বিয়ের আট মাসেই বিধবা হলেন মুক্তা

প্রকাশ | ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুর প্রতিনিধি
আবদুল হান্নান
বিয়ের মাত্র আট মাসেই স্বামীকে হারিয়ে বিধবা হলেন অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ মুক্তা আক্তার। পৃথিবীতে আসার আগেই বাবাকে হারাল এক অনাগত সন্তন। আর সন্তানকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যান মা রশিদা। কোটা সংস্থার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের মৈশামুড়ার আব্দুল হান্নানের পরিবার ও স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে আব্দুল হান্নান সবার ছোট। মাত্র আট মাস হলো বিয়ে করে নতুন বৌকে ঘরে তুলেছিলেন। হান্নানের সাত মাসের স্মৃতি নিয়ে কাঁদছেন স্ত্রী আর মা-বাবা। তার স্ত্রী এখন অন্তঃসত্ত্বা। হান্নানের সাত মাসের স্মৃতি নিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে তার স্ত্রী আর মা-বাবা। গত ১৮ জুলাই ২৮ বছর বয়সে রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায় গুলিতে নিহত হন আব্দুল হান্নান। তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের মৈশামূড়া গ্রামের বড় বাড়ির আমিন মিয়ার ছেলে। তিনি ঢাকার উত্তর বাড্ডায় বেকারীর লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুক্তা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'গুলি খাওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা আগে মুঠোফোনে কথা হয় হান্নানের সঙ্গে। সে বলেছে, এখন দেশের অবস্থা ভালো না। টাকা পাঠানো যাবে না। ননশের (ননদ) কাছ থেকে টাকা এনে বাজার করিও, পরিস্থিতি ভালো হলে টাকা পাইবা। আর বলেছিল বাসায় গিয়ে কথা বলব। কিন্তু আর কথা হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যে ফোন আসে হান্নান মারা গেছে।' নিহতের বাবা আমিন ও মা রশিদা বেগম বলেন, 'আমরা জেনেছি, ওই দিন মার্কেটিংয়ের কাজ শেষে মধ্য বাড্ডা হয়ে কারখানায় ফিরছিলেন আব্দুল হান্নান। এসময় কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। একদিকে পুলিশ অপর দিকে হামলাকারীরা। মাঝখানে পড়ে যান হান্নানসহ একাধিক ব্যক্তি। ওই সময় গুলি ও ইট-পাটকেলের আঘাতে গুরুতর আহত হন বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে আব্দুল হান্নানসহ ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। পরে পুলিশ নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে হাসপাতাল থেকে মরদেহ বুঝে পেয়ে হাজীগঞ্জে নিজ বাড়িতে তার দাফন করা হয়।' স্থানীয় বাসিন্দা সুমন জানান, নিহত আব্দুল হান্নান ধার্মিক ছিলেন। সে সততার সঙ্গে জীবনযাপন করত। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। সে গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী নুরুর রহমান বেলাল বলেন, 'হান্নানের এমন মৃতু্য আমাদের প্রত্যাশা ছিল না। সে একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন। আমরা তার পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি।'