আতঙ্ক নিয়েই স্কুলে ফিরছে শিক্ষার্থীরা

বাড়তি নিরাপত্তা চান অভিভাবকরা

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দেশে ক্ষমতার পালাবদলের অস্থিরতা এখনো কাটেনি। পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এর মধ্যে আতঙ্ক নিয়েই স্কুলে ফিরছে শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ক্লাসে ফেরেনি। এমন প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন অভিভাবকরা। কেউ কেউ অনলাইনে ক্লাস নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন। রোববার থেকে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে মিরপুরের সাউথ পয়েন্ট স্কুল ও কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তামান্না রহমান। তামান্নার মা পারুল আক্তার তার মেয়ের নিরাপত্তা নিয়েই বেশি শঙ্কিত। সেজন্য তিনিই তার মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করছেন। পারুল বললেন, 'এতদিনে বাচ্চাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে পড়াশোনায়। কিন্তু তার পরও স্কুলে পাঠাতে ভয় লাগছে। রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি ভালো না, নিরাপত্তা তো একেবারেই নেই। থানাগুলো শূন্য; অপরাধীরা সবাই বাইরে। যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। তাই মেয়েকে একা ছাড়ছি না।' বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, '৭ আগস্ট থেকে স্কুল খোলা থাকলেও তিনি নিরাপত্তাজনিত কারণে তার ছেলেকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। সেনাপ্রধান ঘোষণা দেওয়ার পরে স্কুল খুলেছে। কিন্তু আমি বাচ্চাকে পাঠাইনি। মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণার আগে পাঠাব না। আর এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবস্থা, সেই কারণেই ছেলেকে স্কুলে পাঠানোর সাহসও পাচ্ছি না।' মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ এমাম হোসাইন জানান, 'স্কুল খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় স্বাভাবিক পাঠদান প্রক্রিয়ায় ফেরা যাচ্ছে না।' তিনি বলেন, 'অনেকের মধ্যে এখনো আতঙ্ক কাজ করছে। অনেকে আবার সরকারি ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করছে যে, কবে স্কুল খুলে দেওয়া হবে। তবে শিক্ষার্থী উপস্থিতি অনেক কম। গড়ে ১০-১১ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে আসছে। ফলে স্বাভাবিক পাঠদানে ফেরা যাচ্ছে না।' রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল আসমা বেগম জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে এখনো ক্লাস শুরু হয়নি। তিনি জানান, 'আমাদের এখানে আর্মি ক্যাম্প থাকায় ক্লাস শুরু করা যায়নি। কারণ ক্লাস খালি নেই। অফিসের কার্যক্রম চলছে। আর আমাদের অনেক শিক্ষার্থী যেহেতু আবাসিক, তারা এখনো আসতে পারেনি। আসার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। অনেকের মধ্যে এখনো উৎকণ্ঠা রয়েছে।' মিরপুর-১০ নম্বরের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নূরে আলম বলেন, '১৫ শতাংশের মতো বাচ্চারা ক্লাসে আসছে। বাকিরা আসছে না। এদের অনেকে আবার ট্রাফিকের কাজ, শহর পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত আছে।' শেওড়াপাড়ার মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া রহমান বলে, 'স্কুলে যাচ্ছি ঠিকই। কিন্তু এখন তো সারাক্ষণ ডাকাতের আতঙ্ক থাকতে হচ্ছে। স্কুলে যদি আর্মি, পুলিশ বা কোনো নিরাপত্তা বাহিনীকে রাখা যেত তাহলে ভালো হতো।' ঢাকার মিরপুর-১২ নম্বরের লিটল ফ্লাওয়ারস প্রিপারেটরি স্কুলের অভিভাবক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'টিভিতে তো গত কয়েকদিন ধরে ওরা (শিক্ষার্থীরা) মারামারি দেখেছে। পরশুদিনও সারারাত ডাকাত আতঙ্কে ঘুমাতে পারেনি। ফলে বাইরে বের হলেই তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। এমন ভয়ংকর পরিবেশ তো আগে দেখেনি ওরা।' শেরে বাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা ইসরাত জাহান বলেন, 'কোভিডের সময় তো বাচ্চারা বহুদিন অনলাইনে ক্লাস করেছে। এখন যেহেতু পরিস্থিতি ভালো না, তাই কিছুদিন অনলাইন ক্লাস নেওয়া যায়। তাহলে বাচ্চারা কিছুটা হলেও পড়তে বসবে। ওদের অর্ধবার্ষিক মূল্যায়নটাও শেষ হয়নি। চারটা পরীক্ষা হওয়ার পরই স্কুল বন্ধ হয়ে গেল। তাই এখন অনলাইনে ক্লাস নেওয়াটা জরুরি।' স্কুল খোলার বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'নতুন সরকার বৈঠক করে এ বিষয়ে জানাতে পারবেন। এখন আসলে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ দায়িত্ব নিয়ে কথা বলার সুযোগ আমাদের নেই। তবে যেহেতু কোনো নির্দেশনা নেই, তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা আছে।' সূত্র : বিডি নিউজ