পদ ছাড়লেন বেরোবির ১০ আবাসিক শিক্ষক

রাবিতে ৭৫ শিক্ষকের পদত্যাগ, অচলাবস্থা

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

রাবি ও বেরোবি প্রতিনিধি
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচু্যত হওয়ার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ প্রশাসনে থাকা ৭৫ জন পদত্যাগ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ১০ আবাসিক শিক্ষক পদ ছেড়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় দুটির প্রশাসনে বেশ অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় দুটির রেজিস্ট্রার দপ্তর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। রাবি রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সর্বপ্রথম গত ৬ আগস্ট পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ ও জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে। এরপর ৮ আগস্ট একযোগে পদত্যাগ করেন প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা ৩৩ জন শিক্ষক। তাদের মধ্যে রয়েছেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর ও অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম, হিসাব পরিচালক ড. শামসুল আরেফিন, ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুলস্নাহ আল মামুন, কোয়ালিটি এসিউরেন্স সেলের পরিচালক ড. দুলাল চন্দ্র রায় এবং সহ-পরিচালক ড. মশিউর রহমান ও ড. আব্দুর রশিদ সরকার, কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক শহিদুল আলম, লিগ্যাল সেলের প্রশাসক সাদিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগারের পরিচালক সায়েদ মুস্তাফিজুর রহমান, টিএসসিসির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মিজানুর রহমান খান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসের প্রশাসক সাখাওয়াত হোসেন, রাকসুর কোষাধ্যক্ষ ড. জাফর সাদিক, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার প্রশাসক অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, শহিদ মীর আব্দুল কাইয়ুম আন্তর্জাতিক ডরমিটরির ওয়ার্ডেন আতিউর রহমান, ওআইএ'র পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান, অফিস অব দি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সহকারী পরিচালক ড. শামস্‌ মুহাম্মদ গালিব, ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সহকারী পরিচালক যিনাতুল ইসলাম, বিজ্ঞান কারিগরি কারখানার প্রশাসক ড. মো. মাহাবুবুর রহমান, বিএনসিসির প্রফেসর আন্ডার অফিসার ড. শমরিতা আলম। প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হকসহ প্রক্টরিয়াল বডির সকল সদস্য পদত্যাগ করেছেন। সহকারী প্রক্টররা হলেন- ড. মাহফুজুর রহমান, ড. পুরণজিত মহালদার, ড. হাকিমুল হক, ড. জহুরুল আনিস, ড. সাইকা কবির মিতু, ড. হামিদুল হক, ড. জাকির হোসেন, ড. কনক পারভেজ, ড. রতন কুমার, ড. কামরুজ্জামান ও ড. আল মামুন। এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলের মধ্যে ৯টি হলের প্রাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেছেন গত ১৪ আগস্ট। পাশাপাশি এ সকল হলের ৩১ জন আবাসিক শিক্ষকও পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করা ৯ প্রাধ্যক্ষ হলেন- রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জয়ন্তী রানী বসাক, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফারজানা কাইয়ুম কেয়া, রহমতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হাসনা হেনা, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নাসিরুদ্দিন, তাপসী রাবেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ ড. জুয়েলী বিশ্বাস, বেগম খালেদা জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হোসনে আরা খানম, মন্নুজান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. রাশিদা খাতুন, বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শায়খুল ইসলাম মামুন জিয়াদ এবং শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. শরিফুল ইসলাম। পদত্যাগ করা ৩১ জন আবাসিক শিক্ষক হলেন- রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষক ড. দুলাল চন্দ্র কবিরাজ, ড. ফেরদৌস আক্তার, ড. রনী রানী, ড. মো. মতিকুল ইসলাম ও সোমা দেব, বঙ্গমাতা হলের আবাসিক শিক্ষক ড. ইসতিয়াক মাহফুজ, ড. সুমনা সরকার, ড. বেবী বিশ্বাস ও ড. মণিকৃষ্ণ মহন্ত, রহমতুন্নেসা হলের আবাসিক শিক্ষক ড. মো. আমিরুজ্জামান, শারমিন আখতার, কে এম সাব্বির