দেশজুড়ে শ্রাবণের যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তা দুদিন ধরে থেমে থেমে চললেও আগামী সোমবার থেকে বাড়বে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলছে, মৌসুমি বায়ুর কারণে বঙ্গোপসাগরে সঞ্চরণশীল মেঘমালা তৈরি হওয়ায় উপকূলজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। দেশের চার নদী বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর পাহাড়ধসের সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে চট্টগ্রামে।
এদিকে উপকূলজুড়ে গত পাঁচ দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার জেলার নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। জেলার চকরিয়া, রামু ও পেকুয়া উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের এক লাখের অধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। পাহাড়ি ঢলের তোড়ে মাতামুহুরি ও বাকখালী নদীর কমপক্ষে ১০টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে ঢলের পানি ঢুকে এসব এলাকা পস্নাবিত হয় বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এদিকে ভারী বৃষ্টিতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কলাবাগান এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। চেঙ্গী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা সদরের নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। বিশেষ করে গঞ্জপাড়া, অপর্ণা চৌধুরীপাড়া, রাজ্যমনিপাড়া, কালাডেবা, বটতলী, ফুটবিল এলাকার নিচু এলাকায় পানি উঠেছে এবং অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। অব্যাহত বৃষ্টির কারণে জেলা সদরের নিম্নাঞ্চলের বেশ কয়েকটি পরিবার বন্যার কবলে পড়েছে। বাগেরহাটের শরণখোলায় লাগামহীন বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। ভারী বৃষ্টিতে শত শত একর আমন ধানের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বৃষ্টির পানিতে নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়ে নাইক্ষ্যংছড়িতে দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এদিকে বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে নেত্রকোনার জনজীবন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ।
শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকায় বর্ষণ শুরু হয়। থেমে থেমে এই বর্ষণ চলতে থাকে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মলিস্নক শুক্রবার বলেন, 'রোববার বিকাল পর্যন্ত বৃষ্টি কম থাকবে। তারপর ৫ তারিখ থেকে আবার বৃষ্টিপাত বাড়বে।'
শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীর মাইজদীকোটে দেশের সর্বোচ্চ ২৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে। এ ছাড়া লক্ষ্ণীপুরের রামগতিতে ২৭২, পটুয়াখালীতে ২১৬, বাগেরহাটের মোংলায় ১৮২, ভোলায় ১৪৭, চট্টগ্রামের আমবাগানে ১৩৯, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ১৩৭, ফেনীতে ১৩৪ মিলিমিটারসহ প্রায় সারাদেশেই কমবেশি বৃষ্টির খবর দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারী, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারী এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হলে তাকে বলা হয়ে থাকে অতিভারী বৃষ্টিপাত।
এদিকে আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এতে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া প্রবাহিত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে। সে তুলনায় ঢাকা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীতে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কম।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা ও মোংলাবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। দেশের উপকূল থেকে শুরু করে মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে সঞ্চরণশীল মেঘ ও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে দেশের বেশির ভাগ নদীবন্দরকে ২ নম্বর স্থানীয় নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির আশঙ্কায় চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।