বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১
এডিসের প্রজননস্থল ধ্বংস করা জরুরি

জলবায়ু পরিবর্তনে বর্ষায় বাড়ছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া

আলতাব হোসেন
  ০১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
জলবায়ু পরিবর্তনে বর্ষায় বাড়ছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্ষায় মশাবাহিত ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া বা পানিবাহিত কলেরা, ডায়রিয়ার মতো রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল এডিস মশাবাহিত প্রাণঘাতী রোগ ডেঙ্গু। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাল্টে গেছে মশাদের জীবনচক্র। এখন সারা বছরই দেখা যাচ্ছে এডিসের বিস্তার। সেই সঙ্গে অনেকটা ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে এডিস মশা।

সাধারণত বর্ষায় বাড়ে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ। কারণ, মশার প্রজনন মৌসুম হলো বর্ষাকাল। বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুতে ৩৪ শতাংশ ও ম্যালেরিয়ায় ১১ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয় বর্ষা মৌসুমে। হার্বার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হয় বলে প্রমাণ মিলেছে।

মিরপুর আলোক হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক ডা. আফরোজা বেগম বলেন, বর্ষায় ম্যালেরিয়া রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এডিস মশার কারণে ডেঙ্গু রোগ হয়। যা বর্ষাকালে- বালতি, ড্রাম, কূপ, গাছের গর্ত ও ফুলের মধ্যে প্রজনন ঘটায়। এই মশা কামড়ানোর ৪-৭ দিন পর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন রোগী। এর প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর ও অবসাদগ্রস্ত হওয়া। কয়েক বছর ধরে বর্ষায় চিকুনগুনিয়া প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এডিস অ্যালবপিকটাস মশা দ্বারা সৃষ্ট এই রোগ। বর্ষার ভাইরাল রোগ হচ্ছে চিকুনগুনিয়া। এই মশার প্রজাতি স্থির পানিতে বংশবৃদ্ধি করতে পারে এবং রাতে নয়, দিনেও এই মশা কামড়াতে পারে। তাই এ সময় মশাবাহিত রোগ থেকে সবারই সতর্ক হতে হবে। ঘরের আশপাশ পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি নিয়মিত মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। শিশুদের প্রতি বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, বর্ষার বৃষ্টির সঙ্গে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। বর্ষার বৃষ্টি ভবনের ছাদে, বারান্দায়, রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে এডিস মশার জন্য আদর্শ প্রজননক্ষেত্র তৈরি করে। মিরপুর, কলশী, আশুলিয়া, টঙ্গী, তেজগাঁও, গোরান, খিলগাঁও, মুগদা, মান্ডা, মানিকনগর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, দনিয়া, মতিঝিল, কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুর এলাকায় বেশি এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। ডেঙ্গু এড়াতে এডিস মশা প্রতিরোধে দেশব্যাপী বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। শুধু পানির পাত্র পরিষ্কার করাই যথেষ্ট নয়। বৃষ্টির পানি জমা ঠেকাতে আবর্জনাও পুঁতে ফেলতে হবে। অন্যথায় তা মশার প্রজননস্থলে পরিণত হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৫৫ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৩৩ জনই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। পাঁচজন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের, ৯ জন বরিশাল বিভাগের, চট্টগ্রাম সিটিতে একজন এবং সিটির বাইরে সাতজন। জুলাই মাসে দুই হাজার ১১৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত বছরের জুনে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ৯৫৬ থাকলেও জুলাইয়ে তা বেড়ে ৪৩ হাজার ৮৫৪ জনে পৌঁছায়।

চলমান বৃষ্টির কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বিষয়ে দ্রম্নত ব্যবস্থা না নিলে বর্ষায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাই এখনই এডিসের প্রজননস্থল ধ্বংস করা জরুরি। এডিস মশার একটা কামড় থেকেই ছড়ায় ডেঙ্গু রোগ। জানলে অবাক হবেন, শুধু বাংলাদেশ নয়; ডেঙ্গুর ছোবলে এখন পুরো বিশ্ব। ২০২৪ সালে বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে