স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের অর্থলিপ্সা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। নানা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তিনি এখনো মন্ত্রণালয়ে বহাল তবিয়তে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা না থাকায় সচিব স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা না থাকার সুযোগের অপব্যবহার করে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে অর্পিত ক্ষমতা তথা প্রকৌশলীগণকে বদলি বা পদায়ন সংক্রান্ত ক্ষমতা রহিত করেন। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী প্রতিটি নীতিনির্ধারণী বিষয়ক কাজ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা উপদেষ্টাকে অবহিত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান অসৎ উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে অবহিত না করে এলজিইডির ওপর অর্পিত ক্ষমতা রহিত করেছেন। এর ফলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে মারাত্মক বিঘ্নের সৃষ্টি হবে।
জানা গেছে, এলজিইডি দেশের সর্ববৃহৎ প্রকৌশল সংস্থা। এখানে প্রায় ১৩ হাজার ৩৯৪ জন
কর্মচারী কর্মরত। এর মধ্যে এক হাজার ৪৩৮ জন ১ম শ্রেণির (৯ম-৬ষ্ঠ গ্রেডভুক্ত) এবং ২৩৪ জন ৫ম থেকে প্রথম গ্রেডভুক্ত প্রকৌশলী। এলজিইডির যাত্রা শুরু পূর্ত কর্মসূচি হিসেবে, তৎপরবর্তীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বু্যরো এবং সর্বোপরি এলজিইডি। অত্যন্ত ডিসেন্ট্রালাইজড এলজিইডির প্রায় ৯৯ শতাংশ কর্মচারীই কাজ করে মাঠপর্যায়ে। সমগ্র বাংলাদেশে এলজিইডি'র বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন, পরিকল্পনা ও মনিটরিং করা হয়। সদর দপ্তরে কর্মরত কতিপয় প্রকৌশলীগণকে নিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর (গ্রেড-১) নেতৃত্বে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অগ্রগতি ও কাজের গুণগত মান সম্পর্কে জবাবদিহিও করতে হয় প্রধান প্রকৌশলীকে। এ প্রেক্ষিতে সঠিক সময়ে সঠিক মানের কাজ বাস্তবায়ন করতে ও প্রকৌশলীগণের মধ্যে শৃঙ্খলা এবং পদায়ন সংক্রান্ত জটিলতা পরিহার করে প্রকৌশলীগণের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে উপযুক্ত পদে পদায়নের মাধ্যমে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি যথাসময়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধান প্রকৌশলীকে স্থানীয় সরকার বিভাগের ১৩/৬/৮৫ ইং তারিখের এস-৫/৯ সি-৪/৮৫/২৮৯(৫২৬) নম্বর স্মারক, ১৫/০৯/৯৬ ইং তারিখের স্মারক নং- সা. প্র. অ.-১/৯ ই-৬৯/৯৪/২৮২ এবং ২১ আগস্ট ২০১৬ তারিখের ৪৬.০৬৭.০১৫.০০.০০.০৬৬.২০১৫-৭০৯ স্মারকে এলজিইডি'র ১ম-৫ম ভুক্ত প্রকৌশলীগণকে (সদর দপ্তর, বিভাগ, অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা) বদলি বা পদায়নের ক্ষমতা প্রধান প্রকৌশলী, এলজিইডি'র ওপর ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু অতি সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে গত ৭ আগস্ট থেকে স্মারক নম্বর : ৪৬.০৬৭.০১৫.০০.০০.০৬৬.২০১৫-৬০১ এর মাধ্যমে তা রহিত করে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি আগে থেকেই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। ইতিপূর্বে ফরিদপুর জেলার জেলা প্রশাসক থাকার সময়ে বিভিন্ন অবৈধ উৎস হতে প্রাপ্ত অর্থের ভাগ-বাঁটোয়ারা সংক্রান্ত বিষয়ে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে বিবাদ তৈরি হওয়ার প্রেক্ষিতে তাকে নরসিংদী জেলায় বদলি করা হয়।
ফরিদপুর জেলায় তার অবৈধ কর্মকান্ডের জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় নরসিংদী জেলাতেও তার সীমাহীন দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রদর্শনী চলতে থাকে। জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপারের সঙ্গে একই কায়দায় ভাগ-বাঁটোয়ারার সমঝোতা না হওয়ায় পুলিশ সুপারের ওপর আক্রমণের প্রেক্ষিতে জেলা জজ কর্তৃক তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হয় এবং জেলে নেওয়ার প্রাক্কালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে মন্ত্রণালয়ে বদলি করার মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়।
দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের এত রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র আওয়ামী দলীয় পরিচয়ে তাকে আইএমইডিতে সচিব হিসেবে পদায়ন করা হয়। এখানেও তিনি প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন রকম ভাতা ভাউচারের মাধ্যমে অবৈধভাবে উত্তোলন করতে থাকেন। ফলে তার অধীনস্থ জুনিয়র পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানান। কিন্তু তিনি তাদের ন্যায্য দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে চরম দুর্ব্যবহার অব্যাহত রাখায় অধীনস্থদের হাতে তাকে লাঞ্ছিত হতে হয়।
তার চাকরি জীবনে সীমাহীন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অন্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা সত্ত্বেও শুধুমাত্র আওয়ামী দলীয় ক্যাডার হওয়ার কারণে তাকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগে সচিব হিসেবে পদায়ন করে।
এখানে যোগদান করেও তিনি তার কু-কর্মের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শত শত ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে শেখ হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, স্থানীয় সরকার বিভাগ এই দুর্নীতিবাজ সচিবের রাহুগ্রাস হতে এখনও মুক্ত হতে পারেনি। তিনি অবৈধ অর্থ গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে এলজিইডিতে পদায়নে যে বাণিজ্য আরম্ভ করেছিলের তাদের সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায়ে প্রকৌশলীগণের বদলি বা পদায়ন সংক্রান্ত এরকম একটি কালো পরিপত্র জারি করে।