলিশ সদস্য আহত এবং নিহত হয়েছেন। প্রাণভয়ে আত্মগোপনে ছিলেন মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। এ ধরনের ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন পুলিশ বাহিনী ইতোপূর্বে কখনো হয়নি।'

শনিবার বেলা ১১টায় মিন্টো রোডের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।

সহিংসতার মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের ঢাকার প্রায় সব অফিস ও বক্স ভাঙচুর হয়েছে। ডিএমপির ৫০টি থানার মধ্যে ২২টি থানা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপুলসংখ্যক যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লুণ্ঠিত হয়েছে প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ।

মাইনুল হাসান বলেন, 'আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করি, যাতে পুলিশ সদস্যরা ভয় না পেয়ে দ্রম্নত কাজে ফিরে আসেন। কিন্তু ইতোমধ্যে কিছু উচ্চাভিলাসী ও অপেশাদার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাদের ব্যাপক ক্ষোভ জন্মায় এবং নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কর্মবিরতি শুরু করে।'

তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা,

আইজিপি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ডিএমপি কমিশনারের তৎপরতায় কিছু দাবি তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয় এবং বাকিগুলো দ্রম্নত মেটানোর আশ্বাসের পুলিশ সদস্যরা কাজে ফেরেন বলে জানান তিনি।

অপেশাদার পুলিশ কর্মকর্তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার বলেন, 'ইতোমধ্যে বিভিন্ন পুলিশ অনেকের নামে মামলা রুজু হয়েছে। আর আইনগত ব্যবস্থাটি একটা চলমান প্রক্রিয়া।'

'এটির পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে হয়তো সময় লাগবে। আর বিভাগীয় ব্যবস্থা চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।'

ক্ষমতাচু্যত সরকারের যেসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে তারা কী ধরনের তথ্য দিয়েছে-এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তা মাইনুল বলেন, 'সাম্প্রতিক গণআন্দোলনে যে হত্যাকান্ড হয়েছে, এসবের মামলায় তারা আমাদের কাছে রিমান্ডে আছেন।

'আমরা মনে করি তারা বিভিন্নভাবে হয়তো কেউ অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন, কেউ হয়তো পরামর্শ দিয়েছেন, কেউ বিভিন্ন সময় বক্তৃতা দিয়ে এটাকে উৎসাহিত করেছেন। আমরা এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি, তাদের ইনভলভমেন্টটা পরিষ্কার হওয়ার জন্য।'

অতীতের মতো এবারও 'গণমামলা' হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, 'যে কোনো মামলায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধীর বিভিন্ন ধরনের ইনভলবমেন্ট থাকে। অনেকেই আছে- যারা হয়তো এ ধরনের অপরাধ সংগঠনে সহযোগিতা করেছেন বিভিন্নভাবে। আপনারা জানেন অনেকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছেন, অনেকে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন, অনেকে মিডিয়াতে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। এগুলো তো অপরাধ।

'আমরা আইন অনুযায়ী যে কাজগুলো করব, আমরা অ্যাভিডেন্স কালেকশনের চেষ্টা করব। যে কোনো মামলার তদন্তে অ্যাভিডেন্স কালেকশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং যে কোনো অ্যারেস্ট হবে কালেক্টেড অ্যাভিডেন্সের ওপর।"

অপেশাদার কর্মকর্তাদের অপসারণ করা হচ্ছে নাকি তাদের রেখেই আগাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তা মাইনুল বলেন, 'এটি সময় লাগবে। যে কোনো বিষয় তাৎক্ষণিক হয় না, এটা একটা প্রক্রিয়া। আপনারা একটা পরিচ্ছন্ন পুলিশিং দেখতে পাবেন। আর যাদের আস্থার সংকট বলছেন, ওনারা থাকবেন না।'

সহিংসতায় ডিএমপির ১৪ জন নিহত এবং ৪২৭ জন আহত হয়েছে। ছাত্র-জনতার হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনো জানা সম্ভব হয়নি।

ওই সময় ডিএমপির খোয়া যাওয়া ১ হাজার ৮৫৮টি অস্ত্রের মধ্যে ৪৫৩টি পাওয়া গেছে। আরও কিছু ডিএমপির হাতে ফিরবে, যেগুলো বিভিন্ন সংস্থার কাছে রয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, 'সামনের দিনগুলোয় পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে কাজ করতে পারব। অলমোস্ট সবাই কাজে যোগ দিয়েছে। আর যারা নেই, তারা হয়তো এদিক-সেদিক আছেন, কেউ অসুস্থ থাকতে পারেন।

'পুলিশ স্বাভাবিক হতে কতদিন লাগবে এটা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না, আমরা নিয়মিত চেষ্টা করছি। এখন আমাদের যারা ফিল্ডে কাজ করছে। বিশেষ করে ট্রাফিক পুলিশ এখনো পাবলিক বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। এখানে আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।'

আন্দোলনে বিভিন্ন সংগঠনের অনেককে অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা গেছে, এ বিষয়ে মাইনুল বলেন, 'অনেকে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র ব্যবহার করেছে, অবৈধ অস্ত্রও ব্যবহার হয়েছে। আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে, বিষয়গুলো আমাদের মাথায় আছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে