চট্টগ্রামে মেয়র-কাউন্সিলররা আত্মগোপনে, সেবা বন্ধ

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ৬ দিন পরও কার্যালয়ে আসেননি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। অফিস করছেন না সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও। এর ফলে নাগরিক সেবা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে পরিচ্ছন্নতা ও সড়ক সংস্কারকাজ চলছে। এদিকে মেয়রের অনুপস্থিতিতে আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে জটিলতায় পড়েছেন সংস্থাটির পদস্থ কর্মকর্তারা। কারণ সিটি করপোরেশনের অর্থসংক্রান্ত সব কাজ মেয়রের ওপর নির্ভরশীল। চেক সই ছাড়াও কেনাকাটার ব্যাপারে মেয়রের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। মেয়র না থাকায় জরুরি কেনাকাটা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়ির তেল এবং সড়ক সংস্কারের জন্য বিটুমিন কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থা বজায় থাকলে আগামী দিনে পরিচ্ছন্নতা কাজও থেমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় রোববার দুপুরে সিটি করপোরেশনের বিভাগীয় প্রধান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। সভায় সিটি করপোরেশনের নাগরিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে আলোচনা হয়। আর্থিক বিষয় নিয়েও কর্মকর্তারা আলোচনা করেন। জরুরি নাগরিক সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়। মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে অফিস করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সিটি করপোরেশনের সব বিভাগেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরব উপস্থিতি ছিল। রাজস্ব কার্যালয়গুলোয় পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। নগরবাসী গৃহকর জমা দিতে পারছেন। ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার কাজও চলছে। সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয়তা সনদ, চারিত্রিক সনদ, উত্তরাধিকার সনদ, ওয়ারিশান সনদসহ প্রয়োজনীয় সব সনদ দেওয়া হয়। এসব সনদে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সই লাগে। কিন্তু এখন তা ইসু্য করা যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। সিটি করপোরেশন পরিচালিত নাগরিক সেবাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা হয়তো নিরাপত্তার কারণে নিজেদের আত্মগোপনে রেখেছেন। তাই এমন পরিস্থিতিতে আমরা জোর দিচ্ছি পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনায় এবং বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট সংস্কারে।' জন্মনিবন্ধন ও ওয়ারিশান সনদসহ প্রয়োজনীয় সনদ দেওয়ার বিষয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, নাগরিক সেবার মধ্যে জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশান সনদসহ প্রয়োজনীয় কিছু সনদ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দেওয়ার কথা। কিন্তু তারা কেউ অফিস করছেন না। অর্ধেকের বেশি কাউন্সিলর কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চার-পাঁচটি পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তাই এই সেবাগুলো এ মুহূর্তে চালু করা যাচ্ছে না। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা কাজ শুরু করেছেন। এসব সেবা চালুর বিষয়ে কেন্দ্রের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন তারা। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামে মেয়রের বাড়িসহ সিটি করপোরেশনের অন্তত ২০টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর হয়। এরপর থেকে অফিস করছেন না মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। আর ৪১টি সাধারণ ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সবাই আওয়ামী লীগ-সমর্থক। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা না থাকলে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই স্থবির হয়ে যাবে। নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী। এই স্থবিরতা কাটাতে মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দ্রম্নত অফিস করার নির্দেশ দেওয়া উচিত মন্ত্রণালয়ের। যদি মেয়র অফিস না করেন, তাহলে প্যানেল মেয়রদের মধ্য থেকে কাউকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র করা হোক। আর তা-ও যদি না হয়, সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসক নিয়োগ করা দরকার। সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চালু রাখা এবং নাগরিক সেবা দেওয়ার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।