জামিন পেলেন ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় গ্রেপ্তার ৫৬ এইচএসসি পরীক্ষার্থী

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর ঢাকা জেলা, রাজশাহী, গাজীপুর, নরসিংদী ও মাদারীপুরের বিভিন্ন থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার ৫৬ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। স্টাফ রিপোর্টার, অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য- কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ঢাকার বিভিন্ন থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার ৩৫ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। শনিবার দুপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) জেলার নাশির আহমেদ এ তথ্য জানান। শুক্রবার রাত ৯টা ১০ মিনিটে কারাগার থেকে বের হন শিক্ষার্থীরা। জামিনে মুক্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- আলী হোসেন, ইসমাইল, ইমরান, আব্দুল কাদের, নাফিজ, ইয়ামিন, আসিফ, সামাদ, এলাহি বক্স, সামি, তানজিল, আলউদ্দিন, আপু, ফয়সাল, সামিউল, শাখাওয়াত হোসেন, রনি, রাশেদুল হাসান, আসিফ, আলআমিন, শাকিল, জাবের, রুহুল আমিন, রাহাত উদ্দিন, তাহসিন, তুহিন, নাহিদ, মাসুদ রানা, শহিদুল ইসলাম, শিহাব, তাসরিফ, সাইদুল, আলিফ ও ইমান হোসেন। শনিবার আরও পাঁচজন শিক্ষার্থী জামিনে মুক্তি পান। নাশির আহমেদ জানান, এ পর্যন্ত ৩৫ জন শিক্ষার্থীকে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কারাগারে সামনে তাদের স্বজনরা অপেক্ষায় আছে। নিজ নিজ স্বজনরা তাদের বুঝে নিচ্ছেন। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-সিএমএম আদালতের বিচারক মো. রশিদুল আলম ৩৫ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন মঞ্জুর করেন। এদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিভিন্ন শ্রেণির ১৬৬ জন বন্দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। শনিবার সকালে ২৮ সদস্যবিশিষ্ট পুলিশ এস্কর্টের মাধ্যমে চারটি প্রিজনভ্যানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিভিন্ন মামলায় আটক ১৬৬ জন বন্দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এবং কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ স্থানান্তর করা হয়। রাজশাহীতে পাঁচ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন রাজশাহী অফিস জানায়, রাজশাহীতে ৫ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন দিয়েছেন আদালত। শনিবার রাজশাহীর অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম ও জেলার জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারক শফিউল আলম ও হাদিউজ্জামান তাদের জামিন দেন। তারা হলেন- আহনাফ আকিব অরণ্য, মো. রাব্বি, রাকিবুর রহমান, ইমরান ফরহাদ ও সৌরভ আলী। এদের মধ্যে দুইজন মতিহার, একজন বোয়ালিয়া, একজন গোদাগাড়ী ও একজনকে পুঠিয়া থানার নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী ইব্রাহীম হোসেন। নরসিংদীতে ৬ শিক্ষার্থীর জামিন নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নরসিংদী জেলা কারাগার, জেলা পরিষদ, পাঁচদোনা মুক্তিযোদ্ধা কমপেস্নক্সসহ সরকারি-বেসরকারি ৯টি প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় নরসিংদী সদর থানা ও মাধবদী থানায় দায়ের হওয়া নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার ৬ এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত। শুক্রবার নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদ নিয়াজীর আদালতে শুনানি শেষে শিক্ষার্থীদের জামিন মঞ্জুর করা হয়। জামিনপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- মিনহাজুল ইসলাম আব্দুলস্নাহ, লিমন মিয়া, মির্জা সাদিকুর রহমান, সামিউলস্নাহ সাকিব, রাতুল ভূঁইয়া ও আশরাফুল ইসলাম। নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী নাজমুল ইসলাম বলেন, সরকার চায় না শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন অকালেই ঝরে পড়ুক। তাইতো সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী যদি কেউ গ্রেপ্তার হয়ে থাকে ওই সব পরীক্ষার্থীকে জামিনে মুক্তির বিষয়ে সরকার আইনি সহায়তা প্রদান করবে। মাদারীপুরে কারাগার থেকে ৩ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মুক্তি স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বাস ও সরকারি অফিসে ভাঙচুরের অভিযোগে মাদারীপুর সদর থানায় দায়ের মামলায় গ্রেপ্তার তিন এইচএসসি পরীক্ষার্থী জামিন পেয়েছেন। শনিবার দুপুরে মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের বিচারক মো. সাজিদুল হাসান চৌধুরী এই আদেশ দেন। তিন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিনের আদেশ আদালত থেকে শনিবার দুপুরে জেলা কারাগারে পৌঁছলে জেল সুপার তুহিন কান্তি খান ও জেলার মো. আতিকুর রহমান তাদেরকে মুক্তি প্রদান করেন। মুক্তি প্রাপ্তরা হলেন- মাদারীপুর সদর উপজেলার চরগোবিন্দপুর গ্রামের মজিবর শিকদারের ছেলে রাব্বি শিকদার, পশ্চিম রঘুরামপুর গ্রামের নূর মোহাম্মদ সরদারের ছেলে নূর আলম সরদার এবং শহরের সরদার কলোনি এলাকার মনির কাজীর ছেলে তানভীর কাজী। রাব্বি ও নূর আলম খোয়াজপুর সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তানভীর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। মুক্তি পাওয়া পরীক্ষার্থী রাব্বি, তানভীর ও নূর আলম জানান, 'কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশ আমাদের প্রথমে থানায় ধরে নিয়ে আসে। পরে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। কারাগার কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে কোন খারাপ ব্যবহার করে নাই। অন্যান্য আসামিদের থেকে আমাদের তিনজনকে আলাদা করে রেখেছে। আমাদের সবসময় খোঁজখবর নিয়েছে। আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করেছে। আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।' কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ৭ শিক্ষার্থী গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় মামলায় গ্রেপ্তার সাতজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী গাজীপুরের কাশিমপুরের দুই কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জ্যৈষ্ঠ সুপার মো. আমিরুল ইসলাম জানান, ঢাকায় কোটা আন্দোলন চলাকালে গ্রেপ্তার হওয়া হেলাল উদ্দিন নামে এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে শনিবার সকালে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারা কর্মকর্তা জানান, এ কারাগারে ৯ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন। জামিনের কাগজপত্র পাওয়ার পর যাচাই-বাছাই শেষে তাদের মুক্তি দেওয়া হবে। এছাড়া কাশিমপুর কেন্দ্রীয় হাই সিকিউরিটি কারাগারের এক কর্মকর্তা জানান, শনিবার সকালে তিনজন এবং বিকালে আরো তিনজন পরীক্ষার্থীকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এ ছয়জনের সবাই নরসিংদী কারাগার থেকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে এসেছিলেন। তাদের জামিনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে শনিবার মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত এসব শিক্ষার্থীকে তাদের পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।