স্বল্প দূরত্বে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু

প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সহিংসতায় ১৪ দিন বন্ধ থাকার পর স্বল্প দূরত্বে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত দুটি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায় -ফোকাস বাংলা
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৪ দিন বন্ধ থাকার পর স্বল্প দূরত্বে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত দুটি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। এ তথ্য নিশ্চিত করে কমলাপুর স্টেশনের মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, সকালে দুটি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে গেছে। আরও কয়েকটি ট্রেন কমলাপুর ছেড়ে যাবে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ কয়েকটি শহর থেকে আশপাশের গন্তব্যে কমিউটার ও লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে তিতাস কমিউটার, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, জামালপুর কমিউটার, তুরাগ কমিউটার, কর্ণফুলী কমিউটার ও নারায়ণগঞ্জ কমিউটার চলাচল করবে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে কর্ণফুলী কমিউটার, সাগরিকা কমিউটার ও নাজিরহাট কমিউটার; ময়মনসিংহ থেকে মোহনগঞ্জ এবং ঝারিয়া রুটে দুইদিক থেকেই লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আর খুলনা-ঈশ্বরদী, রাজশাহী-রহনপুর, খুলনা-বেনাপোল, বেনাপোল-মোংলা, রাজবাড়ী-ভাঙ্গা এবং রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া রুটে ১২টি লোকাল ট্রেন চলাচল করবে। তবে আন্তঃনগর যাত্রীবাহী ট্রেন কবে থেকে চলবে সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা। রেলওয়ে সূত্র জানায়, তেলবাহী ট্রেন গত (২৫ জুলাই) শুক্রবার থেকেই চলাচল করছে। বুধবার চলাচল করেছে মালবাহী কিছু ট্রেন। ভারত থেকে পাথরবাহী দুটি ট্রেনও এ দিন চলাচল করেছে। বিদু্যৎ কেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহের তেলবাহী ট্রেনও চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারফিউ শিথিলের পাঁচ ঘণ্টায় বেশি দূরত্বের আন্তঃনগর ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ অন্যান্য অঞ্চলে ট্রেন যেতেই পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। ফলে কারফিউ শিথিলের সময়ের মধ্যে এই ট্রেনগুলোর ফিরতি যাত্রা সম্ভব নয়। চট্টগ্রামে ট্রেন চলাচল শুরু, যাত্রী কম এদিকে ১২ দিন পর চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। প্রথম দিন বৃহস্পতিবার থেকে শুধু নির্ধারিত লোকাল ট্রেনগুলো চলাচল করছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় যাত্রী ছিল কম। ট্রেনগুলোয় ছিল বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে গত ২০ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আর ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ ১৯ জুলাই থেকে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯ জুলাই মধ্যরাতে কারফিউ জারি হয়। এমন পরিস্থিতিতে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তবে কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়ানো হলে ট্রেন চলাচলের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। গত মঙ্গলবার ঢাকার রেল ভবনে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে ১ আগস্ট থেকে স্বল্প দূরত্বের ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত দুটি ট্রেন চট্টগ্রাম ছেড়েছে। এর মধ্যে সকাল ৮টায় চাঁদপুরগামী সাগরিকা কমিউটার ছেড়ে যায়। আর সকাল পৌনে ১০টায় ছাড়ে ঢাকাগামী কর্ণফুলী কমিউটার। এ ছাড়া বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রাম স্টেশন ছাড়ে নাজিরহাট লোকাল। সাধারণত স্বল্প আয়ের লোকজন এসব ট্রেন ব্যবহার করে থাকেন। আবার কেউ কেউ চাকরি ও ব্যবসার প্রয়োজনে এসব ট্রেনে করে নিত্যদিন আসা-যাওয়া করেন। আর নাজিরহাট ট্রেনে করে স্থানীয় কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য এনে নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। ঢাকাগামী কর্ণফুলী কমিউটার ট্রেনে করে কুমিলস্নার নাঙ্গলকোট যাবেন গাড়ি মেরামত কারখানার শ্রমিক মো. ইব্রাহিম। ট্রেন ছাড়ার আগে তিনি বলেন, ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় খুশি। বাসে করে গ্রামের বাড়িতে যেতে হলে অন্তত ৫০০ টাকা লাগে, কিন্তু ট্রেনে যেতে লাগে ৬০ টাকা। শুধু ভাড়া নয়, বাসে করে যেতে হলে কয়েকবার গাড়ি পাল্টাতে হয়। ঝক্কিঝামেলা তো আছেই। ট্রেনে নির্বিঘ্নে যাওয়া যায়। একই ট্রেনের যাত্রী ছিলেন আতিকুর রহমান। তার সঙ্গে ছিল স্ত্রী ও মেয়ে। তিনি বলেন, নিরাপদে যাতায়াতের জন্য ট্রেন তার প্রথম পছন্দ। যদিও এখনো পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। তারপরও কম ভাড়া ও ঝামেলা এড়াতে ট্রেনে করে যাচ্ছেন। এদিন সকালে চট্টগ্রাম স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেন চলাচল শুরুর প্রথম দিনে স্টেশনে প্রাণ ফেরে। এতদিন ফাঁকা ও নীরব ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কুলি-মজুরদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। ট্রেন ধরার জন্য আসতে শুরু করেন যাত্রীরা। পস্ন্যাটফর্মে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল। ট্রেনেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন। চট্টগ্রাম স্টেশনের পস্ন্যাটফর্ম স্টেশন মাস্টার মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, প্রথম দিনেই সবক'টি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে স্টেশন ছেড়েছে। যাত্রী ও ট্রেনের নিরাপত্তায় ট্রেনগুলোয় ১৪ জন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য আছেন। তবে যাত্রা শুরুর প্রথম দিন হওয়ায় যাত্রী ছিল খুবই কম। হয়তো ধীরে ধীরে বাড়বে।