জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির (ঘাদানিক) সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেছেন, আমরা ৩৩ বছর ধরে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারকে বলছি। দেরিতে হলেও আজকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত এসেছে, তাকে সাধুবাদ জানাই।
বৃহস্পতিবার বিকালে জামায়াত ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এরপর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
শাহরিয়ার কবির বলেন, '১৯৭১ সালে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে ও পরবর্তীকালে ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অপরাধে ১৯৭২ সালে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন গভীর দূরদৃষ্টি এবং জাতির বৃহত্তর কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেওয়ার মতো দুষ্কর্ম করেন। জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতি করে সরকার পরিচালনা করেন জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী।'
জামায়াতে ইসলামী সরকারে থাকুক কিংবা সরকারের বাইরে থাকুক, যখনই সুযোগ পেয়েছে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করেছে অভিযোগ করে নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেন, 'তারা যখনই সুযোগ পেয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস ও বিশ্বাসকে আঘাত করেছে। জামায়াতে ইসলামী বারবার ছাত্র হত্যা করেছে, মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীকেও তারা হত্যা করেছে। তাদের রাজনীতির মূল বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি। জামায়াতে ইসলামীকে ৭১-এর গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্যও নিষিদ্ধ করা যায়, আবার সন্ত্রাসবিরোধী আইনেও এই দলটিকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা যায়।'
জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হয়েছে বলে মনে করেন শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, 'আমরা বহুদিন ধরে এসব কথা বললেও তা কার্যকর হয়নি। অনেক দেরিতে হলেও সরকার এবার সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন খেয়াল রাখতে হবে দিনে দিনে জামায়াতের শিকড় কিন্তু অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়েছে। বিএনপিতে জামায়াত আগেই অনুপ্রবেশ করে, ফলে তারা এখন জামায়াতের ভাষাতেই কথা বলে। তবে বিএনপিতেই তারা থেমে নেই, জামায়াত এখন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগেও অনুপ্রবেশ করেছে। সরকারি সব ধরনের চাকরিতে জামায়াতের আদর্শের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ১৯৮০ সাল থেকে তারা এ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে, ফলে এখন দেখা যায় সর্বক্ষেত্রে জামায়াতের উপস্থিতি।'
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জামায়াতে ইসলামীর শক্ত লবিস্ট আছে উলেস্নখ করে নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেন, 'জামায়াতের ইউরোপ-আমেরিকায় শক্ত লবিস্ট আছে, তাদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক খুবই শক্তিশালী। তারা প্রচুর টাকা খরচ করে লবিস্টদের পেছনে। আমাদের সরকার এ জায়গায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। আমরা যখনই জামায়াতকে নিষিদ্ধের পথে এগোই তখন আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দরকার নেই। তারা মডারেট ইসলামি দল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের থাকা উচিত। আমাদের বুঝতে হবে জামায়াত কোনো সাধারণ রাজনৈতিক দল নয়, তারা একটি সন্ত্রাসী দল। আল-কায়েদা, আইএসআইয়ের মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতের গভীর যোগাযোগ রয়েছে। আমার বিভিন্ন লেখায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত রয়েছে।'
জামায়াতের অভিঘাত মোকাবিলা করার জন্য জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, 'তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য একটা উচ্চপর্যায়ের কমিশন গঠন করা দরকার। সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের কমিশন করে সন্ত্রাসের খতিয়ান তুলে ধরে বোঝাতে হবে তারা যে ধরনের সন্ত্রাসে যুক্ত তা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বের জন্য হুমকি।'