থানা থেকে লুট করা অস্ত্র, গোলা-বারুদ ও অন্যান্য মালামাল ফেরত দেওয়ার জন্য এবার রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদের মাইক থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে প্রশাসনের কাছে অস্ত্র-গুলি হস্তান্তর করতে কেউ ভয় পেলে মসজিদের ইমামের কাছেও তা জমা দেওয়া যাবে। ফেরতদাতাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশ্বাস দিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধীরা ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের বহু থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটে। অনেক থানা থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মালামাল লুট হয়। লুণ্ঠিত এসব অস্ত্র, গুলি ও মালামাল ফেরত পেতে দেশের সব মসজিদ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ বলছে, ঢাকার ৫০টি থানার মধ্যে ৪৬টি থানা আক্রমণের শিকার হয়। এর মধ্যে কয়েকটি থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। অনেক থানা থেকে লুট হয়ে গেছে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিভিন্ন ধরনের মালামাল। ঘটনার পর শুধু শুক্রবার জুমার নামাজের আগে ও পরে ঢাকার মসজিদগুলো থেকে লুণ্ঠিত মালামাল ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তবে গত তিন দিন ধরে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আজানের আগে-পরে বা সুবিধাজনক সময়ে লুণ্ঠিত অস্ত্র, গোলাবারুদ ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। সূত্রটি বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন গত ১২ আগস্ট এক ঘোষণায় লুণ্ঠিত অস্ত্র, গোলাবারুদ ফেরত দিতে এক সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দেন। সে হিসেবে আগামী ১৯ আগস্ট সময়সীমা শেষ হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে লুন্ঠিত অস্ত্র, গোলাবারুদ ফেরত পাওয়া না গেলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে নামবে বলে ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ঘোষণা মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যারা অস্ত্র, গোলাবারুদ বা লুণ্ঠিত মালামাল ফেরত দেবেন, তাদের পরিচয় গোপন রাখাসহ তাদের প্রয়োজনে পুরস্কৃত করার কথাও বলা হয়। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনগত ব্যবস্থা না নিতে কড়া নির্দেশনাও জারি করেন উপদেষ্টা। ঢাকার বংশাল থানা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী হাইয়ম ও সোহেল বলেন, পুরান ঢাকার অধিকাংশ মসজিদ থেকে ইমামরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লুণ্ঠিত মালামাল বিশেষ করে অস্ত্র, গোলাবারুদ জমা দিতে বারবার মাইকে অনুরোধ করছেন। মানুষের কাছে নানাভাবে আহ্বান জানাচ্ছেন। এ ব্যাপারে বংশাল থানার ওসি এস এম আবু ফরহাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, বংশাল থানায় ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। থানার অনেক অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মালামাল খোয়া গেছে। থানা থেকে লুণ্ঠিত মালামাল ফেরত পেতে পুরান ঢাকার সব মসজিদের ইমামদের মাইকিং করতে অনুরোধ করা হয়েছে। তারা নিয়মিত মাইকিং করছেন। কারণ অনেকেই হয়তো থানায় এসে লুণ্ঠিত মালামাল ফেরত দিতে ভয় পাচ্ছেন। এছাড়া অস্ত্র জমা দিতে গেলে কী হয় না হয়, এ নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি থাকতে পারে। এমনকি অনেকেই অনিরাপদও বোধ করতে পারেন। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে লুণ্ঠিত মালামাল বিশেষ করে অস্ত্র, গোলাবারুদ মসজিদগুলোর ইমামদের কাছে জমা দিতে অনুরোধ করা হচ্ছে। ইমামরাও নির্ভয়ে মানুষকে লুণ্ঠিত মালামাল ফেরত দিতে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আজানের আগে বা পরে বা সুবিধাজনক সময়ে অনুরোধ করে মাইকিং করছেন। এমনকি মাইকে এটিও ঘোষণা করা হচ্ছে যে, প্রয়োজনে যারা অস্ত্র ফেরত দিতে আসতে চান না, তারা অন্য যেকোনো ব্যক্তির মাধ্যমে ইমামের কাছে অস্ত্র, গোলাবারুদ ফেরত দিতে পারবেন। এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই। ইমাম বা পাড়া মহলস্না বা পঞ্চায়েত কমিটি বা মসজিদের কোনো ব্যক্তি বা খাদেম জমাদানকারী কোনো ব্যক্তির নাম পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করবেন না। কারও পরিচয়ও জানতে চাইবেন না। প্রয়োজনে ফেরতদানকারীরা যেন নিজেদের মুখমন্ডল ঢেকে লুণ্ঠিত মালামাল ফেরত দেন। এমন ঘোষণাও দেওয়া হচ্ছে। ফেরতদাতাদের প্রয়োজনে পুরস্কৃত করার কথাও বলা হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য মতে, লুণ্ঠিত অস্ত্র, গোলাবারুদের মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ৫৩৪টি অস্ত্র, ১০ হাজার ২১৯ রাউন্ড বুলেট, ৩৫৯টি টিয়ার গ্যাস সেল ও ১৪২টি সাউন্ড গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছে।