হিন্দুদের ওপর হামলা বন্ধের দাবিতে উত্তাল শাহবাগ
প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানীর শাহবাগ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় হামলার প্রতিবাদে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকার শাহবাগ অবরোধ করে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ।
এদিকে অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতন বন্ধ করাসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি)। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় অন্তর্র্বর্তী সরকারের কাছে এসব দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
শনিবার বিকাল ৩টার পর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধ হাজারো মানুষ। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন পস্ন্যাকার্ড-ব্যানার হাতে নিয়ে চার দফা দাবি জানান। 'এ দেশে জন্ম আমার, দেশটা কোনো ধর্মের না', 'আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই', 'উই ওয়ান্ট জাস্টিজ', 'বাংলাদেশ কারো বাপের না'সহ ইত্যাদি স্স্নোগান দিতে থাকেন তারা। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শাহবাগ হয়ে ফার্মগেট, মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ হয়ে এলিফ্যান্ট রোড এবং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়মুখী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর আগের দিন শুক্রবার প্রায় চার ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়ে শনিবারের এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিক সংগঠনের বিশ্বনাথ বলেন, 'হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-লুটপাট চালানো হচ্ছে। কয়েকটি স্থানে হত্যাকান্ড হয়েছে। আমরা তো এ দেশেই জন্মেছি, আমরা কোথায় যাব? ক্ষমতায় যেই
আসুক, আমরা নিরাপত্তা চাই। আমরা আমাদের বাসস্থান ও ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তা চাই।'
বিক্ষোভে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করার দাবি নিয়ে ৪ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে আছে- সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে; সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সব হামলা প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে; এবং সংখ্যালঘুদের জন্য ১০ শতাংশ সংসদীয় আসন বরাদ্দ করতে হবে।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগ করার পর থেকে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশাপাশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরেও হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে। বিভিন্ন সংগঠন হিন্দুদের মন্দির পাহারা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে ফেসবুকে নানা ছবিও প্রচার করছে। তবে এতেও হামলা বন্ধ হয়নি।
সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধসহ ৯ দফা দাবি
এদিকে, অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতন বন্ধ করাসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সনাতন পার্টি (বিএসপি)। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এসব দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সুমন কুমার রায় বলেন, 'দেশ আজ নরকে পরিপূর্ণ হয়েছে। কোনো মানুষের নিরাপত্তা নেই। অতি দ্রম্নত এই অরাজকতা বন্ধে দেশবাসীকে বৈষম্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক, সুখী, সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়তে দল-মত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।'
বিএসপি'র দাবিগুলো হলো- চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতন অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সবার পরিবারের একজন সদস্যকে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে এবং আহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে; ২০০১-২০২৪ সাল পর্যন্ত সব সংখ্যালঘু নির্যাতনের পুনঃতদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দ্রম্নত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, দায়িত্ব পালনকালে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যেক পরিবারের একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি দিতে হবে; অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল করে প্রকৃত মালিকদের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হবে; ১৯৭২ সালের সংবিধানে পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে; সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বন্ধে স্থায়ী সমাধান ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ করা এবং রাষ্ট্রীয় পদ্ধতির সংস্কার করে বৈষম্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বাংলাদেশ সনাতন পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনুপ কুমার দত্তের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অশোক ধর, বাকশালের সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. জহিরুল কাইয়ুম, অ্যাড. লিটন বণিক প্রমুখ।