সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, 'বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতে বড় ধরনের সংস্কারসহ দ্রম্নত বিদু্যৎ ক্রয়ের বিশেষ আইন বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি জ্বালানি ও বিদু্যৎ খাতে জবাবদিহিতা বাড়াতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।' এ ছাড়া চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নসহ বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ১০০ দিনের বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে সিপিডি।
রোববার ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে 'বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্কার সিপিডির প্রস্তাবনা' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। এসময় সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রথমে দেশের বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতে বড় ধরনের সংস্কারে মনোনিবেশ করতে হবে। সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণ এবং ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে এই সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রথমে বিদু্যৎ ও জ্বালানি দ্রম্নত সরবরাহ বিশেষ আইন ২০১০ বাতিল করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত বেসরকারি বিদু্যৎ উৎপাদকদের সঙ্গে তাদের শুল্ক পুনর্নির্ধারণের জন্য পুনরায় আলোচনা করা, বিশেষ করে যেসব কোম্পানিতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি বিদু্যৎ ক্রয় চুক্তি রয়েছে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ নূ্যনতম সময় পার করেছে।'
সিপিডি পরিচালক বলেন, 'তৃতীয় পদক্ষেপ হতে হবে, যেসব কোম্পানি বিদু্যৎ কেনার চুক্তির জন্য অযাচিতভাবে নির্বাচিত হয়েছে, তাদের সঙ্গে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বাতিল করতে হবে।'
'শূন্য কার্বন নিঃসরণ এবং নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। এ ছাড়া বিদু্যৎ উৎপাদনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য বড় আকারের বিদু্যৎ সরবরাহ কাঠামো থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেন সিপিডি পরিচালক।
সিপিডির সুপারিশের মধ্যে, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে আরও কার্যকরী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর, ১৯৯৬ সালের শক্তি নীতি সংশোধন এবং অনশোর ও অফশোর অপারেশনের জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপেস্নারেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে (বাপেক্স) শক্তিশালী করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ছাড়া এ খাতের জন্য মোট ১৭টি সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, 'বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে। টেকসই জ্বালানি রূপান্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে জোর দিতে হবে। এ ছাড়া বিদু্যৎ খাতে নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পে অনুযায়ী, চুক্তি সংশোধন করলে ভর্তুকির চাপ কমবে। এতে গ্রাহককে বাড়তি দাম দিতে হবে না বলেও মনে করে সিপিডি'।
এর আগে বিদু্যৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ সালে প্রণীত হয়েছিল। সর্বশেষ ২০২১ সালে তা আবার পাঁচ বছর বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় একটি সেমিনারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেছিলেন, দ্রম্নত কার্যকর করা বিদু্যৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০ বাস্তবে একটি ক্ষতিকর আইন। কারণ এই আইনের অধীন নেওয়া ব্যয়বহুল প্রকল্প ভবিষ্যতে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। মূলত এ আইনের আওতায় বিদু্যৎ উৎপাদন, সঞ্চালন এবং সরবরাহের জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধা দেয় সরকারকে। প্রয়োজনে দ্রম্নত বিদু্যৎ আমদানি এবং সংশ্লিষ্ট খনিজ উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয় এ আইনে।