কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত দৈনিক ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী হত্যার বিচার দাবি করেছেন সাংবাদিক নেতারা। শুক্রবার তার জানাজায় অংশ নিয়ে হত্যাকান্ডে জড়িত দোষীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা। রাজধানীর ইস্কাটনে ঢাকা টাইমসের কার্যালয়ে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় অংশ নেন ঢাকা টাইমসের সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন, বাংলাদেশ
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব দীপ আজাদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেনসহ ঢাকা টাইমসের সহকর্মী ও সাংবাদিকরা।
এ সময় সাংবাদিক নেতারা বলেন, সাংবাদিক হাসান মেহেদী পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী এটা সুস্পষ্ট হত্যাকান্ড। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। তদন্তপূর্বক দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানাই।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এভাবে একজন সংবাদকর্মীর মৃতু্য কোনোভাবে মেনে নেওয়ার মতো নয়। এই নির্মমতার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। একজন সাংবাদিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে গোটা রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিক হলেন সমাজ ও রাষ্ট্রের আয়না। সংবাদকর্মীরা যদি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন, প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়, তাহলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। আমরা অবিলম্বে তার হত্যার বিচার দাবি করছি।
ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের প্রিয় সহকর্মী হাসান মেহেদী নিহত হয়েছেন। আমি জানি না কী সান্ত্বনা দেব তার স্ত্রী-সন্তানকে, কী সান্ত্বনা দেব তার বাবা-মাকে। ঢাকা টাইমস পরিবার শোকাহত। আমরা হাসান মেহেদীর হত্যার বিচার চাই।
জানাজায় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মুজতবা আলী ধ্রম্নব, দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস চৌধুরী, নারী বিষয়ক সম্পাদক সুমি খান, ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের (ডিএসইইসি) সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ রানা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাহিদ হাসান প্রমুখ।
এছাড়াও ঢাকা টাইমসের বর্তমান ও সাবেক সহকর্মী এবং হাসান মেহেদীর ছোট ভাই আশিকসহ অন্যান্য গণমাধ্যমের কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষিরা উপস্থিত ছিলেন।
জানাজা শেষে হাসান মেহেদীর মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া যায়। উপজেলার ধুলিয়া ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামের নিজ বাড়িতে তাকে দাফন করা হবে।
বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপরের অংশে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়েছিল মেহেদীর নিথর দেহ। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্যান্য সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসান মেহেদীর ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ঢাকা টাইমসের হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিটে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতেন। এর আগে তিনি বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ২৪ ও দৈনিক কালের কণ্ঠে কর্মরত ছিলেন। তার তিন বছর ও সাত মাস বয়সি দুই কন্যা শিশু রয়েছে।