দেশে সদ্য গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৭ সদস্য শপথ গ্রহণ করেছেন। যেখানে স্থান পেয়েছেন বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৬ বিশিষ্টজন। নতুন স্বপ্নে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তারা অনন্য ভূমিকা পালন করবেন বলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা।
উপদেষ্টা পরিষদে চট্টগ্রামের ৬ জন হলেন- প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, নূর জাহান বেগম, ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক), ফরিদা আখতার, ড. আ. ফ. ম খালিদ হাসান ও সুপ্রদীপ চাকমা।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামের সন্তান। ১৯৪০ সালের ২৮ জুন তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৪৪ সালে চট্টগ্রাম নগরীর লামাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করে পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং পূর্ব পাকিস্তানের ৩৯ হাজার ছাত্রের মধ্যে ১৬তম স্থান অধিকার করেন তিনি। এরপর চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি এই কলেজে প্রভাষক হিসেবেও যোগ দেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৯৬ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই পুরস্কার লাভ করেন।
নূর জাহান বেগম
নূর জাহান বেগম ২০১০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন। এর আগে তিনি নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যে দায়িত্ব তিনি পেয়েছিলেন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুহাম্মদ ড. ইউনূসের কাছ থেকে। তিনি এখন গ্রামীণ পরিবারের একটি অলাভজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ শিক্ষার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৭৬ সালে যখন নূর জাহান বেগম গ্রামীণ ব্যাংকের প্রকল্প
শুরু করেন তখন তিনি ড. ইউনূসের প্রথম সারির সহযোগীদের একজন ছিলেন। নূর জাহান বেগম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের তৃণমূল গোষ্ঠীতে দরিদ্র গ্রামীণ মহিলাদের সংগঠিত ও প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ব্যাংকের শুরুর দিকে এবং সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিনে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রথম 'প্রিন্সিপাল' ছিলেন।
ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক)
মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বীরপ্রতীক উপাধি পাওয়া ফারুক-ই-আজমের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। তিনি ১৯৫০ সালে হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র সমন্বিত যুদ্ধাভিযান 'অপারেশন জ্যাকপটের' উপ-অধিনায়ক ছিলেন ফারুক-ই-আজম। ১৯৫০ সালে জন্ম নেওয়া ফারুক-ই-আজম পরে চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদিবাগ সড়কে তিনি স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। তিনি ও তার স্ত্রী শামীমা ফারুক চট্টগ্রামের প্রথম ফ্যাশন হাউস 'রমণীয়া' গড়ে তোলেন।
ফরিদা আখতার
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার একজন লেখক, গবেষক ও আন্দোলনকর্মী। তার জন্ম চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানার হারলা গ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেছেন তিনি। নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য সম্পদ, তাঁত শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক, জনসংখ্যা এবং উন্নয়নমূলক বিষয়ে নিবিড়ভাবে দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করছেন তিনি। বর্তমানে তিনি 'উবিনীগ' (উন্নয়ন বিকল্পের নীতির নির্ধারণী গবেষণা) নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন
১৯৫৯ সালের ২ ফেব্রম্নয়ারি সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নের মক্কার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তার পিতা মুহাম্মদ হাবিবুলস্নাহ একজন ইসলামি পন্ডিত ছিলেন।
ড. খালিদ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা উপদেষ্টা, মাসিক আত তাওহীদের সম্পাদক, বালাগুশ শরকের সহকারী সম্পাদক এবং আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের কুরআনিক সায়েন্সেস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অতিথি শিক্ষক। তিনি চট্টগ্রামের ওমরগণি এমইএস কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধানও ছিলেন। বিশ্ব মুসলিম লীগের মুখপাত্র দ্য ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ জার্নালসহ বিভিন্ন সাময়িকীতে তার দুই শতাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ইসলামী বিশ্বকোষ দ্বিতীয় সংস্করণের ৩ থেকে ৯ খন্ড ও সিরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেছেন।
সুপ্রদীপ চাকমা
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কমলছড়ি গ্রামে সুপ্রদীপ চাকমার বাড়ি। ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই সুপ্রদীপ চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। চাকরিকালে তিনি মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি রাবাত, ব্রাসেলস, আঙ্কারা ও কলম্বোতে বাংলাদেশ দূতাবাসে বিভিন্ন কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন।