গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি কারখানার শ্রমিকরা তিন মাস এবং স্টাফরা পাঁচ মাস ধরে বেতন পান না। অন্যদিকে জেলার শ্রীপুরে প্রায় ১ বছর ধরে বকেয়া পরিশোধ না করেই একটি কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের বেতন পরিশোধ ও কারখানা চালুর দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা এ বিক্ষোভ করেন।
আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার কালিয়াকৈরে শ্রমিকদের তিন মাস এবং স্টাফদের পাঁচ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে মাহমুদ জিন্স লিমিটেড পোশাক কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীরা বিক্ষোভ করেছেন। সকাল ৯টা থেকে তারা কারখানায় বিক্ষোভ করেন। শুক্রবার উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় ওই পোশাক কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। পরে সকাল ৯টার দিকে তারা বেতন চেয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করলে ওই সড়কের উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
কারখানার শ্রমিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিন মাস যাবৎ তাদের বেতন দিচ্ছে না কারখানা কর্তৃপক্ষ। সুপারভাইজার, ইনচার্জসহ ওপরের অন্য স্টাফদের পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। ২১ আগস্ট বিকালে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। ওই সময় কারখানা কর্তৃপক্ষ ২২ আগস্ট বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিলেও বৃহস্পতিবার বেতন দেয়নি। ওইদিন রাতেও শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এক পর্যায়ে তারা কারখানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ তৈরি করে এবং বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে ওই মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
পরে সেনাবাহিনী, থানা-পুলিশ ও শিল্প-পুলিশের সদস্যরা গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের আশ্বাস দিলে দুপুর পৌনে ৩টার দিকে তারা মহাসড়ক ছেড়ে কারখানার সামনে অবস্থান নেন। বিকাল সাড়ে ৩টাও ওই পথে গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
কারখানার লাইন চিফ আজহার হোসেন, সুপারভাইজার বাচ্চু মিয়া এবং সুইং অপারেট হালিমা খাতুনসহ শ্রমিকরা জানান, গত পাঁচ মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় আমাদের খুব কষ্ট করে চলতে হচ্ছে। দোকান মালিকরা বাকিতে আর বাজার দিতে চাচ্ছেন না। কেউ ধারদেনাও দিচ্ছেন না। বাড়ির মালিকরা ঘরভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। বাচ্চাদের স্কুলের বেতন দিতে না পারায় তাদের স্কুলে পাঠালেও যেতে চাচ্ছে না। মালিক কর্তৃপক্ষ তাদের বকেয়া বেতনের কথা কিছুই বলছেন না। বাধ্য হয়ে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় অবস্থান নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছেন।
গাজীপুর শিল্প-পুলিশের ইন্সপেক্টর নিতাই চন্দ্র বলেন, মাহমুদ জিনস লিমিটেড পোশাক কারখানার স্টাফ ও শ্রমিকরা সকাল থেকেই বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। গত কয়েকদিন যাবৎ কারখানার ভেতরে কাজ বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছেন বলে তারা জানান।
আমাদের শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের দাবিতে এবং মালিকপক্ষের চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ এনে গাজীপুরের শ্রীপুরের ঢাকা-কাপাসিয়া আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন করেছে ডার্ড কম্পোজিট নামের এক কারখানার চাকরিচু্যত শ্রমিকরা।
শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ওই সড়ক অবরোধ করে এ কর্মসূচি পালন করে শ্রমিকরা। এতে শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও যোগ দেন।
এদিকে শ্রমিকদের অবরোধের কারণে বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-কাপাসিয়া আঞ্চলিক সড়কে উভয় দিকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা।
বিক্ষোভ মিছিলে শ্রমিকরা দাবি করেন, প্রায় ১ বছর ধরে কারখানাটি বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ না করে প্রতিষ্ঠানটি লে-অফ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। যার ফলে বেকার হয়ে পড়ে কয়েক হাজার শ্রমিক। বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
শ্রীপুর থানায় কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজিম মিয়া যায়যায়দিনকে বলেন, 'শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় থানা পুলিশকে কেউ অবগত করেননি, তাই ঘটনাস্থলে কেউ যাননি। তবে পুলিশের অন্য কেউ গেছেন কি না তা জানা নেই।'