সেশনজটের আশঙ্কায় বেরোবি শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
গাজী আজম হোসেন, বেরোবি প্রতিনিধি
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) গত বছর সেশনজট থেকে মুক্ত হলেও ফের সেই সংকটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন ঘিরে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দেশ ত্যাগ করলে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেন। এতে প্রশাসন শূন্য হয়ে যায় ক্যাম্পাস। এখন ক্লাস আর পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ভয়াবহ সেশনজটের কবলে ছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিকাংশ বিভাগেই দেড় বছর থেকে সাড়ে তিন বছরের সেশনজট ছিল। ফলে ছয় থেকে সাত বছরেও শেষ হচ্ছিল না স্নাতক (অনার্স)। বিশ্ববিদ্যালয়টির ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে তিন বছরের সেশনজট ছিল। এছাড়া জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, লোক প্রশাসন, সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে দুই বছরের সেশনজট ছিল।
যোগদানের পর সদ্য সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ করোনাকালে শিক্ষার্থীদের সেশনজটের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২০২১ সালের শীতকালীন ছুটি বাতিল করেন। ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে নামিয়ে আনেন। এভাবে শিক্ষার্থীদের সেশনজট কমিয়ে শূন্যের কোটায় আনে সেই সময়ের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষকদের কর্মবিরতির আগেই বিভিন্ন বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা চলমান ছিল। কিন্তু শিক্ষক আন্দোলন ও পরবর্তী দেশের পরিস্থিতিতে এখনও পরীক্ষা শেষ করতে পারেনি অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এদিকে বেশ কয়েকটি বিভাগে ৬ মাসের সেমিস্টার ৯ মাসেই শেষ হয়নি। চলমান পরিস্থিতিতে ক্লাস শেষ করতে পারলেও পরীক্ষায় বসতে পারেননি তারা।
একাধিক সাবেক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি ও পরবর্তীতে প্রশাসন শূন্য ক্যাম্পাসে তাদের সার্টিফিকেট, মার্কশিটসহ গুরুত্বপূর্ণ নথি উত্তোলন করতে পারছেন না।
ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী হেলাল মিয়া বলেন, 'করোনা মহামারির সময় আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় প্রায় এক বছরেরও অধিক সময় নষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো সেশনজট বিদ্যমান রয়েছে। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অচলাবস্থা দেখা দেওয়ায় এখন নতুন করে আবার সেশনজট তৈরি হচ্ছে। এমন অবস্থা চলমান থাকলে অনেকের চাকরির বয়সসীমা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে শেষ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী দুই-তিনটা সেমিস্টার ৬ মাসের পরিবর্তে ৫ মাসে শেষ করে দেয় তাহলে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করি।'
লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার বলেন, 'প্রায় সব বিভাগের শিক্ষার্থী সেশনজটে পড়ে গেছে। ঈদুল আজহার পর একদিনও ক্লাস হয়নি। দুই-একটা বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল শেষ হয়েছে। কিছু বিভাগের পরীক্ষা মাঝ পথে আটকে আছে আবার অনেকের এখনো শুরুই হয়নি। কবে যে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে তারও কোনো ঠিক নেই। এদিকে নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আমার মনে হয় আমরা আবার সেশনজটে পড়ে গেছি।'
রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী বলেন, 'ভিসি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। খুব শিগগিরই ভিসি নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। ভিসি আসলেই ডিন, একাডেমিক কাউন্সিলসহ সবার সঙ্গে বসে উনি সিদ্ধান্ত নেবেন।'
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সদস্য ড. মোহাম্মদ আলমগীর মুঠোফোনে বলেন, 'সেশনজট নিরসনের স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষক বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। সেক্ষেত্রে তারা যদি ইউজিসির সাহায্য চায় তাহলে আমরা সাহায্য করব।'