চার দশকে সাড়ে ৫ লাখ গাছ বিলীন উদ্বিগ্ন বন বিভাগ
সৈকতে বিলীন হচ্ছে ঝাউগাছ, ভাঙছে পাড়
প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার
পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নামার আগেই সারি সারি সবুজের সমারোহ। দূর থেকে মনে হয় ঝাউগাছগুলো যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সবুজ বেষ্টনী হিসেবে পরিচিত সেই ঝাউবাগান এখন সাগরের আগ্রাসনের কবলে পড়েছে। সৈকতের ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার ঝাউগাছ। ভাঙন অব্যাহত থাকায় একদিকে সমুদ্র সৈকত সৌন্দর্য হারাচ্ছে। অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে সৈকতের জীববৈচিত্র্য। জিও ব্যাগ দিয়েও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সাগর তীরের অপরূপ ও নয়নাভিরাম দৃশ্যের এ সৈকতে গত চার দশকে ভাঙনে সাড়ে ৫ লাখেরও বেশি ঝাউ গাছ বিলীন হয়ে গেছে।
সচেতন মহলের দাবি, কক্সবাজার শহরটি সৌন্দর্য রক্ষার স্বার্থে সৈকতে নতুন করে ঝাউবাগান বনায়ন করা ও দ্রম্নত সময়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা।
সরেজমিন মঙ্গলবার সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, সমুদ্র সৈকতের সবুজ বেষ্টনী হিসেবে পরিচিত ঝাউবাগান এখন সাগরের আগ্রাসনের কবলে পড়েছে। এতে করে সৈকতের ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত ঝাউগাছ। সাগরের করাল গ্রাসে শহরের নাজিরারটেক, চরপাড়া, সমিতিপাড়া, ডায়বেটিক হাসপাতাল, শৈবাল পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত ঝাউবাগানে নেমে এসেছে মহাবিপর্যয়। সাগরের করাল গ্রাসে ভাঙন অব্যাহত থাকায় একদিকে সৈকত সৌন্দর্য হারাচ্ছে। অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে সৈকতের জীববৈচিত্র্য। জিও ব্যাগ দিয়েও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতি বছর বর্ষার সময় সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে অনেক স্থানে ঝাউগাছ সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে যেসব গাছ রয়েছে তাও রক্ষা করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া নতুন করে কোনো বাগান সৃজন না করায় দ্রম্নত হারিয়ে যাচ্ছে ঝাউবাগানের সৌন্দর্য। তবে বনবিভাগের কর্তৃপক্ষের দাবি ঝাউবাগান রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা।
সমিতিপাড়ার বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, ৮০ দশক থেকে সৈকতের বিভিন্ন অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে প্রতিবছর বর্ষায় ভাঙন আরও বেড়ে যায়। সৈকত সুরক্ষার জন্য নতুন করে সবুজাভ বনায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে এ ঝাউবাগান। সৈকতের হিমছড়ি থেকে উত্তরে নাজিরারটেক পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে এর বিস্তৃত। তবে সাগর পাড়ের বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্ট থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত বন বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সময় ১৯৯৬-৯৭ সালে ৬০ হেক্টর, ১৯৯৭-৯৮ সালে ২৫ হেক্টর, ১৯৯৮-৯৯ সালে ৫ হেক্টর, ২০০০-০১ সালে ৫ হেক্টর ও ২০০২-৩ সালে ৮ হেক্টর জমিতে ঝাউ গাছ রোপণ করা হয়েছে। সৃজিত ঝাউ গাছগুলো সামুদ্রিক জোয়ারের তোড়ে উপড়ে পড়ছে। পূর্ণিমার সামুদ্রিক জোয়ারে বেশি আঘাত হানে ঝাউগাছের বাগানে। ১৯৭৪ সালের পর থেকে কক্সবাজার সৈকতজুড়ে প্রায় সাত লাখ চারা রোপণ করা হয়। কিন্তু ভাঙন এবং অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা গাছ নিধনের কারণে বর্তমানে গাছের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজারে। এতে উদ্বিগ্ন বন বিভাগও।
কক্সবাজার পৌরসভা ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকতার কামাল জানান, বাগানের ৩০/৪০ ফুট উঁচু ঝাউ গাছ উপড়ে পড়েছে ঢেউয়ের তোড়ে। কলাতলী থেকে উত্তরে নাজিরারটেক পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা ঝাউগাছগুলো সামুদ্রিক উঁচু জোয়ারের পানিতে ক্রমশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নতুন বনায়ন সৃজন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সরওয়ার আলম জানান, বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। সাগরের করাল গ্রাসে তলিয়ে যাচ্ছে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। প্রতি বছরই বর্ষার সময়ে সাগরে জোয়ারের পানি বেড়ে ঝাউগাছ ভেসে যায়। এবারেও গত কিছুদিন ধরে জোয়ারের পানিতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ঝাউবাগান। ভাঙন রোধে গাইড ওয়াল ও টেকসই বনায়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিথুন ওয়াদ্দাদার জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় পানি ওভার-ফ্লু হচ্ছে। তীর ভাঙন প্রতিরোধে ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শিগগিরই অত্যাধুনিক ফ্লাড ওয়াল ও বস্নক নির্মাণ করা হবে।