রাষ্ট্রীয় চুক্তি ও আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৪৯৮ কোটি টাকার সার ও দুই হাজার সৌর বিদু্যৎচালিত সেচ পাম্প গ্রিড ইন্টিগ্রেশনসহ বেশ কয়েকটি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদু্যৎ বিভাগের দুটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুটি, বাংলাদেশ পলস্নী বিদু্যতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) একটি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি। এতে ব্যয় হবে ৮৮০ কোটির টাকার বেশি।
বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাছান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিদু্যৎ বিভাগ থেকে সৌর বিদু্যৎচালিত সেচ পাম্প গ্রিড ইন্টিগ্রেশন সংক্রান্ত ক্রয়ের দুটি প্রস্তাব সভায় উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রিসভা কমিটি আলোচনার মাধ্যমে দুটি প্রস্তাবই অনুমোদন দিয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১৫৫ কোটি ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭৬ টাকা।
এর মধ্যে একটি প্রস্তাবে, 'সৌর বিদু্যৎচালিত পাম্পের মাধ্যমে কৃষি সেচ (২য় সংশোধিত)' প্রকল্পের আওতায় ৭০৫টি সৌর বিদু্যৎচালিত সেচ পাম্প গ্রিড ইন্টিগ্রেশন ক্রয়ের প্রস্তাব করা হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশ করা রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে সিলিকন এবং জেডটিটি, ঢাক-কে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪ হাজার ৭৪ টাকা। এই ব্যয়ের বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
অন্য এক প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে 'সৌর বিদু্যৎচালিত পাম্পের মাধ্যমে কৃষি সেচ (২য় সংশোধিত)' প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ২৯৫টি সৌর বিদু্যৎচালিত সেচ পাম্প গ্রেড ইন্টিগ্রেশন ক্রয় সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে মেসার্স ইসি এবং ডবিস্নউআরইসিএল, ঢাকা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১০০ কোটি ৫৯ লাখ ৪২ হাজার ৩১ টাকা।
৪৯৮ কোটি টাকার সার আমদানি করবে সরকার
রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে ৭০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানি করবে সরকার। একইসঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) বাংলাদেশ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনা হবে।
এসব সার কিনতে ব্যয় হবে ৪৯৮ কোটি ৭ লাখ ৯১ হাজার ৮০০ টাকা। এর মধ্যে আরব আমিরাত থেকে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া সার এবং সৌদি আরব থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানি করা হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক অ্যাসিড ৬৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সৌদি আরবের মা'আদেন থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবটি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এই সার আমদানি করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ২৫৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রতি মেট্রিক টন ডিএপি সারের দাম ধরা হয়েছে ৫৫০ মার্কিন ডলার।
বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সার কেনা সংক্রান্ত দুটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। দুটি প্রস্তাবই অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এর মধ্যে একটি হলো রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগেস্নাব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া আমদানি। এই সার আমদানি করতে মোট খরচ হবে ১২১ কোটি ৪৮ লাখ ২১ হাজার ৮০০ টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ধরা হয়েছে ৩৪৩.১৭ মার্কিন ডলার।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অপর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে কাফকো থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ১১৬ কোটি ৯৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টনের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৩০.৫০ মার্কিন ডলার।
এছাড়া বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক অ্যাসিড আমদানির প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রিসভা কমিটি আলোচনা করে ৬৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকায় এই ফসফরিক অ্যাসিড আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন ফসফরিক অ্যাসিডের মূল্য ধরা হয়েছে ৫৭০ মার্কিন ডলার।
