সরকার পতনের পর পুলিশ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ডাকাত আতঙ্কে বুধবারও নির্ঘুম রাত কেটেছে ঢাকার অনেক এলাকার বাসিন্দাদের। উত্তরা, মোহাম্মদপুরসহ এ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। রাতভর ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রম্নপে পোস্ট লিখে, লাইভ করে নিজেদের নিরাপত্তা চেয়েছেন আতঙ্কিত বাসিন্দারা। আবার মোহাম্মদপুর, উত্তরার, মিরপুরসহ অনেক এলাকায় দল বেঁধে পাহারা দিয়েছেন এলাকাবাসী।
মোহাম্মদপুরের বসিলার বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক নাজভী ইসলাম জানান, 'মঙ্গলবার রাতেও তাদের এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। মসজিদের মাইকে বারবার ঘোষণা দিয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে বলা হচ্ছিল। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার রাতে এলাকাবাসী দল বেঁধে লাঠিসোটা হাতে রাস্তায় পাহারা দিতে নেমে যান। তাদের সঙ্গে ছাত্ররাও এলাকা পাহারা দিতে নামেন। সারারাত পাহারা দিয়ে ভোরে তারা ঘরে ফিরে যান।'
মোহাম্মদপুরের চানমিয়া হাউজিংয়ের বাসিন্দা জাকিরুল ইসলাম বলেন, 'তাদের হাউজিংয়ের ফটকগুলোতে পাহারা বসানো হয়েছিল বুধবার রাতে। তবুও আতঙ্কে লোকজন ঘুমাতে পারেনি।
ডাকাতের আতঙ্ক ছড়িয়েছে ধানমন্ডি, শংকর ও মিরপুর এলাকতেও। মিরপুর ১৪ নম্বরের সরকারি কর্মকর্তাদের একটি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা চিকিৎসক আবির হোসেন জানান, তাদের হাউজিং কমপেস্নক্সের ভেতরে ডাকাতরা ঢুকে পড়েছিল বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
রাত ৩টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে সাহায্য চান অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক। উত্তরার প্রিয়াংকা রানওয়ে সিটিতে 'ডাকাতের হামলার' খবর দিয়ে তিনি সাহায্য চাইছিলেন।
চমক বলেন, ভবনের বাসিন্দারা যার হাতে যা আছে দা-বটি-লাঠি তাই নিয়ে নিচে নেমেছেন ডাকাত মোকাবিলা করতে। তারা সেনাবাহিনীকে ফোন করেও পাচ্ছেন না।
তিনি সেনাবাহিনীর টহল দলকে সেখানে যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেন।
মিরপুর সেনানিবাস সংলগ্ন ইসিবি চত্বরে ডাকাতরা একটি ভবনে হামলা করেছে বলে অনেকে ফেসবুকে লাইভ ভিডিও করতে থাকেন। ভিডিওগুলোতে শুধু হইচই আর সেনা টহলগাড়ির সাইরেনের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
ডাকাতরা হামলা করেছে বা আসছে- রাতভোর ফেসবুকে এমন পোস্ট দিয়েছেন অনেকে। আবার একযোগে ঢাকা শহরে এত ডাকাত কোত্থেকে এল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। এটা নিছকই আতঙ্ক কি-না সে প্রশ্নও তারা করছেন।
আবার মোহাম্মদপুরে এলাকা পাহারা দিতে বের হওয়া দুটি পৃথক দল পরস্পরকে ডাকাত ভেবেও হইচই করেছে বলে জানিয়েছেন মাসুম সারোয়ার নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা।
পুলিশের বিশেষায়িত সন্ত্রাস দমন ইউনিট এটিইউর এসপি ছানোয়ার হোসেনও রাত জেগে ছিলেন। ভোর ৫টায় নিজের ফেসবুক পেইজে তিনি লেখেন, 'আজ রাতে ডাকাত ইসু্যতে প্রিয়জন কিংবা পরিচতজনদের থেকে শতাধিক হেল্প কল/টেক্সট পেয়েছি যা রীতিমতো ভয়ংকর একটি অভিজ্ঞতা।
তিনি লেখেন, 'এই মুহূর্তে সেনা টহল টিমের নম্বর দেওয়া ছাড়া আমার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু অধিকাংশেরই বক্তব্য, নম্বর বিজি পাচ্ছে। হয়ত সবাই একই সাথে কল করায় এমনটি হচ্ছে। ঘটনাগুলো মোহাম্মদপুর, বসিলা, ধানমন্ডি, মিরপুর, ইসিবি চত্বর এবং উত্তরার দিকে বেশি হচ্ছে। 'বেড়ি বাঁধ' ডাকাতদের প্রবেশ পথ বলে মনে হচ্ছে। আবার, ঢাকার অভ্যন্তরীণ সিজনাল লুটেরা গ্যাং বা ডাকাতও হতে পারে।'
অচিরেই পুলিশ কাজে ফিরবে আশা করে ছানোয়ার লিখেছেন, 'যাই হোক, মানুষের মধ্যে মারাত্মক নিরাপত্তা ভীতি' লক্ষণীয়। খুব অসহায় বোধ করছি। সুদীর্ঘ চাকরিজীবনে এমনটি কখনো হয়নি যে কাউকে পুলিশি সেবা প্রদান করতে পারিনি। তবে খুব শিগগিরই ফিরে আসার প্রতিশ্রম্নতি দিচ্ছি। শুধু পুলিশের মাঝ থেকে 'নিরাপত্তা ভীতিটা দূর করে দিন।'