চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য
গতিশীলতা নির্বিঘ্ন রাখতে ব্যবসায়ীদের আহ্বান
প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রাম বু্যরো
দেশের অর্থনীতির স্বার্থে শিল্প-কারখানাসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিশীলতা নির্বিঘ্ন রাখতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।
চট্টগ্রাম চেম্বারের বিবৃবিতে বলা হয়, চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় যদিও গত মঙ্গলবার থেকে দেশের সকল ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু ও অফিস আদালত খুলে দেয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নিরাপত্তা শঙ্কায় অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসতে পারছে না। বিশেষ করে, দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য খালাস ও কাস্টমসের কার্যক্রমেও এক ধরনের ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে করে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয়সহ বিভিন্ন আমদানি পণ্যের সরবরাহ, বিঘ্নিত হচ্ছে সামগ্রিক সাপস্নাই চেইন ব্যবস্থা ও ব্যাহত হচ্ছে রপ্তানি কার্যক্রম। একদিকে আমদানিনির্ভর কাঁচামাল সংকট অন্যদিকে রপ্তানি বিলম্ব, সব মিলিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মহীনতা ও স্থবিরতার উপক্রম হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের স্বাভাবিক কার্যগতি ফিরিয়ে আনাসহ সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি অফিস এবং শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তথা বেসরকারি খাতের পথচলাকে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রাখতে জরুরিভিত্তিতে সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সকল সরকারি ও বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা বিধান এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ পুনরুদ্ধার, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির এক আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে চিটাগাং চেম্বার সহযোগী ভূমিকা পালন করবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কয়েক বছর যাবত দেশের অর্থনীতির মন্দার মধ্যে প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাণহানি, সংঘাত ইত্যাদি দেশের অর্থনীতিকে আরও চাপের মধ্যে ফেলছে। চলমান সংকটের আশু নিরসন না হলে দেশের অর্থনীতি আরও গভীর সংকটে পড়বে। সীমিত পরিসরে দেশের শিল্প কারখানা চালু হলেও তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে দেশের ব্যবসায়ী সমাজ উদ্বিগ্ন। এ লক্ষ্যে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার আবেদন জানানো হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শিল্প কারখানার শ্রমিকদের বেতন প্রদান করা সম্ভব হবে না। এ ধরনের পরিস্থিতির উন্নয়নে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন না করা হলে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগসহ সার্বিক বিনিয়োগে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে।
এদিকে, দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে চরম স্থবিরতা। অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের দিন কাটছে অজানা আতঙ্কে। দেশে যেহেতু বর্তমানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, তাই অনেকেই নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন। পণ্য পরিবহণও কমে গেছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ী দোকান-আড়তের অর্ধেক অংশ খোলা রেখে কাজ সারছেন। স্বাভাবিক সময়ে রাত ১ থেকে ১১টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকলেও অনেক ব্যবসায়ী সন্ধ্যা নামার আগেই দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, আমরা দোকান খুলছি। তবে আগের তুলনায় একটু আগেভাগে দোকান বন্ধ করে দিচ্ছি। কারণ এখন তো পুলিশ নাই। নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে কিংবা আক্রান্ত হলে আমরা সবার আগে পুলিশের কাছে যাই। এখন তো থানাই বন্ধ।
এছাড়া গতি ফিরতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। বাড়ছে বন্দরের কনটেনার ডেলিভারি এবং ইয়ার্ডে জমে থাকা কনটেনারের সংখ্যা কমে এসেছে। আর কয়েকদিন পুরোদমে কাজ চললে জট পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে বন্দর সূত্র জানিয়েছে।