ফল যদিও দেশের তবে দেশি নয়
প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১৮:১৫
যাযাদি ডেস্ক
দেশে প্রায় ১৩০ রকমের ফল জন্মায়। এর মধ্যে প্রচলিত ও অপ্রচলিত প্রায় ৭২টি ফলের চাষাবাদ হয়। দুই দশক আগেও হতো ৫৬ প্রজাতির ফল চাষ। মূলত গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের ফল দেশে বেশি পাওয়া যায়।
এ অঞ্চলে দেশি ফল বলতেই প্রথমে যে নামগুলো আসে তা হলো-আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, পেঁপে, পেয়ারা, বরই, আমড়া, সফেদা, আনারস, কলা, জাম্বুরা, চালতা, তরমুজ, জামরুল, জলপাই, লটকন, কামরাঙ্গাসহ আরও নানা ধরনের ফল।
এসব ফল আমরা এতদিন দেশি ফল হিসেবেই জেনে এসেছি। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো দেশি ফল হিসেবে জানা এমন অনেক ফলই আছে যাদের প্রকৃত উৎপত্তি বাংলাদেশে বা আশপাশে নয় বরং হাজার মাইল দূরের।
সেক্ষেত্রে প্রকৃত দেশি ফল কোনগুলো সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা তাদের গবেষণাধর্মী মতামত জানিয়েছেন। খবর বিবিসি বাংলা।
দেশি ফল : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. গোলাম রাব্বানীর মতে, অনাদিকাল ধরে যেসব ফল অনায়াসে এই দেশে বা আশপাশের উপমহাদেশীয় অঞ্চলে জন্মেছে এবং ভালো ফলন দিয়েছে সেসব ফলকে দেশি ফল বলা যেতে পারে। দেশি ফলের বৈশিষ্ট্য হলো তারা ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলের মাটি ও জলবায়ুর সঙ্গে খুব ভালোভাবে মানিয়ে যায়।
উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়ার কারণে এসব ফল স্বাদে, গন্ধে ও বর্ণে আকর্ষণীয় এবং বৈচিত্র্যময় হয়ে থাকে। এসব ফলের গাছে তেমন কোনো সার বা সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এক রকম বিনাযত্নেই এসব ফল এ দেশের মাটিতে ভালো ফলে।
কৃষি তথ্য সার্ভিস জানিয়েছে, ঝড়-বাতাস কিংবা বন্যা খরাও সাধারণত দেশি ফলের গাছকে সহজে মারতে পারে না। কেননা এসব গাছের ব্যাপকভাবে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, যা অনেক বিদেশি ফলের নেই। দেশি ফলের আর একটা সুবিধা হলো, এসব ফল বা ফল গাছে বিদেশি ফল গাছের মতো অত বেশি রোগ পোকার আক্রমণ হয় না।
বিদেশি ফলের চাইতে দেশি ফলে পুষ্টিগুণও বেশি থাকে বলে পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন। সে অর্থে বাংলাদেশে প্রচলিত ফলগুলোর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ফলের উৎপত্তি এ অঞ্চলে হয়েছে।
অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী দেশে সবচেয়ে প্রচলিত ২৫টি ফলের উৎপত্তির বিষয়ে জানিয়েছেন।
আম
কৃষি তথ্য সার্ভিসের মতে, আম বাংলাদেশের প্রধান চাষযোগ্য ফল। গোলাম রাব্বানীর মতে এটি ভারতীয় উপমহাদেশীয় ফল। সে হিসেবে একে দেশি ফল হিসেবেই ধরা হয়।
এর আদিনিবাস দক্ষিণ এশিয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফলটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হিমালয় সংলগ্ন পাদদেশ, মিয়ানমার, বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকা, মালয় এবং ইন্দো-বার্মা অঞ্চল থেকে এসেছে।
প্রাচীন ভারতের বহুবিধ ধর্মীয়, সামাজিক ও প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে, প্রাচীন শিল্পকলায় আম, আমের মুকুল, পাতা ইত্যাদির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত 'দ্য ম্যাঙ্গো' বই থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ পার্বত্য চট্টগ্রাম, উত্তর-পূর্ব ভারত ও মিয়ানমারে বুনো আমগাছের রেকর্ড পাওয়া গিয়েছে।
