ভিসিসহ অন্যদের পদত্যাগের হিড়িকে অভিভাবকশূন্য
ঢাবিতে সেশনজটের শঙ্কা
প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
ঢাবি প্রতিনিধি
দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা ফিরছেন না ক্লাসে। ক্ষমতার পালাবদলে উপাচার্য, প্রক্টর, হল প্রাধ্যক্ষ ও ডিনদের পদত্যাগের হিড়িকে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে দেশের শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠ। গত ঈদুল আজহার ছুটির পর পহেলা জুলাই থেকে শ্রেণি পাঠদান ও পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষক ও কর্মচারী-কর্মকর্তাদের 'প্রত্যয়' পেনশনস্কিম বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে কর্মবিরতি ও শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার মধ্যে গত ১৭ জুলাই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় প্রতিষ্ঠানটি। খালি করা হয় হলগুলো। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পরদিন আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাস খুললেও এখনো স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরেনি। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গত রোববার থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দিলেও ক্লাসে যাননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ পরিস্থিতিতে ঢাবিতে সেশনজটের শঙ্কায় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা যায়যায়দিনকে সেশনজট, চাকরি প্রস্তুতির সময় ঘাটতি, ফলাফল বিলম্বসহ নানান সমস্যা ও আশঙ্কার বিষয়ে জানান।
ঢাবি ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী ইরাজ নূর চৌধুরী বলেন, 'করোনা মহামারির পর আমরা অনেকটাই দেরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রমে যোগ দিয়েছি। আমাদের ৬ মাসে সেমিস্টার হওয়ায় এখনো আমরা সেই সময় এর ক্ষতিপূরণ করতে পারিনি। বর্তমানে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে আমাদের ক্লাস বন্ধ। যার ফলে আমরা সেশনজট ও বিশেষ করে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় সংকট নিয়ে চিন্তিত। এ অবস্থায় প্রতি সেমিস্টারের সময়কাল ৬ মাস থেকে যদি কমিয়েও আনা হয় তখন তাড়াহুড়ো করে সিলেবাস শেষ করা ও খাতা মূল্যায়নে শিক্ষকদের সময় স্বল্পতা থাকবে। সেটিও শঙ্কার বিষয়।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী নূমান আহমাদ চৌধুরী বলেন, 'হলে সিট বরাদ্দ দেওয়া ও উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ায় শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতি দ্রম্নত হলে সিট বরাদ্দ দিক এবং দ্রম্নত নতুন উপাচার্য নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।'
ঢাবির ২০২৩-২০২৪ সেশনের শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের সেশনের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পরপরই ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। এমন সময়ই শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের আন্দোলনে সবকিছু থমকে যায়। এখন আবার নতুন উপাচার্য না আসা অব্দি ক্লাস শুরু হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করতে শিক্ষার্থীরা দ্রম্নত ক্লাসে বসতে চায়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই হলে বৈধ সিট চান শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে ঢাবির জনসংযোগ অধিদপ্তরের পরিচালক মাহমুদ জানান, নতুন উপাচার্য না আসা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা সম্ভব নয়। উপাচার্য এলে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে কথা হবে। তারপর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার বিষয়ে এখনো কাজ চলমান আছে। আবাসিক হলগুলোতে যদি সব শিক্ষার্থী না ফেরে, তাহলে অনেকেই ক্লাস-পরীক্ষা মিস করে ফেলবে। তা ছাড়া হলগুলোতে এখন সিট বরাদ্দের কার্যক্রম চলছে। এ কাজটি শেষ হয়ে গেলেই আমরা একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করব।'
তিনি আরও জানান, এখনই যদি পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করে দিই, তাহলে অনেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। তাই আমরা আগে ক্লাস শুরু করার বিষয়ে ভাবছি। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা শেষ হয়েছে, তারা হল ছেড়ে চলে যাবে। সেখানেও একটি প্রক্রিয়া রয়েছে এবং ফাঁকা হওয়া আসনগুলো আবার মেধার ভিত্তিতে বরাদ্দ দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রয়োজন।