আজকের যায়যায়দিন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও বেশকিছু মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে রাবির শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ও মতিহার হলে ছাত্রলীগের বস্নক তলস্নাশি করা হয়। আর হাবিপ্রবির আবাসিক হলগুলোয় অভিযান চালানো হয়।

আমাদের রাবি প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় রাবির ছাত্রলীগের বস্নকে অস্ত্র আছে সন্দেহে তলস্নাশি চালানোর দাবি তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে এ দুটি হলে অভিযান চালান তারা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মাখদুম হল থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জমা দেন শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে তলস্নাশি

শুরু করলে পলিটিক্যাল বস্নকের প্রতিটি রুম থেকে বের হয়ে আসতে থাকে রামদা, চাপাতি, চাকু, কাটারিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ রড, পাইপ, বিদেশি মদের বোতল পাওয়া গেছে। পরে মতিহার হলে অভিযান চালালেও এমন সব অস্ত্র পাওয়া যায়। অভিযান শেষে উদ্ধারকৃত অস্ত্র হল প্রশাসনের কাছে জমা দেন শিক্ষার্থীরা। আর এদিকে হল প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এসব উদ্ধারকৃত দেশীয় অস্ত্র হস্তান্তর করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী হাসান সজীব বলেন, 'আমরা হল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করি। এ পর্যন্ত দুটি হল অভিযান শেষে বিপুল পরিমাণে দেশীয় অস্ত্র ও বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত সব অস্ত্র ও মদের বোতল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এক-এক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে অভিযান চালানো হবে। শিক্ষাঙ্গনকে অস্ত্র মুক্ত করাই আমাদের লক্ষ।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'আমি এ বিষয়ে (অভিযান পরিচালনায়) শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করেছি। আমিও চাই হল অস্ত্রমুক্ত হোক এবং হলে শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকুক।'

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোবারক পারভেজ বলেন, 'শিক্ষার্থীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা দুটি হলে অভিযান চালাই। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণে দেশীয় অস্ত্র ও বিদেশি মদের বোতল জব্দ করা হয়েছে।' আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি জানান, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষক ও সাংবাদিকদের সহযোগিতায় আবাসিক হলগুলোয় শিক্ষার্থী এবং আনসার সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করছেন। হলগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ লোহার পাইপ, রড, রাম দা, হকিস্টিক, চাকু, মদের বোতল, গাঁজা ও গাঁজা খাওয়ার সামগ্রীসহ দেশীয় অস্ত্র ও বাঁশের লাঠি উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমানের সঙ্গে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের এক মিটিংয়ে হলে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর রেজিস্ট্রারের উপস্থিতিতে বেলা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তাজউদ্দীন হলে অভিযান চালানো হয়। এসময় হল থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র ও খালি মদের বোতল ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।

হাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এম মাসুদ রানা মিঠু থাকতেন এই হলে। অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেননি। অভিযানে শুধু তাজউদ্দীন আহমদ হলের একটি ফ্লোর থেকে থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৪৩টি বাঁশের লাঠি, ১৬টি লোহার রড, ২২টি লোহার পাইপ, ৬টি সামুরাই, ২টি লোহার চেইন, ৩টি খালি মদের বোতল ও মাদক সামগ্রী।

উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। অভিযান চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।