আবার কোনো কোনো ফলবিদদের মতে, আম এসেছে ইন্দো-চায়না অঞ্চল অর্থাৎ ভিয়েতনাম, চীন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ইন্দোনেশিয়া থেকে।
একসময় আম কেবল বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় ফলত। তবে কৃষিতথ্য সার্ভিস বলছে বর্তমানে ৩০টিরও বেশি জেলায় আমের চাষ হচ্ছে।
এটি মূলত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালের ফল। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আমের ১২৭ জাত পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো- গোপালভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি, খিরসাপাত, বারি আম, বাউ আম, ভাসতারা, লক্ষণভোগ, আম্রপালি, মিসরিভোগ, আশ্বীনা, চৌনা, কোহিতুর, মোহনভোগ, কিষাণভোগ, পুষা, মাধুরী, রুবি, মঞ্জিরা, সাবরী, রাতুল ইত্যাদি।
কাঁঠাল
জাতিসংঘের খাদ্য বিষয়ক সংস্থা এফএও'র তথ্যমতে, বার্ষিক উৎপাদনের পরিপ্রেক্ষিতে, আমের পরে কাঁঠাল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফল, যা মোট ফল উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি।
কাঁঠাল মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের একটি ফল। অর্থাৎ দেশি ফল। দেশে কাঁঠালের প্রধান চারটি জাত হচ্ছে- বারি কাঁঠাল, খাজা, আদরাসা ও গালা।
কৃষিতথ্য সার্ভিস জানিয়েছে, সাধারণত জ্যৈষ্ঠ থেকে আষাঢ় মাসে কাঁঠাল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
কলা
বারোমাসি ফল কলার উৎপত্তি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিশেষ করে বাংলাদেশ, আসাম ও ইন্দো চীনে হয়েছে। দেশের উষ্ণ জলবায়ু সম্পন্ন পরিবেশ কলা জন্মানোর জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, দেশে প্রায় ৪০-৫০টি জাতের কলার চাষ হয়। এগুলোর মধ্যে অমৃত-সাগর, সবরি, কবরি, চাঁপা, সিঙ্গাপুরি বা কাবুলি, মেহেরসাগর, এঁটে বা বীচিকলা, কাঁচকলা বা আনাজি কলা, জয়েন্ট গভর্নর এসব উলেস্নখযোগ্য।
বাংলাদেশের নরসিংদী, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, বগুড়া, যশোর, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় এসব কলা উৎপন্ন হয়।
এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, জেলায় বনকলা, বাংলা কলা, মামা কলাসহ বিভিন্ন ধরনের বুনো জাতের কলা চাষ হয়ে থাকে।
জাম
জামের উদ্ভব হয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশে। পরে এটি সারাবিশ্বে ছড়িয়েছে। দেশে প্রধানত দুই জাতের জাম পাওয়া জায়। একটি হলো ছোট জাতের ক্ষুদি এবং আরেকটি বড় আকারের রসালো ও মিষ্টি মহিষে জাত।
কৃষিতথ্য সার্ভিস জানিয়েছে, এটি মূলত গ্রীষ্মের শেষ ও বর্ষাকালের শুরুর সময়ের ফল। অন্য সব মৌসুমি ফলের তুলনায় জামের স্থায়ীকাল বেশ কম। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে এর ফল পাকে।
গাছটির প্রথমে দেখা গিয়েছে দক্ষিণ এশিয়া, সিলন, আন্দামান ও ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জে। বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়ায় এ ফল ব্যাপকভাবে চাষ হয়।
