চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা, সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশ | ৩১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে চোরাগোপ্তা হামলা হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এ বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোটাবিরোধী আন্দোলন এখন আর ছাত্রদের হাতে নেই। এ আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ছদ্মবেশে এই আন্দোলনে প্রবেশ করে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছে। আগামী দিনে তারা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টার্গেট করে চোরাগোপ্তা হামলা করতে পারে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপস্নব কুমার সরকার বলেন, 'ছাত্রদের আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন ঢুকে নাশকতা করছে। তারা আরও নাশকতা করার চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি করার চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত হাতে দেশবিরোধী এই চক্রকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। রাস্তায় নেমে কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার সুযোগ দেওয়া হবে না।' সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৭, ১৮ ও ১৯ জুলাই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক তান্ডব চালানো হয়। রাজধানী ঢাকায় রাষ্ট্রীয় 'কেপিআই'ভুক্ত প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ একাধিক স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ করা হয়। গোয়েন্দা-সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ঢুকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালান। ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারি ও ২০ জুলাই সকাল থেকে সেনা মোতায়েন করা হলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তারা আরও জানান, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী এখন চোরাগোপ্তা হামলার পরিকল্পনা করছে। তারা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয় চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের টার্গেট করে হামলার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের। পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি কোটা আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতায় হতাহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বেশিরভাগই কর্মক্ষেত্র থেকে বাসায় যাওয়ার পথে হামলার শিকার হয়েছেন। পুলিশ সদস্যদের আটক করে শরীর তলস্নাশি করে পরিচয়পত্র পেয়ে তারপর মারধর করা হয়েছে। এজন্য সাধারণ পুলিশ সদস্যদের মনেও কিছুটা ভীতির সঞ্চার হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও একা একা পুলিশ সদস্যদের চলাফেরা করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ২৯ জুলাই কর্মসূচিতেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের চেয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ছিলেন। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী নিজেদের পরিচয় লুকাতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাস্তায় নামে। অনেকে মুখে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে। ওই কর্মকর্তা জানান, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, সড়ক থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যদের উঠিয়ে নেওয়া হলেই আবারও পরিকল্পিতভাবে রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করবে। এ ছাড়া স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন করে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানান, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় দায়ের হওয়া মামলায় পলাতক জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মী রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় পলাতক থেকে বিভিন্ন কল-কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা ইন্টারনেটে নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করে যোগাযোগ করে থাকেন। তারাই পরিকল্পিতভাবে ঢাকায় প্রবেশ করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করতে পারেন। পুলিশ সদরদপ্তর ও ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পাঁচ শতাধিক মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় অন্তত ৯ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখনো প্রতি রাতেই বিভিন্ন এলাকা 'বস্নক রেইড' দিয়ে সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার মেসবাড়িগুলোয়ও তলস্নাশি চালিয়ে শিক্ষার্থীদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় না খোলা পর্যন্ত গ্রামের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চলমান বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয় ১৮ জুলাই। এরপর টানা দুই দিন ১৯ ও ২০ জুলাই সারাদেশে বিক্ষোভ ও সহিংসতায় ২ শতাধিক মানুষের প্রাণ গিয়েছে। আহত হয়েছে সহস্রাধিক ব্যক্তি। আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে মারা গেছেন পুলিশের তিন সদস্য, আহত হয়েছেন শতাধিক সদস্য। গত ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।