চট্টগ্রামের টিএসপিসিএল-এর জন্য এই ১০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক অ্যাসিড আমদানি করা হবে। টিএসপি সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ফসফরিক অ্যাসিড বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক অ্যাসিড আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি দরপত্র জমা পড়ে।
দরপত্রের ২টি প্রস্তাবই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশ করা রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেস্ট ইস্টার্ন, ঢাকা এই ১০ হাজার মেট্রিক টন ফসফরিক অ্যাসিড সরবরাহ করবে।
৭২ হাজার ৮৯৭ এসপিসি পোল কেনা হবে
বাংলাদেশ পলস্নী বিদু্যৎ বোর্ড (বাপবিবো)-এর বৈদু্যতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (খুলনা বিভাগ) শীর্ষক প্রকল্পের পৃথক তিনটি লটে মোট ৭২ হাজার ৮৯৭টি বৈদু্যতিক পোল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ২২৭ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার ১৯৩ টাকা।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পলস্নী বিদু্যতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন 'বাপবিবোর বৈদু্যতিক বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন (খুলনা বিভাগ)' শীর্ষক প্রকল্পের পৃথক ৩টি লটে বৈদু্যতিক পোলগুলো সংগ্রহ করা হবে। বাংলাদেশ সরকার, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে মোট তিন হাজার ৭৬ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটি ২০২১ সালের ৪ মে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির নির্ধারিত মেয়াদ ২০২১ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
বাপবিবোর আওতায় ৯টি পলস্নী বিদু্যৎ সমিতির (বাগেরহাট, যশোর-১, যশোর-২, ঝিনাইদহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, মেহেরপুর ও সাতক্ষীরা) এলাকায় পলস্নী বিদু্যতায়ন নেটওয়ার্কের আধুনিকায়ন ও ক্ষমতাবর্ধন, ক্রমবর্ধমান বিদু্যতের চাহিদা মিটানো, নিরবচ্ছিন্ন ও গুণগত মানসম্পন্ন বিদু্যৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, লট-১ এর আওতায় ২৪,৩০০টি পোল ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে তিনটি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড ৭৬ কোটি ৬৮ লাখ ১১ হাজার ৮৭৭ টাকা, কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ৭৭ কোটি ৯৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৯৭ টাকা এবং দাদা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড যৌথভাবে রয়্যাল গ্রিন প্রডাক্টস লিমিটেড অ্যান্ড পাশা পোলস লিমিটেড ৭৯ কোটি ৯৩ লাখ ২ হাজার ৪১৩ টাকা দর উলেস্নখ করে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেডের নাম সুপারিশ করে কমিটি এতে অনুমোদন দিয়েছে।
জানা গেছে, লট-২ এর আওতায় ২৪,৩০০টি পোল ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান সাড়া দেয়। এর মধ্যে চরকা এসপিসি পোলস লিমিটেড যৌথভাবে দাদা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, টিএসসিও পাওয়ার লিমিটেড এবং পাশা পোলস লিমিটেড ৭৬ কোটি ৬৫ লাখ ১ হাজার ৩৭২ টাকা, বিএ-টি পোলস লিমিটেড যৌথভাবে কনটেক কন্সট্রাকশন লিমিটেড. ৭৭ কোটি ৪৯ লাখ ১৮ হাজার ৫৯৯ টাকা এবং বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড ৭৯ কোটি ৬৫ লাখ ১১ হাজার ৬২৫ টাকা দর উলেস্নখ করে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চরকা এসপিসি পোলস লিমিটেড যৌথভাবে দাদা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, টিএসসিও পাওয়ার লিমিটেড এবং পাশা পোলস লিমিটেডের নাম সুপারিশ করেছে।
লট-৩ এর আওতায় ২৪,২৯৭টি পোলের জন্য দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। এর মধ্যে পোলস অ্যান্ড কনক্রিট লিমিটেড যৌথভাবে কনটেক কন্সট্রাকশন লিমিটেড, রয়্যাল গ্রিন প্রডাক্টস লিমিটেড এবং শেলটেক টেকনোলজি ৭৬ কোটি ৬১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪৩ টাকা, ক্যাসেল কন্সট্রাকশন লিমিটেড ৭৭ কোটি ৬৭ লাখ ৭৩ হাজার ৩৪১ টাকা এবং টিএসসিও পাওয়ার লিমিটেড যৌথভাবে একতা পোল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং ভিকার কনক্রিট প্রডাক্টস ৭৯ কোটি ৪৭ লাখ ১৭ হাজার ৬৫৭ টাকা দর উলেস্নখ করে। দরপত্র মূলায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে পোলস অ্যান্ড কনক্রিট লিমিটেড যৌথভাবে কনটেক কন্সট্রাকশন লিমিটেড, রয়্যাল গ্রিন প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং শেলটেক টেকনোলজির নাম সুপারিশ করে। কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।