আমাদের দেশে কুমিলস্না, নোয়াখালী, গাজীপুর, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় জাম বেশি উৎপন্ন হয়।
টক মিষ্টি সুস্বাদু এই ফল ও বীজ বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ, ইন্দোনেশিয়া এবং চীনে বিভিন্ন কবিরাজি বা হেকিমি চিকিৎসায়, আয়ুর্বেদি চিকিৎসা সেই সঙ্গে ইউনানি এবং চৈনিক চিকিৎসাতে ব্যবহার হয়ে থাকে।
বরই/কুল
অম্স্নমধুর স্বাদের ফল বরই বা কুল হল দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফল বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী।
বাংলাপিডিয়া অনুযায়ী, ভারতের উত্তরাঞ্চল, চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও মালয়েশিয়ার মধ্যবর্তী এলাকা কুলের আদি জন্মস্থান। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার শুষ্ক এলাকায় কুলের চাষ হয়।
বরইয়ের প্রায় ৪০টি প্রজাতি রয়েছে, তবে ভারতীয় কুল ও চীনা কুল সবচেয়ে বেশি চাষ হয়।
দেশে বরই এর উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে বারি কুল ১, ২,৩, বাউ কুল ১, ২, বিইউ কুল-১, আপেল কুল, নারিকেলি কুল ইত্যাদি বেশ নামকরা বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গিয়েছে।
নারিকেলি কুল ফল লম্বাটে ও মাকু আকৃতির, অগ্রভাগ সুচালো, বীজ লম্বাটে ও ছোট, শাঁসের পরিমাণ বেশি। সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও তার আশপাশের এলাকায় এ কুল বেশি জন্মাতে দেখা যায়।
কুমিলস্না জেলার কচুয়া, বরুড়া ও চান্দিনা উপজেলা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় নারিকেলি কুল বা ডাব কুল বেশি জন্মে।
মংলা, শরণখোলা, মোড়লগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চল; বালু জায়গা যেমন- সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া দ্বীপ, টেকনাফ, কক্সবাজার, মংলা, আবার পাহাড়ি এলাকা যেমন- রাঙ্গামাটিতে চাষ হয় বাউকুল-১। জাত অনুসারে মধ্য পৌষ থেকে মধ্য চৈত্র (জানুয়ারি থেকে মার্চ) মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায়।
আখ/গেন্ডারি
ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ বা ফল আখ প্রাচীন নিবাস এশিয়ার সেসব দেশে যেখানকার আবহাওয়া গ্রীষ্মপ্রধান, রৌদ্রোজ্জ্বল, উষ্ণ এবং মাটি আর্দ্র।
বাংলাপিডিয়া বলছে আখের সরু আকৃতির জাত ভারত উপমহাদেশ, মালয়, ফিলিপাইন এবং পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ এলাকায় ব্যাপকভাবে বিস্তৃত।
আঠারো শতকের শুরু থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আমেরিকায় এটি চাষাবাদ শুরু হয়। নিউগিনিতেও প্রচুর আখ জন্মায়।
বাংলাদেশের সর্বত্র কম-বেশি আখ জন্মালেও চট্টগ্রাম, কুমিলস্না, সিলেট, ঢাকা, ফরিদপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, যশোর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা এবং রাজশাহী আখ চাষের প্রধান এলাকা।
বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ১০০টি দেশে আখের চাষ হয়। তবে প্রধান আখ উৎপন্নকারী দেশগুলো হচ্ছে ভারত, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, বার্বাডোজ, চীন, কিউবা, মেক্সিকো, মিশর, জ্যামাইকা, পেরু, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই, ফ্লোরিডা এবং লুইজিয়ানা।
বর্ষজীবী ফসল হওয়ার কারণে প্রায় সারা বছরই মাঠে আখ থাকে।
