পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত এক অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী। গত কয়েকদিন ধরে সামুদ্রিক জোয়ারের সঙ্গে সৈকতের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ উপকূলের প্রায় ৬০ কিলোমিটার অংশে ভেসে আসছে গাছের গুঁড়ি, বোতল, ছেঁড়া জাল ও পস্নাস্টিক বর্জ্যসহ হরেক রকম আবর্জনা। এতে সৈকতের সৌন্দর্যহানি হচ্ছে। পাশাপাশি দুর্গন্ধযুক্ত আবর্জনার কারণে সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক থেকে শুরু করে সবাই বিব্রত বোধ করছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন পরিচালিত সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারভাইজার মাহবুব আলম জানান, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পরিষ্কার করেও আবর্জনা শেষ করতে পারছেন না। অনেকে ঠেলাগাড়িসহ ছোট যানবাহনে করেও নিয়ে যাচ্ছে এসব।
বিচকর্মী আয়েশা আক্তার বলেন, 'সমুদ্রের জোয়ারের সঙ্গে চার কিলোমিটার সৈকতজুড়ে নানা আকারের গাছের গুঁড়ি, ছনসহ পাহাড়ি নানা ধরনের
উদ্ভিদ, বাঁশের টুকরা ও লতাসহ নানা ধরনের বর্জ্য ভেসে আসতে থাকে। স্থানীয়রা এ বর্জ্যগুলো জ্বালানিসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহারের জন্য সৈকত থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া তারাও অনেক বর্জ্য পরিষ্কার শুরু করেছেন।'
কলাতলী সৈকতে ব্যবসায়ী ইকবাল আহমদ বলেন, সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে দরিয়ানগর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বর্জ্য। বড় বড় জাহাজ বা মাছের ট্রলার থেকে এই বর্জ্যগুলো সাগরে ফেলা হচ্ছে। এসব বর্জ্য উপকূলে এসে পরিবেশ নষ্ট করছে।'
সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাগরের পানিতে ভেসে আসা সুগন্ধা পয়েন্টে দরিয়ানগর, কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী, শৈবাল, মাদ্রাসা, ডায়াবেটিস ও নাজিরারটেক পয়েন্টে টন টন খড়কুটো, নানা প্রকার পস্নাস্টিক বর্জ্য, কাঁচের বোতল, ছেড়া জাল, গাছের গুঁড়িসহ নানা বর্জ্যে হুমকির মুখে পড়েছে সৈকত। সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে এসব বর্জ্য কূলে এসে জড়ো হচ্ছে। সকাল থেকে বিচ কর্মীদের পস্নাস্টিক বর্জ্য ও কাঁচের বোতল সংগ্রহ করে কিছু পরিষ্কার করতে দেখা গেছে। বিচকর্মীরা একদিকে পরিষ্কার করছেন, অন্যদিকে ফের এসব বর্জ্যে ভরে যাচ্ছে সৈকত।
সৈকতে আসা ঢাকার পর্যটক মাহাবুব রহমান দম্পতি জানান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা সমুদ্র সৈকত কী হয়ে গেল! সৈকতের পরিবেশ নষ্ট হয়ে পড়েছে। বালিয়াড়ীতে ময়লাগুলো দেখতে খুব বিশ্রি লাগছে। দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রম্নত সময়ের মধ্যে এসব নোংরা আবর্জনা পরিষ্কার করে স্বাভাবিক করে তোলা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও সমুদ্রবিজ্ঞানী শরীফ বলেন, 'সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ময়লা আবর্জনার স্তূপ হয়ে পড়েছে। এসব অপচনশীল বর্জ্যের উৎস অনুসন্ধান, সৈকতের জীববৈচিত্র্য প্রাকৃতিক সম্পদসহ নানা বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট কাজ করছে।'
তিনি আরও বলেন, 'মূলত বর্ষাকালে সাগরের গভীর স্রোত সরাসরি সমুদ্রের তীরে এসে মিশে। তাই সাগরে বিদেশি জাহাজ, মাছ ধরার ট্রলার, সেই সঙ্গে পাহাড়ি ঢলে আসা বর্জ্য পানির স্রোতের সঙ্গে কূলে চলে আসছে।'
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আতাউল গণি ওসমানী বলেন, 'আবর্জনাগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যে সৈকতের ময়লা পরিষ্কার হয়ে যাবে।'