কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনায় রাজশাহী বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন থানায় ৭০টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এর মধ্যে কয়েকটি মামলা করেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও। এসব মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩৬৩ অভিযুক্তকে। গ্রেপ্তারদের অধিকাংশই জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মী। গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঘরছাড়া বেশিরভাগ নেতাকর্মী। তবে বিএনপি-জামায়াত নেতারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতার সঙ্গে জড়িত নয় দাবি করলেও আইনশৃঙ্খলার সদস্যরা বলছেন, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা সবাই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় বিভিন্ন থানায় এখন পর্যন্ত ১০টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ১৪৮ জন। অজ্ঞাত অনেক আসামি রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন থানায় সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২০৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে। গ্রেপ্তার অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক বিজয় বসাক জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সহিংসতার ঘটনায় বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন থানায় সোমবার পর্যন্ত ৭০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ৯৭০ জন। আর গ্রেপ্তার হয়েছে ১ হাজার ৩৬৩ জন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও অনেক আসামি রয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার অনেক নেতাকর্মী ঘরছাড়া হয়েছেন। ঘরছাড়া নেতাকর্মী নিজেদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রাখছেন। নিজ পরিবারের সদস্যরা প্রয়োজনমতো যোগাযোগও করতে পারছেন না। সুযোগ বুঝে কেউ বাসায় এসে মাঝেমধ্যে কোনো রকম দেখা করে চলে যাচ্ছেন। এসব নিয়ে ঘরছাড়া নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যরাও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
বিএনপি-জামায়াতের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, কোটা আন্দোলন ঘিরে গোদাগাড়ীতে কোনো আন্দোলন বা সহিংসতা হয়নি। গোদাগাড়ীর পরিবেশ শান্ত ছিল। কিন্তু কোটা আন্দোলনের সহিংসতা ইসু্যকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের তালিকা করে অভিযান চালানো হচ্ছে। এতে অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে মামলার আসামি দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হচ্ছে। অনেক নেতাকর্মী পরিবার-পরিজন ছেড়ে আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারাদেশে যে সহিংসতা হয়ে তার সঙ্গে জামায়াত-শিবির জড়িত নয় বলে দাবি করে রাজশাহী জেলা পশ্চিম জামায়াতের সহ-সেক্রেটারি ড. মোহাম্মদ ওবাইদুলস্নাহ বলেন, কোটা আন্দোলন ইসু্যকে কেন্দ্র করে জেলায় প্রায় ৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকে ঘরছাড়া হয়েছেন। এই ইসু্যকে কেন্দ্র করে পুলিশ জামায়াতের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানি করছে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে ড. মোহাম্মদ ওবাইদুলস্নাহ বলেন, বহুদিন থেকেই তো এসব বলে আসছেন; এটা নতুন কিছু না। তবে সংবিধানে লেখা আছে প্রত্যেক নাগরিক দেশে নিজ নিজ ধর্ম ও রাজনীতি স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে। ইসলামেও স্বাধীনভাবে নিজ ধর্ম ও রাজনীতি করার কথা উলেস্নখ রয়েছে; এটা হলো প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার।
রাজশাহী জেলা পশ্চিম জামায়াতের আমির অধ্যাপক আব্দুল খালেক বলেন, 'আমাদের নেতাকর্মীদের কোনো কারণ ছাড়াই গ্রেপ্তার করছে। তারা নিজেদের বাড়িতে থাকতে পারছে না।'
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ইশা বলেন, গত ১৯ জুলাই বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হামলা করে। কিন্তু উল্টো আমাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা পুলিশের গাড়িতে হামলা করেছে আর মামলার আসামি করা হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীর। এভাবে বিএনপির নেতাকর্মী মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
র?্যাব-৫-এর অধিনায়ক ফিরোজ কবীর জানান, 'কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজশাহীতে বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবির সরাসরি জড়িত। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যে সেটি জানা গেছে। আমরা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে ৫০ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছি। এদের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী ছাড়াও ভাড়াটে কিছু সন্ত্রাসীও রয়েছে। যাদের বিএনপি-জামায়াতের ভাড়াটে হিসেবে সহিংসতা করেছে।