ড্যাবের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘেরাও

আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবিতে হট্টগোল

প্রকাশ | ২০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে মহাখালীতে কোভিড ডেডিকেটেড ডিএনসিসি হাসপাতালে বৈঠক করছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম। সেখানেই আওয়ামীপন্থি শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সামনেই হট্টগোল ও বিক্ষোভ করেছেন বিএনপিপন্থি চিকিৎসক-কর্মচারীরা। এর আগে সোমবার সকালে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এবং অধিদপ্তরের সাধারণ চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা রাজধানীর টিবি গেইট এলাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন ভবনে আওয়ামীপন্থি শীর্ষ কর্মকর্তাদের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। অধিদপ্তরের বিএনপিপন্থি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমদুল কবির, অধ্যাপক ডা. বায়েজিদ খুরশিদ রিয়াজ, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া এবং নিপসম পরিচালক ডা. মো. শামিউল ইসলাম সাদীসহ আওয়ামীপন্থি সব কর্মকর্তাকে এক সঙ্গে পদত্যাগের দাবিতে মিছিল করেন। তাদের বাধার কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অফিসে ঢুকতে পারেননি। ড্যাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শাখার সভাপতি ডা. ফারুক বলেন, বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রোবেদ আমিনকে মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগের আদেশ মানেন না। তাই আমরা অধিদপ্তর ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছি। অধিদপ্তরে মহাপরিচালকের অফিসে তাকে ঢুকতে দেওয়া হব না। রোবেদ আমিন একজন সুবিধাবাদী লোক। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের শাসনামলে তিনি অধিদপ্তরের নন কমিউনিকেবল ডিজিজ (এনসিডিসি) শাখার পরিচালক হিসেবে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ডানহাত বলে পরিচিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির। তিনি বিগত ১৫ বছর ধরে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য করেছেন। অবৈধ আয়ের মাধ্যমে রাজধানীর বাড্ডায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিক বনে গিয়েছেন। কোনোভাবেই তারা আর বহাল থাকতে পারে না। চিকিৎসকরা বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আন্দোলনের বিরোধিতা করে রাজপথে মিছিল করছে। এছাড়া বিগত ১৬ বছর স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধা নিয়েছে। তাদের আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে অপসারণ করে তাদের দুর্নীতি অনুসন্ধান করে ও বিচার দাবি করছি। এসব প্রতিষ্ঠানে দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক চিকিৎসক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদায়ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি। এদিকে বেলা ১১টার দিকে মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মিছিল শুরু করেন বিক্ষোভকারীদের একাংশ। মিছিল নিয়ে তারা কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে যান। কিছুক্ষণ হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। এক পর্যায়ে তারা হাসপাতালের প্রশাসনিক বস্নকে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় হাসপাতালের একজন নারী চিকিৎসক তাদের বাধা দেন। তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি, ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে বিক্ষোকারীরা ভেতরে ঢুকে পড়েন। সেখানে বিক্ষোভকারীরা বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে স্বাস্থ্য খাতে যত অপকর্ম হয়েছে, এগুলোর সহযোগী ছিলেন ওই কর্মকর্তারা। তাই তাদের পদত্যাগ করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে বৈঠক করছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতা ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল জহিরুল ইসলাম প্রমুখ। মহাখালীতে কোভিড ডেডিকেটেড ডিএনসিসি হাসপাতালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগমের সামনেই আওয়ামীপন্থি শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের দাবিতে হট্টগোল ও বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে বিএনপিপন্থি চিকিৎসক-কর্মচারীর কয়েকজন চেয়ার-টেবিলের উপরে উঠে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর বিক্ষোভকারীরা উপদেষ্টার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তারা উপদেষ্টাকে সম্মান করেন, কিন্তু পরিস্থিতি তাদের 'বাধ্য করেছে' বিক্ষোভ করতে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম তখন বলেন, 'আমাকে সম্মান করলে আমার সামনে এ ধরনের কাজ করতেন না।'