পরীক্ষা বাতিল 'অনভিপ্রেত' সিদ্ধান্ত নেবেন বিশেষজ্ঞরা
সাংবাদিকদের শিক্ষা উপদেষ্টা
প্রকাশ | ২২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
আন্দোলন-সহিংসতার ধাক্কায় এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের সিদ্ধান্তকে 'অনভিপ্রেত' বলছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। এইচএসসির ফল প্রকাশের বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে বুধবার শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য জানতে চাইলে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে আমার একার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু নেই, জানিও না। বোর্ডগুলো সিদ্ধান্ত নেবে।'
এদিকে, গত ৩০ জুন শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষা অর্ধেকের মতো শেষ হওয়ার পর তাতে ছেদ পরে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংস পরিস্থিতিতে বাকি পরীক্ষাগুলো কয়েক দফা স্থগিতের পর ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরুর কথা ছিল।
কিন্তু পরীক্ষায় বসতে অনাগ্রহী পরীক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে মঙ্গলবার সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ দেখালে অবশিষ্ট পারীক্ষাগুলো বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেছিলেন, 'বাকি পরীক্ষাগুলো আর হবে না। ফলাফল কীভাবে দেওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।'
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমের কাছ থেকেও। এই সিদ্ধান্তকে 'অযৌক্তিক' বলেছেন তিনি।
পরীক্ষা বাতিলের বিষয়টি কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'কালকে (মঙ্গলবার) অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। এ সম্পর্কে আমি এখনো চিন্তাও করিনি। আমার মাথায় এটা ঢুকছে না এখন।'
তিনি বলেন, 'এটা নিয়ে আমি এককভাবে কিছু করব না। বোর্ডগুলো এক্সপার্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। এইচএসসির এবার অর্ধেক পরীক্ষা হয়ে গেছে, সব মিলিয়ে তারা কী করবেন তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। এই পরীক্ষার যেকোনো ঘোষণা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দেওয়ার কথা। তিনি যে ঘোষণা দিয়েছেন সেটাই ঘোষণা।'
এসব শিক্ষার্থীর পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া নিয়েও কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে, সেটা আমাদের আওতায় নেই। তবে তারা যদি ভর্তি পরীক্ষার জন্য আরও যাচাই-বাছাই করতে চায়, সে সুযোগ তো রয়ে গেছে। যেহেতু এইচএসসির বাকি পরীক্ষাগুলো হচ্ছে না।'
ক্ষমতার পালাবদলের পর বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের দায়িত্ব ছাড়ার প্রেক্ষাপটে ওইসব প্রতিষ্ঠানে যোগ্য ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য শিক্ষকদের থেকে উপাচার্য নিয়োগের চেষ্টা চলছে বলে জানান উপদেষ্টা।
দেশে প্রায় অর্ধশত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪২টিতেই এখন উপাচার্য ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে
ক্লাস পরীক্ষাও ব্যাহত হচ্ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে অন্যান্য বেসরকারি কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে।
উপাচার্য নিয়োগ প্রসঙ্গে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'আগে যে সুবিধা ছিল, বিশেষ করে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের শিক্ষকদের একটা সংগঠন থাকে। সেখান থেকে টেনে একজনকে ভিসি বানিয়ে দেওয়া হতো। আমাদের ক্ষেত্রে তো সেই সুযোগ পাচ্ছি না। এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষককে আমরা চিনি তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব এবং প্রশাসনিক দক্ষতার দিক থেকে যারা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, এরকম শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করছি। যত দ্রম্নত সম্ভব আমরা প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ দেব। প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একত্রে নিয়োগ দিয়ে দেব ভাবছি।'
মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো থেকেও অনেক শিক্ষককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেকে আবার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে নিজে থেকে সরে যাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, 'দেশের বেসরকারি কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছিল। তাতে শিক্ষক নিয়োগে যে অনিয়ম হয়েছে সেটা ছিল পুঞ্জীভূত অনিয়ম। অত্যন্ত অসঙ্গত কারণে অনেককে চাকরিচু্যত করা হয়েছে। এরকম হাজার হাজার অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। এগুলো নীতিগত সিদ্ধান্ত ছাড়া তো ঠিক করা যাবে না। তবে কথা হচ্ছে শিক্ষাঙ্গনে ভদ্রতা বজায় রাখতে হবে, বল প্রয়োগ করা যাবে না, ব্যক্তিগতভাবে অপমানিত করা যাবে না।'
সারাদেশে শিক্ষাঙ্গনে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'যত ধরনের অন্যায় আছে আমরা সেগুলো চিহ্নিত করব। এখন তো শুরু করেছি প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে, কিন্তু আমি বলব বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। রাতারাতি সবকিছু পরিবর্তন করা যাবে না।'
পাঠ্যপুস্তক ছাপাতে এবার কোনো ধরনের দুর্নীতি হবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে যেসব বই ছাপার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল তা বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবার বই ছাপার মান ও কাগজের মান ভালো হবে। কারণ, এবার দুর্নীতি হবে না।'