বাংলাদেশের ক্ষমতাচু্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত 'গণতন্ত্রের অঙ্গীকার' রক্ষা করছে না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট, অত্যাচারী, নিপীড়নকারী, হত্যাকারী শেখ হাসিনা দেশে ছেড়ে- তার জনগণকে ছেড়ে পালিয়েছেন। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, আজকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে। সেখান থেকে তিনি আবার বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার যে বিপস্নব, সেটাকে নস্যাৎ করার বিভিন্ন চক্রান্ত শুরু করেছেন। এই ব্যক্তিকে (শেখ হাসিনা) এভাবে আশ্রয় দিয়ে ভারত তার যে- কমিটমেন্ট টু ডেমোক্রেসি, এটা তারা রক্ষা করছে বলে আমার মনে হয় না।'
মঙ্গলবার দুপুরে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, 'ভারতের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে- আপনারা তাকে আইনানুগভাবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে কাছে তুলে দেন এবং দেশের মানুষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই সিদ্ধান্ত হচ্ছে তার বিচার করার; সেই বিচারের সম্মুখীন তাকে হতে দেন।'
তিনি বলেন, 'এদেশের মানুষ শেখ হাসিনার যে অপরাধ- সেই অপরাধকে খাটো করে দেখে না। তারা মনে করে যে, গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার এই ফ্যাসিবাদী শাসন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে দুর্বল করে দিয়েছে, জাতিকে আহত করেছে। আপনারা দেখেছেন, তার শাসনামলে এই জাতিকে সে ১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণের আবদ্ধ করে গেছে, পাচার হয়ে গেছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার ইন্সটিটিউশন সমস্ত কিছু ভেঙে দিয়েছে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা নির্বাচন নিয়ে আমাদের বক্তব্য আগেও বলেছি, এখন বলছি যে- গণঅভু্যত্থানের পর বিপস্নবের মধ্য দিয়ে এই অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার এসেছে। তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে, এই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করে জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া। তবে আমি যেটা মনে করি, যে জঞ্জাল আওয়ামী লীগ সরকার সৃষ্টি করে গেছে, সেটাকে দূর করতে অবশ্যই কিছু সময় দরকার। একটি সঠিক সুন্দর নির্বাচন করার জন্য হলেও একটা সময়ের দরকার, যে সময়ে নির্বাচনকালীন নতুন সরকার তারা সেই লক্ষ্যে কাজ করতে পারবে, সংস্কারগুলো করতে পারবে; সেই সময় অবশ্যই এদেশের মানুষ তাদেরকে দেবে।'
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ১১ দিনে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার ভূয়সী প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপি মহাসচিব দলের স্থায়ী কমিটির দুই নতুন সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে নিয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে আসেন। তার পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন এবং বিশেষ মোনাজাত করেন।
এ সময়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শামীমুর রহমান শামীম, যুবদলের মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়নসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আমি ৩২ বছর ধরে বিএনপির সদস্য। আমাদের নীতিনির্ধারণী ফোরামে স্থান দেবার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আগামী দিনগুলোতে বিএনপি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করে বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবে, এটাই আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করি।'
গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন ১৬ বছর আগে বিএনপিই শুরু ?করেছিল উলেস্নখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, 'শেষ পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়ে এই আন্দোলনকে বেগবান করে চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে গিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যতজন শহীদ হয়েছে, তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি।'
তিনি আরও বলেন, 'আবু সাঈদ জীবন দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। মানবাধিকার এতোদিন লঙ্ঘিত ছিল, গণতন্ত্র আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছিল। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র কেউ যেন ব্যাহত করতে না পারে, সাধারণ মানুষের মানবাধিকারকে কেউ যেন লঙ্ঘন করতে না পারে; সেজন্য বিএনপি এবং ছাত্র-জনতা আমরা এক সঙ্গে কাজ করবে।'
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মধ্যে সেনাবাহিনী যে ভূমিকা রেখেছে তার প্রশংসা করে সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, 'অগাস্ট বিপস্নবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শেষ মুহূর্তে এসে জনগণের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে স্বৈরাচারকে বিতারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে; সেজন্য সেনাবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেকটি সদস্যকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, আগামী দিনেও এসব বাহিনী যারা জনগণের অর্থে প্রতিপালিত- তারা সবসময়ে জনগণের সাথে থাকবে, কখনো স্বৈরাচারকে স্থান দেবে না।'
অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, '১৯৭৯ সালে আমি ছাত্রদলের মেম্বার ছিলাম, সেখান আজ অবধি আমি বিএনপিতে কাজ করছি একজন কর্মী হিসেবে। আমি মনে করি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন বিএনপি যেটা শুরু করেছিল ২০০৯ সালের ডিসেম্বর থেকে অর্থাৎ এদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে যেয়ে যেসমস্ত গুম হয়েছে, যারা হারিয়ে গেছে; তাদেরকে আমরা খুঁজে বের করব। যারা শহীদ হয়েছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নতুন সদস্য বলেন, 'ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। দেশ আজকে একটি নবতর স্বাধীনতা পেয়েছে। একবার আমরা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পেয়েছি; আর এবার সত্যিকার অর্থে ৫ অগাস্ট নতুন প্রজন্ম দেখতে পেল, স্বাদ পেল- স্বাধীনতা কাকে বলে; কথা বলার স্বাধীনতা, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা কাকে বলে। মানবাধিকার ছিলো না। এক ব্যক্তির শাসন ছিল, সেখান থেকে আজ আমরা মুক্ত হয়েছি। গণতন্ত্রের যাত্রা পথের মুক্তিকে আমাদেরকে সম্মুন্নত রাখতে হবে।'
গত ১৬ আগস্ট হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে পদোন্নতি দিয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়েছে।