টানা প্রায় ৩ সপ্তাহ পর স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে রাজধানীর বাজারে। পাইকারি পর্যায়ে পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি দাম কমেছে খুচরা বাজারেও। দেশের এমন পরিস্থিতির মধ্যেও দাম কমতির দিকে থাকায় স্বস্তি জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। এছাড়াও বন্ধ থাকা বেশিরভাগ দোকান এদিন খুলেছে। বাজারে বেড়েছে ক্রেতার উপস্থিতিও।
শুক্রবার রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজ থেকে শুরু করে কমতির দিকে রয়েছে সবজি, মাছ ও মাংশসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। তবে কোটাবিরোধী আন্দোলন ও আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার কারণে গত এক মাস ধরে স্থবির হয়ে পড়েছিল দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। বাজারে পণ্য সরবরাহে দেখা দিয়েছিল তীব্র সংকট। বিক্রেতারা বলছেন, সেই সংকট এখন অনেকটা কেটে গেছে।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে বাজার সিন্ডিকেট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। মুখে নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও বাস্তবে তা ছিল না। নতুন সরকারের কাছে ক্রেতাদের প্রত্যাশা, বাজার সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখা হয়।
শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সবজি, ডিম, মুরগি ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে চাল, ডাল, তেলের মতো কয়েকটি পণ্যের দর আগের জায়গায় স্থিতিশীল রয়েছে। এদিন বাজারভেদে বেগুন, পটল, পেপে, ঢেঁড়স ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ধুন্দল, ঝিঙ্গে ও চিচিঙ্গার দাম ৬০ টাকার মধ্যে আর বরবটি, করলা ৮০ টাকা। এ সপ্তাহের শুরুতেও এসব সবজির দাম ছিল ৮০-১০০ টাকা। অর্থাৎ কয়েক দিনের ব্যবধানে কিছু সবজির দাম অর্ধেকে নেমেছে। আন্দোলনের আগের তুলনায়ও এখন সবজির দাম বেশ কম, বলছেন ক্রেতারাও।
বিক্রেতারা জানান, বেশ কয়েকদিনের টানা আন্দোলনের কারণে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবারের পর থেকে পরিস্থিতি দ্রম্নত বদলাতে শুরু করেছে। বন্ধ হয়েছে বাজার ও রাস্তায় চাঁদাবাজি। তাই পণ্যের দাম পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে কমেছে। পাশাপাশি ন্যায্য দরে পণ্য বিক্রি করতে শিক্ষার্থীদের তদারকি চলছে। এসব কারণে পাইকারি পর্যায়ে সবজির দর অনেকটা কমেছে। তাছাড়া আগের তুলনায় বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, যা দাম কমার অন্যতম কারণ বলেও জানান তারা।
অন্যদিকে, আন্দোলনের সময় পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছিল, যা কমে এখন আবার আগের দাম ১০০-১১০ টাকায় এসেছে। একইভাবে আলুর দাম আবারও ৫৫-৬০ টাকা কেজিতে নেমে এসেছে।
এদিকে, গত সোমব ও মঙ্গলবার ঢাকায় প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ১৯০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। যা এখন ১৫০ এ নেমেছে। তবে পাড়া-মহলস্নায় দোকানে এদিন ১৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
ডিম বিক্রেতারা বলেন, যেভাবে তরতর করে ডিমের দাম বেড়েছিল ঠিক সেভাবে কমেছে। বাজার এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হওয়ার পথে। একইভাবে কমতির দিকে রয়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও। প্রতি কেজিতে ২০ টাকা কমে এদিন বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকা দরে। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা; কক প্রতি কেজি ৩৩০ টাকা, লেয়ার প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে আগের বাড়তি দামেই প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকায় এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১শ' টাকায়।
তবে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের বাজার। এদিন প্রতিকেজি কেজি পাঙাশ মাছ ২শ' থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, রুই প্রতি কেজি ৩৫০, কাতল প্রতি কেজি ৩৮০ থেকে ৪শ' ও শিং প্রতি কেজি ৪শ' থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া টেংরা প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬শ' টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫শ' টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭শ' টাকা, কই প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা ও বোয়াল প্রতি কেজি ৭শ' থেকে ৮শ' টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ ও ন্যায্য দরে পণ্য বিক্রির অনুরোধ জানিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন বাজারে মাইকিং করেছেন তারা। এসব বিষয় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলেও মনে করেন সাধারণ ক্রেতারা।