মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বহুমাত্রিক ও বহুপর্যায়ের নজিরবিহীন ও নির্মম মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য তদন্তের স্বার্থে জাতিসংঘের উদ্যোগে সম্পূর্ণ স্বাধীন কমিশন গঠনসহ ১১ দফা দাবি জানানো হয়েছে।
\হরোববার ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়কে মাইডাস সেন্টারের সামনে টিআইবি আয়োজিত এক মানববন্ধন ও সমাবেশে থেকে এসব দাবি তুলে ধরেন টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ, অহিংস, যৌক্তিক ও অরাজনৈতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সহিংসতায় দুই সপ্তাহ ধরে দেশে নজিরবিহীন ও নির্মম হত্যাকান্ড, ধারাবাহিক বেআইনি নির্যাতন ও নিপীড়ন, বিচারহীন মামলা, যথেচ্ছ হামলা, গণগ্রেপ্তার, অবৈধ রিমান্ড, নিরাপত্তা দেওয়ার ভুয়া যুক্তিতে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আটক ও নির্যাতন, হুলিয়া-পরোয়ানা, অনলাইন-অফলাইন হুমকিসহ সংবিধান, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার বিরোধী কর্মকান্ডের মাধ্যমে এক নৈরাজ্যপূর্ণ ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।
বিভিন্ন জবাবদিহিহীন কার্যক্রমকে বৈধতা ও মূল অপরাধীদের সুরক্ষার লক্ষ্যে অসত্য বয়ান ও নিরেট মিথ্যাচার করা হচ্ছে, যা উদ্বেগ-শঙ্কা ও আস্থাহীনতা গভীরতর করাসহ সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ অধিকতর রুদ্ধ করছে।
মানববন্ধনে উত্থাপিত দাবিনামায় বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনের শাসনের সঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠান তথা সার্বিক রাষ্ট্রকাঠামো ঢেলে সাজাবার জন্য জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক শিক্ষার্থীসহ সাধারণ নাগরিকদের হয়রানি ও নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। আটক সব সমন্বয়ক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিককে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
আরও বলা হয়, বেআইনি, নির্বিচার ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসামাঞ্জস্যপূর্ণ প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহারসহ বিভিন্নভাবে যারা নির্মম হতাহতের জন্য দায়ী এবং যাদের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বপ্নকে পদদলিত করে নজিরবিহীন এই নির্মমতা সংগঠিত হয়েছে, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নিহত-আহত সবার বয়স ও পেশা অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রম্নত প্রকাশ করতে হবে। আহত সবার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা, পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত ও তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে হবে। হতাহতদের পরিবারের জন্য সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।
অবাধ তথ্যপ্রবাহের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে দাবিনামায়, প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও ডিজিটালসহ সব গণমাধ্যমের প্রতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সব ধরনের হুমকি, নিষেধাজ্ঞা ও নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করতে হবে। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ওপর সব প্রকার নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে। সহিংসতা দমন বা অন্য কোনো অজুহাতে, ভিন্নমত দমনের হঠকারি-প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে হবে।
ভিন্নমত, বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিপন্থি নজরদারিভিত্তিক ভীতিকর পরিবেশ, তথা সব জনগণের জন্য নিরাপত্তাহীনতার বোধ সৃষ্টির সংস্কৃতি পরিত্যাগ করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার ফাঁকাবুলির সংস্কৃতি পরিহার করে সকল প্রকার দুর্নীতির বিচারহীনতা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।