ভারতে বসে হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে :ফখরুল
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হলেন হাফিজ-জাহিদ
প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারতে বসে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে।
শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে এক দোয়া মাহফিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'দীর্ঘ লড়াই করেছি। এখন লড়াই শেষ হয়ে গেছে ভাবলে ভুল হবে। যেকোনো মুহূর্তে ভারতে বসে শেখ হাসিনা তার অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। ইতিমধ্যে চক্রান্ত শুরু করেছে, সেই চক্রান্ত প্রতিরোধ করাই আমাদের কাজ।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিএনপি ১৭ বছর ধরে লড়াই করে তার একটা ভিত্তি তৈরি করেছি, সেই ভিত্তির ওপরে দাঁড়িয়ে ছেলেরা, তরুণ-যুবক-ছাত্ররা আন্দোলন বিজয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে। আবু সাঈদ থেকে শুরু করে প্রায় হাজারখানেক ছাত্র-শিক্ষার্থী প্রাণ দিয়েছেন। ৩-৫ আগস্ট বহু ছাত্রদলের ছেলেরা প্রাণ দিয়েছে।'
উপাসনালয়-মন্দির-গির্জা পাহারায় শান্তি বিগ্রেড তৈরি করার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই যে কমিউনালিজমের কথা বলছে, সাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার এসব কথা বলছে এটা একটা চক্রান্ত। এই কথা বলে ধোঁয়া তুলে তারা (আওয়ামী লীগ) আরেকটা ঝগড়া করতে চায়। দায়িত্ব নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যেক এলাকায় নিজের নিয়ে শান্তি বিগ্রেড তৈরি করেন, শান্তি বিগ্রেড তৈরি করে পাহারা দেবেন। সব সংখ্যালঘুর উপাসনালয়, মন্দির, গির্জা এসব পাহারা দেবেন। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা, তাদের জীবন-মালের দায়িত্ব কিন্তু আপনাদের।'
নতুন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে পত্র-পত্রিকায় যে বিরূপ খবর দেখি তখন কিন্তু আমরা আতঙ্কিত হই। আবার কোনো নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হচ্ছে যে, জনগণের ভোটকে জনগণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য আবার কোনো নব্য ফ্যাসিবাদ এসে উপস্থিত হচ্ছে কিনা। এদিক থেকে সজাগ থাকতে হবে। অর্থাৎ ঐক্য, ঐক্য, ঐক্যে এবং ধৈর্যশীল অবস্থা, সহনশীল অবস্থা, ডিসিপিস্ননের মধ্যে আমাদের চলতে হবে।'
জঞ্জাল সাফ করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কিছু সময় দিতে হবে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের মনে রাখতে হবে, এই সরকার একেবারে নরম সরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এটা মনে রাখতে হবে। তার দায়িত্ব একটা নির্বাচন করে দিয়ে যাবে তাই না। জঞ্জাল জমা হয়েছে তো। এই জঞ্জাল তো সাফ করতে হবে। এজন্য তাদেরকে কিছু সময় তো দিতে হবে। সেইভাবে কাজ করে আমাদের সংগ্রামকে জারি রাখতে হবে। ম্যাডামের যে আদর্শ তাকে অনুসরণ করতে হবে, ম্যাডামের যে বক্তব্য তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
প্রেম, ভালোবাসা দিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে। কোনো প্রতিহিংসা নয়, কোনো প্রতিশোধ নয়।'
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পরিচালনায় এই দোয়া মাহফিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুস সালাম আজাদসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
মতবিনিময় সভা
এদিকে বিকালে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাস গুপ্ত প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার।
স্থায়ী কমিটির সদস্য
হলেন হাফিজ-জাহিদ
এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম এবং অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনকে পদোন্নতি দিয়ে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণীয় ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি।
শুক্রবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এই সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানান।
তিনি বলেন, 'বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাতীয় কাউন্সিলে প্রাপ্ত দলের গঠনতন্ত্রের প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও এজেডএম জাহিদ হোসেনকে স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত করেছেন।'
হাফিজ ও জাহিদ দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। দুইজন যুক্ত হওয়ায় ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির এখন সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ জন। স্থায়ী কমিটিতে যারা আছেন তারা হলেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া (পদাধিকার বলে), ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (পদাধিকার বলে), খন্দকার মোশাররফ, জমির উদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, সালাউদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। ভোলা-৩ আসন থেকে তিনি একটানা ৬ বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এবং ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মহাসচিব ছিলেন। বর্তমানে তিনি সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে যে বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড রয়েছে তারও অন্যতম সদস্য তিনি।