দক্ষিণ এশিয়ায় কৃষি শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) গৌরবময় অগ্রযাত্রার ৬৪ বছরে পদার্পণ করছে আজ। ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট ময়মনসিংহের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সাড়ে ১২শ' একর ভূমির ওপর যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের কৃষিক্ষেত্রে শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমে অনন্য অবদান রেখে চলেছে।
প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই বাকৃবি দেশের কৃষি উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়নে গবেষণার মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি একের পর এক নতুন সাফল্যের গল্প লিখে
চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবন, পশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি উন্নয়ন এবং কৃষি যন্ত্রপাতির উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। এসব গবেষণার ফলাফল সরাসরি কৃষকদের হাতে পৌঁছে দিতে এবং তাদের জীবনমান উন্নত করতে বিশ্ববিদ্যালয়টির সম্প্রসারণ
কার্যক্রম ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।
বর্তমানে বাকৃবিতে প্রায় সাত হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত, যারা কৃষি, ভেটেরিনারি, পশুপালন, কৃষি অর্থনীতি, কৃষি প্রকৌশল, মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের নানা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। সাড়ে ৫শ' এরও বেশি যোগ্য ও প্রতিশ্রম্নতিশীল শিক্ষক শিক্ষাদান ও গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কৃষি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করছেন। বাকৃবি শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কৃষি শিক্ষার মানদন্ড হিসেবে স্বীকৃত।
সম্প্রতি শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন, জমিতে সার পরিমাপে 'নিউট্রিয়েন্ট ব্যালান্স' নামে মোবাইল অ্যাপ তৈরিতে সফলতা, ব্রয়লারের খাবারে সাপিস্নমেন্ট হিসেবে আমলকি ফলের পাউডার প্রয়োগ করে হিট স্ট্রেস মোকাবিলায় সফলতা, সামুদ্রিক শৈবাল থেকে তৈরি হলো সাবান ও ক্যান্ডি, সরিষার নতুন জাত 'বাউ সরিষা-৯' উদ্ভাবন, অপ্রচলিত ডাল জাতীয় ফসল থেকে মুখরোচক খাবার তৈরি, সাশ্রয়ী মূল্যে উদ্ভাবিত ধানের ড্রায়ার মেশিন, বিলুপ্তপ্রায় ও উচ্চফলনশীল মাছের শুক্রাণু দীর্ঘদিন সংরক্ষণে সফলতা, নতুন বিদেশি উচ্চ ফলনশীল ফল, স্বল্পমূল্যে পনির উৎপাদন, উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলু, পতিত জমিতে উচ্চ ফলনশীল ও ব্যাপক সম্ভাবনাময় কাসাভা আলু, মাছের ফেলে দেয়া ত্বক থেকে জেলাটিন নিষ্কাশন করে পণ্য তৈরিতে গবেষণায় সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মকর্তারা নতুন উদ্যমে কৃষি উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন। আগামী দিনে কৃষি গবেষণা ও শিক্ষার মাধ্যমে আরও নতুন সাফল্যের সোপান অতিক্রম করতে বিশ্ববিদ্যালয়টি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আগামী দিনে বাকৃবি আরও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে, কৃষি ক্ষেত্রে নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে, এই প্রত্যাশা সবার।