সাংবাদিকদের অর্থ উপদেষ্টা
রাতারাতি সম্ভব নয়, তবে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে
প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
মূল্যস্ফীতি রাতারাতি কমবে না; বরং যৌক্তিক সময়ের মধ্যে তা কমে আসবে মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ইতিমধ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।
বুধবার সচিবালয়ে মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত এক পর্যালোচনা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা। বৈঠকে মূল্যস্ফীতি, সুশাসন ডলার সংকটসহ অর্থনীতির সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায়ও মূল্যস্ফীতির বিষয়টি তোলা হলে উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘোড়ার লাগামের মতো টান মেরে মূল্যস্ফীতি থামানো যাবে না। তবে এটা ধীরে ধীরে কমানো সম্ভব। ইতোমধ্যেই বাজারে মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ার একটা ছাপ পড়েছে। যেমন সবজির দাম কিছুটা কমেছে।
তিনি আরও বলেন, 'মূল্যস্ফীতি শুধু দ্রব্যমূল্যের ব্যাপার নয়, সেখানে আন্তর্জাতিক ইমেজের একটা ব্যাপার রয়েছে। তারা একটা দেশে বিনিয়োগ করতে গেলে সে দেশের মূল্যস্ফীতির হারটাও দেখতে চায়। এ কারণে বৈঠকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়েছে।'
কিভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে সরকার কাজ করবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে, সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে হবে। এই দুটি জায়গা ঠিক রাখতে পারলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।'
কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রশাসনের দক্ষতা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা সচিবদের বলে দিয়েছি আপনারা কিন্তু ফ্রিলি কথা বলবেন। আগের মতো ভয় পেয়ে, তোয়াজ করে কথা বলার দরকার নেই। অর্থের অপচয় রোধ করতে হবে। সমন্বয়হীনতায় যাতে অর্থের অপচয় বেড়ে না যায়। অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে হবে, সেটা দেশীয় অর্থ হোক আর বিদেশি অর্থ হোক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাজস্ব নীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করা হবে।'
সদ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়া আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'উৎপাদন বাড়িয়ে সাপস্নাই চেইন স্বাভাবিক করতে পারলে, চাঁদাবাজিমুক্ত বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি একটা সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসতে পারব। তৃতীয়ত, চাহিদার দিক থেকে ইন্টারভেনশন করার একটা দিক রয়েছে। রিজার্ভের সংকট আছে। সংকট ওভারনাইট করা যাবে না। আমি এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকে যাইনি। বাজারে কতখানি সাপস্নাই দেওয়া যায় সেটা দেখব। সাপস্নাই কমিয়েও দেওয়া যাবে না। খুবই সংকীর্ণ পথ, সাবধানে হাঁটতে হবে, সামনে এগিয়ে যেতে হবে।'
ব্যাংক খাত প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, 'ব্যাংকিং খাতে সংস্কার তো করতেই হবে। সেটা সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। সরকার বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ হবে।'
আগের সরকারের মেয়াদে ব্যাংক একীভূতকরণ প্রসঙ্গে আহসান মনসুর বলেন, 'ওটা ছিল একটা প্রিম্যাচিউরড অ্যাকশন। মার্জার হচ্ছে একটা অপশন, এরকম আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। কোথাও মালিকানা বদল করতে হয়, কোথাও রিফাইন্যান্সিং করতে হয়। এখন কোথায় কোন সূত্র অ্যাপস্নাই করা যায়, সেটা আরও বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে।'
এদিকে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম মাস
অর্থাৎ গেল জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে, জুনে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে কারফিউ জারির কারণে দেশের অর্থনীতি সারাদেশ 'স্থবির' হয়ে পড়লে খাদ্যপণ্য ও কাঁচামালের সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধের পাশাপাশি মালামাল নষ্টের প্রভাব পড়ে বাজারে। এর ধাক্কায় বেড়ে যায় মূল্যস্ফীতি।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মন্ত্রী গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যের কথা বলেছিলেন দুই মাস আগে তার বাজেট বক্তৃতায়। তবে তার আশা ও উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যের দিকে এগোনোর যাত্রা হোঁচট খায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে আন্দোলন সহিংস রূপ নিলে থমকে যায় দেশ ও অর্থনীতির চাকা।
ফলে অর্থবছরের প্রথম মাসেই তাই খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ, যা এক মাস আগেও ছিল ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ।
বৈঠকে অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বাণিজ্যসচিব মো. সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা, খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান ও নুরুন নাহার উপস্থিত ছিলেন।