কোনো সান্ত্বনাতেই কান্না থামছে না কনস্টেবল সুমনের স্ত্রী-মেয়ের

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
খুলনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ সদস্য সুমনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম -সংগৃহীত
ছয় বছর বয়সি স্নিগ্ধা বারবার খুঁজছে তার বাবা সুমন ঘরামীকে; কোনো সান্ত্বনাতেই থামছে না সুমনের স্ত্রীর কান্না। পুলিশ কর্মকর্তা, আত্মীয়স্বজন যাকেই পাচ্ছেন তার কাছেই স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন তিনি। খুলনায় কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ কনস্টেবল সুমনের বাবা মুক্তিযোদ্ধা সুশীল ঘরামীও শোকে প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। মা গীতা রানীও পাগলপ্রায়। ৩৩ বছর বয়সি সুমনের বাড়ি বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কিসমত মালিপাটন গ্রামে। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে তিনি ভাড়া থাকতেন খুলনা নগরীর বয়রা এলাকায়। শুক্রবার রাতে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নিহত সুমনের স্ত্রী মিতু বিশ্বাস স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আহাজারি করছেন। তার আহাজারি দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারছেন না আত্মীয়স্বজন ও পুলিশ সদস্যরা। রাতে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক ও খুলনা রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মঈনুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দেন। কিন্তু কোনো সান্ত্বনাতেই শান্ত হতে পারেননি মিতু। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক জানান, সুমন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সোনাডাঙ্গা জোনের সহকারী কমিশনার সৌমেন বিশ্বাসের দেহরক্ষী ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলনার মোহাম্মদনগর এলাকায় আন্দোলনকারীদের পিটুনিতে নিহত হন তিনি। সহকারী কমিশনার সৌমেন বিশ্বাস বলেন, গলস্নামারী কাঁচাবাজারে সুমন এবং তিনি একসঙ্গে ছিলেন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে তারা দলছুট হয়ে যান। প্রাণ বাঁচাতে তিনি ইউনিফর্ম খুলে প্রায় চার ঘণ্টা ড্রেনের মধ্যে ছিলেন। এর কোনো এক সময় আন্দোলনকারীরা কনস্টেবল সুমনকে নৃংশসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি পালন করতে মিছিল নিয়ে শিববাড়ী থেকে সোনাডাঙ্গা থানা মোড় হয়ে গলস্নামারী আসেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও দেখা যায়। বিকাল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি দল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে অবস্থান করে। আরেকটি দল জিরো পয়েন্টের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ মিছিল লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এরপর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ সাঁজোয়া যান নিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে এগোতে বাধা দেয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে পুলিশ পিছু হটে। এ সময় শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে গলস্নামারী সেতুর ওপর অবস্থান নেয়। পুলিশ গলস্নামারী মোড় থেকে দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা চালায়। পুলিশ কমিশনার মোজাম্মেল বলেন, 'সংঘর্ষ চলাকালে আন্দোলনকারীরা কনস্টেবল সুমনকে বেধড়ক মারপিট করে। আহত অবস্থায় খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।' কমিশনার বলেন, আন্দোলনকারীদের হামলায় অন্তত আরও ৩০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২-৩ জনের অবস্থা গুরুতর। এ সময় পুলিশের একটি গাড়িতেও আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। অন্যদিকে পুলিশের হামলায় অন্তত ৫০ জন আহতসহ ৯ জন গুলিবিদ্ধ হন বলে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। এদিকে, খুলনায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ কনস্টেবল সুমন ঘরামীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। লবণচরা থানার এসআই মোস্তফা সাকলাইন বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে লবণচরা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় ১ হাজার থেকে ১২শ' জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার নেই বলে জানান লবণচরা থানার ওসি মমতাজুল হক। পুলিশ কর্মকর্তা, আত্মীয়স্বজন যাকেই পাচ্ছেন তাকে জড়িয়ে ধরে তার স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন। তার আহাজারি দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারছেন না আত্মীয়স্বজন ও পুলিশ সদস্যরা।