ক্রসফায়ারে আরও দুই হত্যার অভিযোগ

যশোরে ডিআইজি আনিসসহ ৪৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশ | ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
যশোরের মণিরামপুরের জয়পুর গ্রামের পলস্নী চিকিৎসক বজলুর রহমান ও আনিসুর রহমানকে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় যশোরের সাবেক পুলিশ সুপার ও বর্তমান রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, ওসি-এসআইসহ ৪৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। বুধবার বিকালে নিহত পলস্নী চিকিৎসক বজলুর রহমানের স্ত্রী রেশমা বেগম ও নিহত আনিসুর রহমানের ভাই মুনছুর আলী বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন। মণিরামপুর আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহম্মেদ অভিযোগ দুইটি গ্রহণ করে আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী এমএ গফুর ও শহীদ মো. ইকবাল হোসেন। পলস্নী চিকিৎসক বজলুর রহমান হত্যার মামলার অপর আসামিরা হলো, মণিরামপুর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্যা খবির আহমেদ, এসআই তাসমীম আহমেদ, এসআই শাহীন, দত্তকোনা গ্রামের মৃত হাতেম আলী মালীর ছেলে কাজী মাহামুদুল হাসান, হাকোবা গ্রামের আনিচুর রহমান, হাজরাকাটি গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে শহিদুল ইসলাম শাহিন। আনিসুর রহমান হত্যা মামলার আসামিরা হলো, মণিরামপুর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আজম, এসআই হিরোন, হাকোবা গ্রামের গোলাম ড্রাইভারের ছেলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, বাবলু হোসেন, হাজরাকঠি গ্রামের মৃত দুর্গাপদ সিংহের ছেলে সুব্রত সিংহ, বাদল সিংহ, মুজাহার সরদারের ছেলে মজিদ সুপার, মৃত সামছুর গাজীর ছেলে আয়ুব আলী গাজী, মৃত নওশের মেম্বরের ছেলে মুনতাজ হোসেন, ইব্রার ছেলে আবুল কালাম, মৃত সালাম দফাদারের ছেলে ইউনুচ আলী দফাদার, মৃত আমিন গাজীর ছেলে তুরাব আলী গাজী, মৃত কানকাটা আক্কাসের ছেলে ইস্রাফিল, মনি মহলদারের ছেলে হামিদ, মৃত সালাম দফাদারের ছেলে মহাসীন দফাদার, মৃত আক্কেল দফাদারের ছেলে রোস্তম আলী, মতিয়ার রহমানের ছেলে তুষার, ইসমাইলের ছেলে সবুজ, মৃত আবুল হোসেনের ছেলে শামীম হোসেন, আবুল হোসেনের ছেলে বুলবুল হোসেন, মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে শহিন হোসেন, মৃত সামছুর রহমানের ছেলে মিল্টন হোসেন, সমসকাঠি গ্রামের মৃত হাশেম গাজীর ছেলে জামাল হোসেন, হবির হোসেন মেহেদী, মৃত সাখাওয়াতের ছেলে ইকবাল হোসেন, জয়পুর গ্রামের মৃত সালাম দফাদারের ছেলে মনজুর হোসেন, মোক্তার গাজীর ছেলে মারুফ হোসেন, মৃত খোকনের ছেলে ডিস হামিদ, দায়েম দফাদারের ছেলে আলমগীর দফাদার, মৃত একাব্বর মোল্যার ছেলে হোসেন মেম্বর, মোজিদ সুপারের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন, মৃত আনার মোল্যার ছেলে ইকবাল হোসেন, মৃত সামাদ বিশ্বাসের ছেলে বাবু, ইমদাদুল হক মিলন, আসাদ, মৃত গহর আলী বিশ্বাসের ছেলে আহাদ হোসেন, মৃত শাহাদৎ বিশ্বাসের ছেলে সাদ্দাম বিশ্বাস, মৃত এরশাদ আলীর ছেলে আব্দুল হাকিম, টাক আজিজের ছেলে শিমুল, দোনার গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে তুহিন ও সুলবলকাঠি গ্রামের নাছিল সরদারের ছেলে এরশাদ। বজলুর রহমান হত্যার মামলার অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রম্নয়ারি সন্ধ্যার পর উপজেলার জয়পুর বাজারের পলস্নী চিকিৎসক বজলুর রহমানকে তার দোকান থেকে আটক করে পুলিশ। এরপর পুলিশ তাকে মারপিট করে গাড়িতে করে থানায় নিয়ে যায়। পরিবারের লোকজন খোঁজ নিতে গেলে জানানো হয় পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাকে আটক করা হয়েছে। এরপর তাকে একটি পেন্ডিং মামলায় আটক দেখানো হয় এবং ওসি আওয়ামী লীগ নেতা অপর আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। বজলুর রহমান বিএনপি করে এবং সে ক্রসফায়ারের এক নম্বর লিস্টে আছে বলে তারা জানান। ওই রাতে বজলুর রহমানকে থানা অভ্যন্তরে মারপিট করা হয়। এরপর গভীর রাতে তাকে যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বেগারিতলা নামক স্থানে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। পরের দিন সকালে পরিবারকে তার মৃতু্যর বিষয়টি জানানো হয়। এরপর আসামিরা যোগসাজশে বজলুর রহমানের ময়নাতদন্ত করে লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পুলিশ হেফাজতে বজলুর রহমানের মৃতু্যর ঘটনায় মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে পরিবেশ অনুকূলে আসায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে তিনি আদালতে এই মামলার দায়ের করেছেন। অপরদিকে আনিসুর রহমান হত্যার অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২২ মার্চ সকালে জয়পুর গ্রামের ফজলুর রহমানকে পুলিশ বাড়ি থেকে আটক করে। এ সময় গ্রামের মানুষ জড়ো হয়ে ফজলুকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। তখন আসামি আমজাদ হোসেনের হুকুমে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আজম খান জড়ো হওয়ায় জনগণকে লক্ষ্য করে গুলি করতে আনিসুর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। আসামি বাদল সিংহ গুলি করলে শরিফুল ও আলমগীর দফাদার গুরুতর জখম হন। অপর আসামি শিমুল জনগণকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ে মারার সময় তার হাতের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটলে ডান হাতের কব্জি উড়ে যায়। এরই মধ্যে গ্রামের মসজিদের মাইকে হামলার কথা প্রচারের পর পুলিশ ও অপর আসামিরা ফাঁকা গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনার পর মামলা করতে না পারায় বর্তমান সময়ে পরিবেশ অনুকূলে আসায় তিনি এ মামলা করেছেন। প্রসঙ্গত, এর আগে গত রোববার একই অভিযোগে রাজশাহী বিভাগের ডিআইজি আনিসুর রহমানসহ ৮ জনকে আসামি করে মামলা হয়। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামের আবু সাঈদ নামে এক যুবককে আটকের পর ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এদিন আবু সাঈদের স্ত্রী পারভীন খাতুন বাদী হয়ে মণিরামপুর আমলি আদালতে এ মামলা করেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহমেদ অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশের খুলনা বিভাগীয় ডিআইজিকে আদেশ দিয়েছিলেন।