তাল
কৃষিতথ্য সার্ভিস বলছে, তালের জন্মস্থান মধ্য আফ্রিকা বলে ধারণা হলেও অনেকে বলেন এটি আমাদের উপমহাদেশীয় বৃক্ষ।
দেশের সব এলাকায় কম-বেশি তাল উৎপাদন হলেও ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, রাজশাহী ও খুলনা এলাকায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়।
তালের কোনো অনুমোদিত জাত নেই। তবে এদেশে বিভিন্ন আকার ও রঙের তাল দেখা যায়। আবার কোনো কোনো তালগাছে বারো মাসই কম-বেশি তাল ধরে থাকে।
পাতার আগা সূচালো হওয়ায় বজ্রপাত রোধক গাছ হিসেবে এ ফলের আবাদ অতি জনপ্রিয়। বজ্রপাতের কবল থেকে প্রাণিকুলকে রক্ষা করার জন্য তাল গাছ সম্প্রসারণকে বেশ প্রাধান্য দেওয়া হয়।
অন্যান্য
বেল ও কতবেল ভারতীয় উপমহাদেশের ফল বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী।
কৃষিতথ্য সার্ভিস বলছে, বাংলাদেশের সর্বত্র বেল জন্মালেও রাজশাহী, কুষ্টিয়া, গাজীপুর জেলায় বেলগাছ বেশি দেখা যায়।
কদবেল নামে পরিচিত আরেকটি ছোট আকারের বেল বাংলাদেশে বেশ সমাদৃত। বাংলাদেশে সব জায়গায় কম-বেশি কতবেল গাছ জন্মে।
আমলকী ভারতীয় উপমহাদেশের ফল বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই প্রাকৃতিকভাবে আমলকী ফলে।
তবে শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, সিরিয়া ইত্যাদি দেশে ফলটি চাষ হয়।
সাধারণত আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই ফল পাওয়া যায়। নানাবিধ ওষধি গুণের জন্য উপমহাদেশে আমলকী ও এর পাতা বেশ জনপ্রিয়।
চালতা হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফল। এটি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশে জন্মে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী। তবে অনেকের মতে চালতা মধ্য আমেরিকার একটি ফল। সাধারণত বর্ষার পর চালতা পাকে এবং শীতকাল পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।
লিচু
বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে লিচু ব্যাপকভাবে চাষ করা জনপ্রিয় ফল হলেও এই ফলের উৎপত্তি হয়েছে মূলত চীনে। সেইসঙ্গে মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম অঞ্চলেও চাষ হতো। তাই একে দেশি ফল বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন গোলাম রাব্বানী।
পরে এই ফলটি ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশ, ভারতীয় উপমহাদেশ, মাদাগাস্কার এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলোয় ছড়িয়ে যায়।
বাংলাদেশের রাজশাহী, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও ঈশ্বরদীতে প্রচুর পরিমাণে লিচু চাষ হয়ে থাকে।
লিচুর প্রায় ২০০ জাত রয়েছে, এর মধ্যে বাংলাদেশে বেদানা, গুটি, মাদ্রাজি, বোম্বাই, মঙ্গলবাড়ী, মোজফফরপুরী, চায়না, কদমি বেশি চাষ হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি ১, ২, ৩, ৪ এই চার হাতের লিচু উদ্ভাবন করেছে।
জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহে আসে বারি ১, জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি বারি ৩, জ্যৈষ্ঠের শেষ সপ্তাহে বারি ৪ এবং আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহে বারি ২ জাতের লিচু আসে।
এ ছাড়া চায়না ৩ নামে উন্নত জাতের লিচু চাঁপাইনবাবগঞ্জে, বোম্বাই জাত যশোর ও কুষ্টিয়ায় চাষ হয়। ভারতের মোজফফরপুর থেকে আসা মোজফফরপুরী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ হয়।
