বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিওে সহিংসতার সময় ইন্টারনেটসেবা কার নির্দেশে বন্ধ করা হয়েছিল, সেটি খুঁজে বের করতে গঠিত তদন্ত কমিটি 'প্রাথমিকভাবে' জানতে পেরেছে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নির্দেশেই কাজটি করা হয়েছিল।
মঙ্গলবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, তদন্তে উঠে এসেছে, মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের মৌখিক নির্দেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদের নির্দেশনায় অপারেটরা ইন্টারনেটসেবা বন্ধ করে দেয়। এর সঙ্গে ডেটা সেন্টারে অগ্নিসংযোগের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানতে পেরেছে তদন্ত কমিটি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে 'কমপিস্নট শাটডাউন' কর্মসূচিতে দেশজুড়ে সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গত ১৭ জুলাই প্রথমবার মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তা চালু হয় ২৮ জুলাই।
এর মধ্যে ১৮-২৩ জুলাই ব্রডবান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ রাখা হয়। অর্থাৎ, ওই সময়টায় ইন্টারনেটে পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে।
পরে ইন্টারনেট খুলে দেওয়া হলেও ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম চালু হয় ৩১ জুলাই দুপুরে।
সে সময় সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলক বলেছিলেন, সহিংসতায় ডেটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে।
এরপর গত ২ আগস্ট প্রায় ৭ ঘণ্টা মোবাইল ইন্টারনেটে ফেসবুক ও টেলিগ্রাম সেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল।
সবশেষ গত ৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে বন্ধ করা হয় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। এর আগের দিনই বন্ধ করা হয়েছিল মোবাইল ইন্টারনেটও।
পরে ৫ আগস্ট দুপুরের পর ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেটসেবা ফিরে আসে।
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় একাধিকবার দেশব্যাপী মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট শাটডাউন হয়। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয় এবং বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট শাটডাউনের কারণ এবং সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের নির্দেশক্রমে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
সেই কমিটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫-১৬ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট এবং গত ১৮-২৩ জুলাই পর্যন্ত এবং পরে ৫ আগস্ট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ ও চালু করার বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রশাসনিক অনুমোদন নেওয়া হয়নি। সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের মৌখিক নির্দেশে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদের নির্দেশনায় সেটি সম্পন্ন করা হয়েছিল।
গত ১৭-২৮ জুলাই পর্যন্ত এবং ৫ আগস্ট মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ও চালু করার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) নির্দেশনায় সম্পন্ন করা হয় বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্ণিত সময় ডাটা সেন্টারে আগুন লাগার সঙ্গে ইন্টারনেট বন্ধের কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রতিবেদনে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে, 'ইন্টারনেট বন্ধের সঙ্গে আগুনে ডাটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি সম্পৃক্ত করে প্রচারণার মাধ্যমে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জাতির সঙ্গে মিথ্যাচার ও প্রতারণা করেছেন।'
ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে পলক বলেছিলেন, 'মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে আগুন দেওয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়কের ওপর থাকা ইন্টারনেট সেবাদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েকটি ডেটা সেন্টারও। সে কারণেই সারাদেশে ইন্টারনেটসেবা বন্ধ হয়ে যায়।'
আর এতে ডিজিটাল যুগে প্রবেশের পর সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য বাংলাদেশে বড় ধরনের ইন্টারনেট 'বস্ন্যাকআউটের' কবলে পড়ে। নেট না থাকায় ডিজিটাল পরিষেবায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠা জীবনযাত্রায় বড় ধাক্কা লাগে।
এসব বিষয়ে অধিকতর তদন্ত চলমান আছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য দিয়েছে মন্ত্রণালয়।