বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গাজীপুরে কারখানা খোলার দাবিতে বিক্ষোভ অবরোধ

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
গাজীপুরে কারখানা খোলার দাবিতে বিক্ষোভ অবরোধ

গাজীপুরের বড়বাড়ি এলাকায় ন্যাশনাল কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ ও প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। মহানগরের বড়বাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে এ বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় মহাসড়কের উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিভিন্ন স্থানে গন্তব্যের উদ্দেশে যাওয়া যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। রোববার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষাভ করেন।

শ্রমিক নেতা জালাল হাওলাদার বলেন, ১৩ (১) ধারায় কর্তৃপক্ষ লে-অফ ঘোষণা করে কারখানা বন্ধ করে দেয়। কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন তারা। শ্রমিকরা ৭ মাসের বকেয়া বেতন পাবেন। বন্ধ ঘোষণার পর থেকে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ছাঁটাই প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের পুনরায় নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তারা।

বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, তাদের ২০২৩ সালের ২ মাস ১৯ দিনের লে-অফকালীন বকেয়া বেতন, বাৎসরিক ছুটির টাকা, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ৯ তারিখ থেকে জুলাই মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত লে-অফ চলাকালীন বকেয়া পাওনা এবং বকেয়ার ১০% ঈদ বোনাসের টাকা পরিশোধের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে উভয় পাশে অবরোধ করে রাখেন। দুই শতাধিক শ্রমিকের বেতন না দিয়ে কয়েক মাস আগে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। শ্রমিকরা বিভিন্ন সময়ে তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কর্তৃপক্ষ তাদের কথার গুরুত্ব না দিয়ে সময় পার করছেন। শ্রমিকরা গাজীপুর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছেও অভিযোগ করেছেন। রোববার সকাল থেকে বাধ্য হয়ে শতাধিক শ্রমিক কারখানার সামনে বকেয়া বেতন-ভাতা ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধের দাবিতে জড়ো হন। পরে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বৈদু্যতিক খুঁটি ফেলে বড়বাড়ি এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।

ন্যাশনাল কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড কারখানার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ৯ তারিখ কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে। এ কারখানার ২০৮ জন শ্রমিকের ৭ মাসের বেতন-বোনাস বকেয়া আছে। বেতন-ভাতা না দিয়ে ৬ মাস আগে গোপনে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে বন্ধ করে দেন। তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। সেই সঙ্গে দ্রম্নত কারখানা চালু করে শ্রম আইন অনুযায়ী বেতন ভাতা পরিশোধের দাবি জানান। বেতন-ভাতা পরিশোধ করা না হলে তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, গত ৭ জুলাই বেলা ১১টায় শ্রম ভবন ত্রিপক্ষীয় সভা হয়েছে। কিন্তু ন্যাশনাল কেমিক্যাল কারখানার মালিক এম এন এইচ বুলু সভায় উপস্থিত হননি। শ্রমিকরা বেতন না পেয়ে কষ্টে দিনযাপন করছে। অনেক শ্রমিকের ছেলে-মেয়েকে বেতন বকেয়া থাকায় স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে। অনেকেই না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তারা টাকার জন্য তাদের অসুস্থ মা-বাবার চিকিৎসা করতে পারছেন না। বাড়িওয়ালা ঘর থেকে বের করে দিতে চাইছে। দোকানদাররা বাকি টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। এসব কারণে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন।

গাজীপুর নগরের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করা হবে। বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরানো হয়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এর আগে থেকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা শিল্প পুলিশসহ সেনাবাহিনী শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়কের পাশে কারখানার সামনে নিয়ে আসলে বেলা সোয়া ১১টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উভয় পাশের যানচলাচল শুরু হয়।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর টঙ্গী গাজীপুরের শ্রম অধিদপ্তরের পরিদর্শক (সাধারণ) মাকসুদুর রহমান বলেন, কারখানার সামনে শিল্প পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে আগামী বুধবার (২১ আগস্ট) টঙ্গী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে একটি ত্রিপাক্ষিক মিটিং করার প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হয়েছে। পরে শ্রমিকরা তা মেনে বেলা সোয়া ১২টায় কারখানার সামনে থেকে চলে যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে