শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। তিনি রাজনৈতিক সংলাপ আয়োজনের মাধ্যমে এই সংকট নিরসন করে দ্রম্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নীল দল আয়োজিত এক সমাবেশে এই আহ্বান জানান তিনি।
শিক্ষক সমাবেশে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, 'আমি শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ দেব, কারণ তারা জাতিকে আরেকটা শিক্ষা দিল এবং ইতিহাসের একটি অংশ হলো। শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে, কীভাবে নিরস্ত্র উপায়ে দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে ন্যায়সঙ্গত যৌক্তিক অধিকার আদায় করতে হয়। এখন যে সংকট এটি জাতীয় সংকট, এটি কোনো অ্যাকাডেমিক সংকট না। এই সংকট তৈরি হয়েছে কিছু রাজনৈতিক স্থবিরতার কারণে। এই সংকটের সমাধান করা প্রয়োজন।'
তিনি বলেন, 'আমরা ছাত্রশূন্য ক্যাম্পাস দেখতে চাই না। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে এসে যেন জাতি গঠনের সুযোগ পায়, সেটিকেই আমাদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে এখন যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থবিরতা সেটি থেকে কাটিয়ে উঠতে জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এ মুহূর্তে দরকার জাতীয় ঐক্যের এবং সে জন্য সংলাপের বিকল্প নেই। কারণ সহিংসতার মধ্য দিয়ে কোনোকিছু অর্জিত হবে না। এই আন্দোলন বর্তমানে একটি রাজনৈতিক রূপ লাভ করেছে। ছাত্র আন্দোলনের
মধ্যে রাজনীতি ঢুকে পড়েছে। এই রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক সংলাপ করতে হবে।'
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, 'যারা শিক্ষার্থীদের হত্যা করেছে, এ দেশের জনগণকে হত্যা করেছে আমরা তাদের বিচার চাই। সরকার তদন্ত কমিটি করেছে। সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। আমি মনে করি, সঠিক বিচার এ দেশের মানুষ পাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলব, সরকারকে বলুন; হত্যাকারীদের বিচার করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে।'
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন নীল দল সমর্থিত শিক্ষকরা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষশক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নীল দল। এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে শিক্ষার্থীসহ অনেকেই নিহত ও আহত হয়েছেন। অনাকাঙ্ক্ষিত এ সব প্রাণহানির ঘটনায় নীল দল গভীরভাবে শোকাহত। আমরা নিহতদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। একইসঙ্গে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহতদের দ্রম্নত সুস্থতা কামনা করছি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর নীল দল কয়েকটি দাবি জানায়। সেগুলো হলো- কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষি সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের অবিলম্বে শান্তির ব্যবস্থা করতে হবে; আবাসিক হলগুলোতে বৈধ এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিশ্চিতে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে; আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের জীবনমানের উন্নয়ন, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং যেকোনো ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন রোধে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারগুলোতে শুধু বৈধ শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিশ্চিত করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে; ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
দাবিগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করে দ্রম্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নীল দল।