চীন থেকে আসা বেদানা লিচুর ফল পাওয়া যায় জুন-জুলাই মাসে।
এ ছাড়া গুটি, মাদ্রাজি, মঙ্গলবাড়ী জাতের লিচু রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চলে চাষ হয়ে থাকে।
পেয়ারা
পেয়ারা মূলত দক্ষিণ আমেরিকা ও মধ্য আমেরিকার ফল। এ ছাড়া মেক্সিকো, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে পেয়ারা বেশি জন্মে।
কৃষিতথ্য সার্ভিস থেকে জানা যায়, পেয়ারার প্রায় ১০০টিরও বেশি প্রজাতি আছে। তবে বাংলাদেশে বারি পেয়ারা-১, ২, ৩, বাউ পেয়ারা-১, ২, ৩ (লাল শাঁসবিশিষ্ট) ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ উচ্চ ফলনশীল জাত। যা সারাবছর চাষ করা যায়।
স্থানীয় জাতের মধ্যে স্বরূপকাঠি, কাঞ্চননগর, কাজীপেয়ারা ও মুকুন্দপুরী অতি জনপ্রিয় জাত। সাম্প্রতিক সময়ে থাই পেয়ারা চাষে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
সাধারণত বর্ষাকালে গাছে সবচেয়ে বেশি পেয়ারা হয়। তবে সব জাতের পেয়ারার গুণাগুণ শীতকালে বেড়ে যায়।
নারিকেল
নারিকেল হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফল। কৃষিতথ্য সার্ভিসের মতে, বারো মাসের এই ফলের আদিস্থান প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ।
এসব স্থান থেকেই পরে শ্রীলংকা, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়াগিনি, ওশেনিয়া, আফ্রিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, ঘানাসহ পৃথিবীর প্রায় ৯৩টা দেশে এর বিস্তার ঘটে।
তবে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স এবং ভারত বেশি পরিমাণে নারিকেল উৎপাদন করেছে।
গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও উপ গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলোয় নারিকেল ভালো জন্মে। এ গাছের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া বেশ উপযোগী। বিশেষ করে যেখানে বছরের বেশিরভাগ সময় ধরে কিছু না কিছু বৃষ্টি ঝরে।
বাংলাদেশ বারী নারিকেল-১ এবং ২ নামে তারা দুটা নারিকেলের জাত অবমুক্ত করেছে। যেগুলো উপকূলীয় এলাকার ভেতরের অংশে দেখা যায়।
আনারস
আনারসের উৎপত্তি দক্ষিণ আমেরিকায়। কৃষিতথ্য সার্ভিসের মতে, গবেষকদের ধারণা এই ফলের উৎপত্তিস্থল ব্রাজিলে। আনুমানিক ১৫৪৮ সালের দিকে আমাদের এ অঞ্চলে আনারস এসেছে।
এটি উৎপাদনে এগিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে আছে ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, কোস্টারিকা, ব্রাজিল।
আনারস বাংলাদেশের সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং টাঙ্গাইল জেলায় ব্যাপকভাবে চাষ হয়। ঢাকা, নরসিংদী, কুমিলস্না, দিনাজপুর জেলাতেও আনারসের চাষাবাদ হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর এলাকার আনারস একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল হিসেবে বিবেচিত।
আনারসের ঘোড়াশাল, জায়ান্টকিউ, জলঢুপি ও হানিকুইন জাত বেশি জনপ্রিয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে আগস্ট মাসে আনারস পাকে।
তরমুজ
গ্রীষ্মের সবচেয়ে প্রত্যাশিত ফল তরমুজ এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। বাংলাদেশে একসময় পতেঙ্গা ও গোয়ালন্দ নামে দুটি জাতের তরমুজ চাষ হতো।
