পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে আদিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন 'পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন'।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন ৭ দফা দাবি তুলে ধরে, তা অবিলম্বে বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, 'সাম্প্রতিক গণঅভু্যত্থানে আদিবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আমরা দেয়ালে দেয়ালে দেখেছি তাদের স্স্নোগান- 'বুটের তলায় পাহাড় কেন?' 'কল্পনা চাকমা কোথায়?' তাদের এসব স্স্নোগানও আন্দোলনে নতুন গতি এনেছে।
'আমি বাঙালি হয়েও আদিবাসীদের এই ন্যায্য দাবির সঙ্গে একাত্ম হয়েই যুক্ত আছি, যেমন করে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও সরব থাকি।'
পাহাড় থেকে সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, 'আমরা সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে। সারাদেশ এক রকমভাবে চলবে, আর তিন জেলায় সামরিক শাসন চলবে, তা হতে পারে না।'
মানবাধিকারকর্মী মেইন থিন প্রমীলা বলেন, 'সমতলে যে আদিবাসীরা আছেন, তাদের অনেকেরই জমির দলিল থাকার পরও
তাদের ঠেলে বের করে দেওয়া হচ্ছে। দখল করে নেওয়া হচ্ছে তাদের বাড়িঘর। এই দখলদারিত্য বন্ধ করতে হবে।'
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি যে এই অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার আমাদের দেশমাতৃকাকে গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালিত করবে।
'২৬ বছর ধরে এই চুক্তির মূল উপাদানগুলো অনেকাংশে অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসী জনগণ এবং সারাদেশের নাগরিকদের এক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে।'
৭ দফা দাবি
১. চুক্তিটিকে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়সীমা এবং জবাবদিহিতার ব্যবস্থাসহ একটি সুস্পষ্ট ও কার্যকরী পরিকল্পনা প্রদান।
২. পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত সামরিক তত্ত্বাবধান এ অঞ্চলের শাস্তি, অগ্রগতি ও উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সামরিক তৎপরতা এ অঞ্চলে চলমান সহিংসতার উৎস। অপারেশন উত্তরণ প্রত্যাহারপূর্বক সামরিক তত্ত্বাবধান স্থায়ীভাবে বন্ধ করা এবং এ অঞ্চলকে চুক্তির বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তার শাসন কাঠামো বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩. গণতান্ত্রিক, প্রতিনিধিত্বশীল স্থানীয় শাসনব্যবস্থা এবং পার্বত্য অঞ্চলের অন্যান্য চাহিদা মোকাবিলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং তিনটি জেলা পরিষদকে অবশ্যই চুক্তি অনুসারে যথাযথ ক্ষমতা প্রদান।
৪. ভারত থেকে আগত পাহাড়ি শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকর করা।
৫. চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির জন্য এ অঞ্চলের অনন্য সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত ঐতিহ্যকে সম্মানপূর্বক টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ।
৬. সমতল ভূমির জেলাগুলোর প্রচলিত সব স্থানীয় সরকারে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া।
৭. সমতলের আদিবাসীদের জীবন, জমি এবং জীবিকা সংক্রান্ত তাদের নিদিষ্ট চাহিদা এবং চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় অবিলম্বে একটি পৃথক ভূমি কমিশন প্রতিষ্ঠা করা।
এই ৭টি দাবির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে আরও ৫টি বিষয় অবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সেগুলো হলো- পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির পুনর্গঠন। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সক্রিয় করা। আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে সংলাপ। পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠন। এবং সমতল ভূমির আদিবাসীদের রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ।
শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার এ পদক্ষেপগুলো অগ্রাধিকার তালিকায় রেখে দ্রম্নততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করে শান্তি প্রতিষ্ঠার সূচনা করতে পারে বলে প্রত্যাশা করেন অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন, সেখানো আরও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী দীপায়ন খীসাসহ অনেকে।