বরিশালে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে অস্বস্তিতে ক্রেতারা
বেড়েছে চাল-আটার দাম অধিকাংশ পণ্যই আগের দামে বিক্রি বাজার মনিটরিংয়ে শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
বরিশাল অফিস
চারদিকে নিত্যপণ্যের দাম কমার খবর ছড়িয়ে পড়লেও বরিশালের বাজারের বাস্তবতার সঙ্গে সেসবের কোনো মিল নেই। হাতেগোনা দু-একটি সবজির দাম কমলেও কমেনি মুদি বা মাংসের বাজার। বরং গত এক সপ্তাহে বেড়েছে চাল ও আটার দাম। তাই বরিশালে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে অস্বস্তিতে ক্রেতাসাধারণ। শনিবার বরিশাল নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত কয়েকদিন ধরে নিত্যপণ্য দ্রব্যের একটি মূল্য তালিকা সেনাবাহিনীর নির্ধারণ করা দাবি করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। ওই দামের বাহিরে কাউকে পণ্য না কেনার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। সেই তালিকার সঙ্গে বাজারে বিক্রীত পণ্যের কোনো মিল তো নেই, বরং পণ্যের মূল্যহ্রাসের খবরও গুজবে পরিণত হয়েছে। শনিবার নগরীর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা, বাংলাবাজার, নতুন বাজার ও সাগরদী বাজার ঘুরে জানা গেছে, অধিকাংশ পণ্যই পূর্বের দামে বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে কমেনি ওইসব পণ্যের দাম। হাতেগোনা দু-একটি পণ্যের দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে অধিকাংশের। সবচেয়ে আলোচিত কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও এটি বিক্রি হতো ২৪০ টাকা দরে। এক সপ্তাহ পর্যন্ত দাম অপরিবর্তিত থেকে ঝিংগা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে, কাঁকরোল ৮০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, রেখা ৪০ টাকা, বেগুন জাত ভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, চায়না গাজর ২০০ টাকা, ভারতীয় টমেটো ২০০ টাকা, ফুলকপি ৭০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা ও পাতাকপি ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কয়েক দিনের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা দাম কমে পটোল বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, গাডি ৬০ টাকায়, পেঁপে ৪০ টাকায় ও করলা ৬০ টাকা কেজি দরে। প্রতিটি লাউ প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে।
এ ব্যাপারে চৌমাথা বাজারের খুচরা কাঁচামাল ব্যবসায়ী শাহিন হাওলাদার বলেন,
কারফিউর সময় গাড়ি না আসায় পণ্য সরবরাহ কম থাকায় কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ছিল। মৌসুম থাকলেও অধিকাংশ সবজি মেহেরপুর ও যশোর থেকে আসায় দাম একটু বেশি দাবি করে বলেন, আমাদের এ অঞ্চলে যদি সবজির পর্যাপ্ত আবাদ হতো তবে দামও অনেকটা কমত। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিটি পণ্যে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১০ টাকা ব্যবসা করি। পাইকারি বাজারের ওপর নির্ভর করে খুচরা কততে বিক্রি করব।
এদিকে মুদি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে চালের দাম।
শনিবার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে কেজিতে ২ টাকা বেড়ে মিনিকেট চাল হয়েছে ৭০ টাকা, বালাম হয়েছে ৬০ টাকা ও বুলেট হয়েছে ৫৬ টাকা। দাম অপরিবর্তিত থেকে মসুর ডাল কেজি বিক্রি হচ্ছে দেশি ১৩০ ও বিদেশি ১১০ টাকা, মুগ ডাল ১৬০ টাকা, পেঁয়াজ দেশি ১১০ টাকা ও ভারতীয় ১০০ টাকা, রসুন চায়না ১৮০ টাকা ও দেশি ২০০ টাকা, আলু ৬০ টাকা, চিনি ১৩০ টাকা, সয়াবিন তেল লিটার ১৬৫ টাকা দরে। তবে খোলা আটা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। অপরিবর্তিত রয়েছে শিশু খাদ্যের দাম।
চারদিকে দ্রব্যমূল্যের নিম্নগতির খবরকে গুজব বলে দাবি করে চৌমাথা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী মজিদ স্টোরের মালিক মো. হাসান বলেন, পণ্য যেখান থেকে উৎপাদন হয় সেই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। তবে পরিবহণ খরচ বৃদ্ধির কারণে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনিও চান দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হোক। দর কমেনি সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির। প্রতি কেজি সোনালি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা ও ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা কেজি দরে।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গরুর মাংসের দাম ৬০০ ও খাশির মাংসের দাম ৮০০ টাকা করা হয়েছে বলে পোস্ট দেওয়া হলেও বাস্তবে তার কোনো মিল নেই। শনিবারও বরিশালের সব বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা আর খাসির মাংস বিক্রি হযেছে ৯০০ টাকা দরে।
চৌমাথা বাজারে সবজি কিনতে আসা আব্দুর রশিদ জানান, দেশের কোনো পরিস্থিতিতেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। তিনি এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চান।
তবে গত দুই দিন যাবৎ বরিশালের বিভিন্ন কাঁচাবাজার মনিটরিং করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বিক্রেতাদের পাইকারি ক্রয়ের ম্যামো পর্যন্ত যাচাই করছেন। কোথাও কোথাও কেজিতে ৫০ থেকে ৮০ টাকা পার্থক্যে কাঁচামাল বিক্রি করার তথ্য পেয়েছেন দাবি করে মিলন নামে এক শিক্ষার্থী জানান, 'আমরা বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখছি। কাঁচামাল বিক্রেতাদের প্রতিটি পণ্য কেনার চেয়ে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তিতে বিক্রি করার জন্য বলা হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'