রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় রিমান্ড শেষে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ তিনজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউলস্নাহর আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া অপর আসামিরা হলেন- গোলাম দস্তগীর প্রিন্স ও এবিএম খালিদ হাসান।
এদিন রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলগাঁও জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে গত ২৭ জুলাই আদালত তাদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ১৯ জুলাই বিটিভির জেনারেল ম্যানেজার মোছা. মাহফুজা আক্তার রামপুরা থানায় এই মামলা করেন। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ আট জনের নাম উলেস্নখ করা হয়।
অন্য আসামিরা হলেন- ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম এ সালাম ও বিএনপির সমর্থক বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানের ছেলে মো. মাহমুদুস সালেহীন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৮ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমপিস্নট শাটডাউন কর্মসূচির পক্ষে ছাত্রছাত্রীরা রামপুরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও বিটিভি ভবনের সামনে অবস্থান করে। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এরপরই বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চার হাজার নেতাকর্মী সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্স্নোগান দিতে থাকে। তারা পুলিশ ও আনসারের বাধা উপেক্ষা করে বিটিভি ভবনের চারটি গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর ভবনের ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করে। সেখানকার বিভিন্ন কর্মকর্তার নাম ও পদবি উলেস্নখ করে খোঁজাখুঁজি করে হত্যার হুমকি দেয়। তারা সরকারকে ক্ষমতাচু্যত করতে পরিকল্পিতভাবে বিটিভি ভবনে থাকা ৫০ কোটি টাকার সরকারি মালপত্র ভাঙচুর ও ক্ষতি করেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি সম্প্রচার কাজে নিয়োজিত পোর্টেবল ডিএসএনজি সিস্টেমের সব যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া ১৭টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ৯টি গাড়ি ভাঙচুর এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২১টি মোটর সাইকেল ভাঙচুর করে তারা। যানবাহন শাখার ১১টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ১০টি মনিটর, আটটি স্মার্ট টিভি, ১৬টি সিপিইউ, ১৭টি ইউপিএস, চারটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন, ৪০টি সিসি ক্যামেরা, ৩০টি সিলিং ফ্যান, পাঁচটি কম্পিউটার, স্টুডিওর ক্যামেরা, ট্রাইপড, ১০০টি টিভি সেট এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ডোনার রিমান্ডে
এদিকে রাজধানীর বনানীর সেতু ভবনে হামলা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের এক দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শান্ত ইসলাম মলিস্নকের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আইনজীবী আব্দুস সালাম হিমেল এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিন আসামি ফরহাদ হালিমকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক আবু সাইদ মিয়া। এ সময় আসামিদের পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে একদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
গত ১৮ জুলাই সেতু ভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সেতু ভবনের কেয়ারটেকার রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় সেতু ভবনের ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে এজাহারে বাদী উলেস্নখ করেন।