বর্তমানে বারি তরমুজ-১, বারি তরমুজ-২, পাকিজা, টপইল্ড, গেস্নারি, তাইওয়ান, ওয়ার্ল্ড কুইন, সুগার বেবি, চ্যাম্পিয়ন, এম্পার, নিউ সুপার ড্রাগন, ওয়ার্ল্ড হিরো, ভিক্টোরি, বস্ন্যাক মাস্টার, হান্টার, সুপার আলেকজান্ডার, সুইট ক্রাঞ্চ, বস্ন্যাক চ্যাম্প, কারিশমা, বিএএই মেলন-১ চাষ হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট পদ্মা ও সাগর নামে দুটি জাত সারাদেশে চাষ করার অনুমোদন দিয়েছে।
তরমুজের প্রধান মৌসুম এপ্রিল-মে মাস। এ ছাড়া অন্য সময়েও তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ তরমুজ বেশি পাওয়া যায়।
এসব তরমুজকে অনেকে নাম দিয়েছেন 'বারোমাসি তরমুজ'। কৃষিতথ্য সার্ভিস থেকে এমনটা জানা গিয়েছে।
হবিগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, মৌলভীবাজার, ভোলা প্রভৃতি জেলায় কিছু কৃষক ইতোমধ্যে এই বারোমাসি তরমুজ চাষ করছে।
বারোমাসি জাতের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো বস্ন্যাক বেবি, বস্ন্যাক প্রিন্স, বস্ন্যাক বক্স, জেসমিন ১, জেসমিন ২, জেসমিন ৩ ইত্যাদি। এসব জাত বছরের যে কোনো সময় চাষ করা যায়।
মালটা
মাল্টা মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি ফল বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী। কৃষিতথ্য সার্ভিসের মতে, ফলটির আদি উৎপত্তিস্থল ভিয়েতনাম, দক্ষিণ চীন এবং উত্তর-পশ্চিম ভারত। মাল্টা মূলত জাম্বুরা বা বাতাবিলেবু এবং কমলা এই দুই ফলের সংকরায়নের মাধ্যমে সৃষ্টি।
বাংলাদেশে চাষ উপযোগী জাতের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বারি মাল্টা-১ অন্যতম।
দেশি জাতের মাল্টা গাছে মার্চ এপ্রিলে অর্থাৎ ফাল্গুন চৈত্র ফুল আসে, ফল পাকে অক্টোবর নভেম্বরের দিকে বা কার্তিক মাসে। তবে বিদেশি জাতের মাল্টা সারাবছর ধরে পাওয়া যায়।
কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, কমলা লেবুর তুলনায় এর অভিযোজন ক্ষমতা বেশি। তাই চাষের জন্য পাহাড়ি এলাকা উৎকৃষ্ট।
পিরোজপুর সদরের বেশকটি গ্রামের অসংখ্য বাগানে মাল্টা চাষ হয়ে থাকে। দক্ষিণের কয়েকটি পাহাড়ি এলাকায় মাল্টা চাষ হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের মাটি, পানি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সেখানে মাল্টা চাষের বিরাট সম্ভাবনাময়।
অন্যান্য
বর্ষার প্রচলিত ফল আমড়ার উৎপত্তি ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্সে। পরে এই ফল বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। বাংলাদেশে বারি আমড়া ১ চাষ হয়।
জেনে অবাক হবেন বারোমাসি ফল পেঁপে হলো মধ্য আমেরিকার ফল। পরে এটি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশে বারি পেঁপে-১, রেড লেডি, বাদশা রবি, খারিফ, শাহী পেঁপে চাষ করা হয়।
বাংলাদেশে প্রচলিত ফলের মধ্যে জামরুল মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে এসেছে।
কমলা চীন থেকে আসা একটি ফল যা পরে বাংলাদেশেও চাষ শুরু হয়। বাংলাদেশে বারি ১ জাতের কমলার চাষ হচ্ছে।
জাম্বুরা মালয়েশিয়ার ফল। বাংলাদেশে এফটিআইপি বাউ জাম্বুরা ১, ২, বারি বাতাবি লেবু ১, ২, ৩, ৪, ৫ চাষ হয়ে থাকে।
সাধারণত ভাদ্রের প্রথম থেকে মধ্য আশ্বিন পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা হয়।