হাসান, জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষক তপন কুমার বর্মণ, হেমন্ত কুমার ভদ্র, ড. মো. আবদুর রশিদ ও ওমর ফারুক। শহীদ হবিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, ড. মোহা. আশিক শাহরিয়ার, ড. ছালেকুজ্জামান খান ও মো. আরমান হোসেন, তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক শিক্ষক মো. তামজিদ হোসেন মোলস্না, মো. রাকিবুল ইসলাম, রাদিয়া আউয়াল তৃষা ও মো. ওমর ফারুক, বেগম খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষক আইরিন চৌধুরী, ড. শেখ সেমন্তী ও সঞ্জয় কুমার চক্রবর্ত্তী; মন্নুজান হলের আবাসিক শিক্ষক ড. খাইরুল ইসলাম, ড. মাহমুদা আকতার, ড. মো. শামীম হোসেন এবং ড. মো. ইসমাঈল হোসেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. তারিকুল হাসান বলেন, 'ব্যক্তিগত কারণেই অধিকাংশ প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন।' পদ ছাড়লেন বেরোবির ১০ আবাসিক শিক্ষক এদিকে, বৃহস্পতিবার বেরোবির শহীদ মুক্তার ইলাহী হলের প্রভোস্ট শাহিনুর রহমান ও ওই হলের সাতজন সহকারী প্রভোস্ট একযোগে পদত্যাগ করেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের দুইজন সহকারী প্রভোস্টও পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। জানা যায়, শহীদ মুক্তার ইলাহী হলে মোট আসন সংখ্যা ৩২০টি। এর মধ্যে শুধু ১২০টি আসনে বৈধভাবে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে। বাকি ২০০টি আসনের মধ্যে ১৪০টি আসনে অবৈধভাবে দখল করেছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সমন্বয়কদের পরামর্শক্রমে হল প্রশাসন অবৈধ এই ১৪০ জনকে এক সপ্তাদের মধ্যে হল ছাড়ার এবং এক সপ্তাহ পর ১৪০টি আসনসহ অবশিষ্ট ৬০টি আসনের জন্য ভর্তির নতুন সার্কুলার দেওয়ার নোটিশ দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে সমন্বয়কদের মধ্যে শাহরিয়ার, খোকন, আশিক, রহমত এবং সাইদুজ্জামান বাপ্পি অবৈধ ১৪০ জনকে হলে রেখে দেওয়ার জন্য প্রভোস্টকে অনুরোধ করেন। তারা আরও দাবি করেন, ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের কেউ কোনোভাবে যেন হলে ঢুকতে না পারে। সমন্বয়কদের এমন দু'মুখো প্রস্তাবের চাপে পরে পদত্যাগ করেন হলের প্রভোস্ট এবং সহকারী প্রভোস্টবৃন্দ। অন্যদিকে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট বিজন মোহন চাকী গত ৬ আগস্ট পদত্যাগ করলে সহকারী প্রভোস্টরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে সব কিছু সুষ্ঠুভাবে কাজ করে আসছিল। কিন্তু প্রতিদিনই সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া শিক্ষার্থীরা একেক সময় একেক অবৈধ আবদার নিয়ে আসেন। বাপ্পিসহ বেশ কয়েকজন সমন্বয়ক পরিচয়ে শিক্ষার্থী সহকারী প্রভোস্টদের কাছে অবৈধ শিক্ষার্থীদের হলে রাখারও দাবি জানায়। যার ফলে ওই শিক্ষকরাও পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এদিকে এসব সমালোচনার মুখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বেরোবির সমন্বয়কদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। সমন্বয়ক সাইদুজ্জামান বাপ্পি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, 'অবৈধদের হল থেকে চলে যাওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা যেহেতু অনেকদিন ধরে হলে ছিল, হঠাৎ করে তারা কোথায় যাবে। এটা ভেবে আমি স্যারকে বলেছিলাম, অ্যালটমেন্ট দেওয়ার সময়ে হলে অবস্থানরত অবৈধ শিক্ষার্থীদের যেন আগে এলোটমেন্ট দেওয়া হয়।' পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে শহীদ মুক্তার ইলাহী হলের প্রভোস্ট মো. শাহিনুর রহমান সমন্বয়কদের অন্যায় প্রস্তাবের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, 'যারা আমাকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়েছিল তারা শুরুতে আমাকে বলেছিল, হলে অবৈধভাবে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা যেন এক সপ্তাহের মধ্যে চলে যায় এবং পরবর্তীতে নতুন সার্কুলারের মাধ্যমে খালি সিটগুলো পূর্ণ করতে। তাদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমি একটা নোটিশ দিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে অবৈধদের বিষয়ে সমন্বয়কদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বলেন, স্যার হঠাৎ করে ওরা আবার কোথায় যাবেন, ওরা এতদিন ধরে আছে ওখানে, হঠাৎ করে এখন কোথায় যাবে, ওরা এতদিন একটা ছাত্র সংগঠনের কাছে জিম্মি ছিল, ওরা ওদের সিটেই থাকুক। এদেরকে আপনি বৈধ করার ব্যবস্থা করেন। এসব কথা শুনে আমি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করি।'