বৈষম্যহীন সমাজ গড়তেই অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার

ছাত্রদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে পার্বত্য উপদেষ্টা

প্রকাশ | ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের কৃষকরা তাদের উৎপাদনের সঠিক মূল্য পায় না। মিডলম্যানরা তা চুষে নিচ্ছে। মানুষের মধ্যে মানবিকতার মূল্যবোধ থাকতে হবে। মানবিকতার মূল্যবোধ না জাগলে কোনো কিছুতেই পরিবর্তন আসবে না। মঙ্গলবার সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্ররা সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন। সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, সমাজকে বৈষম্যহীন করে গড়ে তুলতেই অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। রাজনীতিতে ইমোশনের কোনো জায়গা নাই। ভুল করারও সুযোগ নাই। উপদেশ হলো, অনেক কাজ হয়েছে। এখন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের পাশে সাহসী লোকজন আছে। এদেশটা আমাদের সবার। ভেদাভেদ বলতে কিছু নাই। কোয়ালিটি দরকার। আমাদের কর্মক্ষম লোক দরকার। তিনি ছাত্রদের বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের কোনো পরামর্শ থাকলে আমাদের দেবেন। উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আরও বলেন, সবার মধ্যে কনফিডেন্স গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেকে ভাই ভাই সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সবার মনে ইকুইটি গড়ে তুলতে প্রয়োজন লিডারশিপ। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার প্রতি বেশি নজর দিতে হবে। আগে পলিসি সংস্কার করে নতুন পলিসি করা প্রয়োজন। সব পলিসিই হতে হবে মানব কল্যাণে। ডিজিটালাইজড ফর্মে সব ছাত্রছাত্রীদের আনা হবে। তিনি খাগড়াছড়িতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এফিলিয়েটেড ভার্সিটি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অতি সহজেই একজন পাহাড়ের ছাত্র যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট লাভ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, পাহাড়ি এলাকায় এখন উচ্চফলনশীল ও উপকারি গাছ লাগাতে হবে। তিনি বলেন, পরিবেশ ও সামাজিক ভারসাম্য ঠিক রেখে বনায়ন করতে হবে। তিনি বাঁশ চাষের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, বাঁশ হচ্ছে পরিবেশবান্ধব। পানির প্রবাহের জন্য বাঁশ চাষের গুরুত্ব অনেক বেশি। এছাড়া আমাদের খাল, নদী, ঝিরিগুলোর প্রবাহকে সচল রাখতে হবে। সে লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। পার্বত্য এলাকায় তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত করতে আমাদেরকে বেশি বেশি ইক্ষু, কফি, কাজু বাদাম, আঙ্গুর চাষ, তুলা চাষ; এছাড়া আম, কাঁঠাল বাগান সৃজন এবং বাঁশ চাষের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রথমেই আমাদের পরিবেশকে ঠিক করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অবদান রাখায় ছাত্রদের উদ্দেশে তার নিজের ইচ্ছা ব্যক্ত করে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্বাবলম্বী হতে কিছু স্কিম গ্রহণ করতে হবে। পার্বত্য তিন জেলার রাস্তার উভয় পাশে ফলের চারা লাগানো দরকার। রাস্তার পাশের ফলের মালিকানার অংশীদার হবেন রাস্তার পাশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। এজন্য পরিচর্যা বাবদ তারা ভাতাও পাবেন। সচিব আরও প্রস্তাব করেন, গরিব প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনা-নেওয়ার জন্য তিন পার্বত্য জেলা থেকে অর্থের একটি থোক বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। নবজাতক শিশুদের জন্য একটি গিফট বক্স রাখারও প্রস্তাব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সচিব এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী। তিনি বলেন, নতুন ও আধুনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম আমরা গড়তে চাই। ছাত্ররা উপদেষ্টার কাছে পার্বত্য অঞ্চলের পানির সংকট নিরসন, চাঁদাবাজি বন্ধ করা, শিক্ষা ব্যবস্থায় লবিং ও দুর্নীতি বন্ধ করার আহ্বান জানান। উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা মনোযোগ দিয়ে ছাত্রদের কথা শুনেন এবং এসব বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পার্বত্য চট্টগ্রামের পক্ষে মোহাম্মদ এরফানুল হক, শাহাদাৎ ফরাজী, মিনহাজ মুরশীদ, থোয়াইচিংমং চাক, রফিকুল ইসলাম, জিয়াদ, রামখুমলিয়ান মংপা বম, মো. রাসেল মাহমুদ, ইরফান ও মিনহা ত্বৌকি উপস্থিত ছিলেন।