শরিফা এবং আতা ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে এসেছে। বাংলাদেশে মূলত থাই জাতের লাল ও সবুজ রঙের শরিফাই বেশি জনপ্রিয়।
এটি উচ্চ ফলনশীল ও বাংলাদেশের সব এলাকায় চাষের উপযোগী। খেতে সুস্বাদু হলেও এই ফলটি এখনো অপ্রচলিত ফল হিসেবেই পরিচিত। অর্থাৎ বাজারে এটি ব্যাপকভাবে বিক্রি হয় না।
উষ্ণ ও ক্রান্তীয় অঞ্চলের ফল সফেদা মূলত মধ্য আমেরিকা, মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চল ও ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে এসেছে। বাংলাদেশে বারি সফেদা ১, ২ চাষ হয়ে থাকে।
এই ফল দেশের মধ্যাঞ্চল বিশেষ করে ঢাকা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও নরসিংদী এলাকায় ভালো হলেও দেশের অন্য এলাকায়ও এই ফল চাষ হয়।
ডালিম এসেছে আফগানিস্তান থেকে। আবার অনেকের মতে এর আদিনিবাস ইরান এবং ইরাক। ককেশাস অঞ্চলে এর চাষ প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। সেখান থেকে তা ভারত উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করেছে।
বর্তমানে এটি তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া, স্পেন, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইরাক, লেবানন, মিশর, চীন, বার্মা, সৌদি আরব, ইসরাইল, জর্ডান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শুষ্ক অঞ্চল, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, দক্ষিণ ইউরোপ এবং ক্রান্তীয় আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে।
যে মৌসুমে যে ফল
ছয় ঋতুর বাংলাদেশে সারাবছর ফল পাওয়া গেলেও সবচেয়ে বেশি বাহারি ফলের সমাহার দেখা দেয় বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসে।
এ সময় মধু মাসও বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশটির তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, আবহাওয়া, মাটি, জলবায়ু পরিবেশ সারাবছর বিভিন্ন ধরনের ফল চাষের উপযোগী।
বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, বাংলাদেশে উৎপাদিত ফলের প্রায় ৬০ শতাংশ বৈশাখ থেকে শ্রাবণ (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) এ চার মাসেই পাওয়া যায়। এ সময়কে মধুমাস বলা হয়।
আর বাকি ৪০ শতাংশ ফল পাওয়া যায় অবশিষ্ট আট মাসে। শীতের মৌসুমে ফল তুলনামূলকভাবে কম জন্মায়।
আবার, কৃষিতথ্য সার্ভিস থেকে জানা যায়, পৌষ থেকে চৈত্র মাসে মোট ফলের ২৪ শতাংশ, বৈশাখ থেকে শ্রাবণ পর্যন্ত ৫৪ শতাংশ ও ভাদ্র থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত বাকি ২২ শতাংশ ফল পাওয়া যায়।
গ্রীষ্মের মধুমাসে মূলত আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, বাঙ্গি, তরমুজ, ডালিম, আনারস ফলে।
বর্ষাকালে পাওয়া যায় পেয়ারা, লটকন, আমড়া, জাম্বুরা, জামরুল, ডেউয়া, কামরাঙা, কাউ, গাবসহ নানা ধরনের ফল।
শরৎকালের ফল হলো জলপাই, তাল, জগডুমুর, অরবরই, আমলকী, করমচা, চালতা, ডেউয়া ইত্যাদি।
হেমন্তের ফল- পানিফল, সাতকরা, কতবেল। বসন্তের ফল- বরই, তেঁতুল, আতা, শরিফা ইত্যাদি। অন্যদিকে নারিকেল, কলা হলো সারাবছরের ফল।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ১০টি শীর্ষ গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল (ট্রপিক্যাল ফ্রুট) উৎপাদনকারী দেশের একটি।
সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বার্ষিক কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়, পেঁপে উৎপাদনে চতুর্দশ, আম উৎপাদনে সপ্তম ও পেয়ারা উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে।
বিপন্ন হতে পারে যেসব ফল
একসময় যে অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে যে ফল উৎপাদিত হতো সেখানকার মানুষ শুধু সেই ফলই খেত। এরপর শুরু হয় ফল চাষ করা। সেই সঙ্গে বিদেশ থেকে বাহারি ফল আমদানি শুরু হয়।
এক্ষেত্রে খেজুর প্রথম দিকের চাষ করা একই সঙ্গে আমদানি করা ফল বলে মনে করা হয়।
কৃষিতথ্য সার্ভিস বলছে, বাংলাদেশে মোট ১৩০ প্রজাতির ফল রয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি বুনো ফল। অর্থাৎ এসব ফল চাষাবাদ বা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয় না।
বাকি ৭০ প্রজাতির ফল ব্যাপকভাবে না হলে স্বল্প আকারে প্রচলিত এবং এর বেশিরভাগ ফল চাষ করা হয়।
অন্যদিকে বুনো ফল বসতবাড়িতে বা বনে জঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবে গজিয়ে ওঠা গাছেই টিকে আছে। এসব ফল সংরক্ষণ করা না হলে তা যে কোনো সময় বিপন্ন হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসব বুনো ফলের মধ্যে রয়েছে লটকন, বেতফল, লুকলুকি, ডেউয়া, ডেফল, করমচা, জংলিবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, গোলাপজাম, তুঁত, তিনকরা, সাতকরা, আদা জামির, জামির, মনফল, অরবরই, আঁশফল, তারকা ফল, গাব, বিলাতি গাব, আতা, শরিফা, কাউফল, তৈকর, ডালিম, চালতা, ডুমুর, বৈঁচি, টকআতা, পানিফল, সিঙ্গাড়াফল, জিলাপিফল, পদ্মফল, মাখনা, রুটিফল, বকুল, ফলসা, চুকুর, পাদফল, চিকান, পানকি চুনকি, টুকটুকি বা টাকিটাকি, বিলিম্বি, ডালিম, ক্ষুদিজাম।
অপ্রধান ও স্বল্প আকারে চাষকৃত ফলের মধ্যে রয়েছে সফেদা, কামরাঙা, আমড়া, বাতাবিলেবু, কদবেল, বেল, জলপাই, তাল, খেজুর, তেতুঁল, জাম, জামরুল, আমলকী, বাঙ্গি।
এর বাইরে অন্যান্য ফল হাজার হাজার বছর আগে বিভিন্ন দেশ থেকে এ দেশে এসে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এবং কালক্রমে সেগুলো আমাদের ফলে পরিণত হয়েছে।
দেশে চাষযোগ্য বিদেশি ফল
বাংলাদেশে ফল চাষে বৈচিত্র্য আনতে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন বিদেশি ফল বা বিদেশি জাত বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী করে দেশে প্রবর্তন করছে।
ফলে বর্তমানে বিভিন্ন বিদেশি ফল বাংলাদেশে চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ড্রাগন ফ্রুট, স্ট্রবেরি, অ্যাভোকাডো, থাই পেয়ারা, এল৪৯ ইন্ডিয়ান পেয়ারা, ১৫ জাতের আম, রাম্বুটান, সৌদি খেজুর, খাটো জাতের নারিকেল, থাই কুল, থাই পেঁপে, পার্সিমন, লংগান, বারোমাসি আঠাবিহীন কাঁঠাল, এমবি২ আনারস।
ভিয়েতনাম থেকে খাটো জাতের নারিকেল গ্রাম অঞ্চলের জন্য এবং ভারতের কেরালা থেকে উচ্চ ফলনশীল নারিকেল শহর অঞ্চলের জন্য প্রবর্তন করা হয়েছে।
সব বিদেশি ফলের ফলন বাংলাদেশের মাটিতে আশানুরূপ না হলেও অন্তত ১০-১৫টি ফল বাণিজ্যিক আবাদে সাফল্য পেয়েছে কৃষি বিভাগ।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বারি) উদ্ভাবিত মাল্টা, আম, পেয়ারা, বরই, লিচু, কলা, পেঁপে, স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফল ইত্যাদি দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত ও কৃষক কর্তৃক সমাদৃত হয়েছে।