জমি বলতে পৈতৃক ভিটে ছাড়া কিছুই নেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী জাহাঙ্গীর আলমের। অথচ অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি। ঢাকায় নিজস্ব ফ্ল্যাট, রংপুর ও ডিমলায় রাজকীয় বাড়ি, নিজে ব্যবহার করেন অর্ধকোটি টাকা মূল্যের গাড়ি। এছাড়া রাজশাহী শহরে মাইক্রোবাসের শোরুম, নিজ নামে স্ত্রী, ভাই ও নিকটাত্মীয়ের নামে বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমিয়েছেন অঢেল টাকা। আর তার সম্পদের তথ্য জানাজানি হওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অনুসন্ধানে ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়, প্রতি শুক্রবার ঢাকায় গিয়ে তিনি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থীদের মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্রক্সি পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। এর আগে তিনি প্রক্সি পরীক্ষায় অংশ নেন। এ বিষয়ে আদালতে একটি মামলাও বিচারাধীন আছে। তিনি নিজেকে কর কমিশনারের কর্মী পরিচয় দিয়ে নিজের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সহজ-সরল মানুষকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেন। এ ছাড়া স্বামী পরিত্যক্ত একজন স্কুল শিক্ষিকার সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক আছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, ডিমলা উপজেলার রুপাহারা গ্রামের সাবেক স্কুল শিক্ষক আব্দুল আজিজের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ২০১৩ সালে ন্যাশনাল সার্ভিসে যোগ দিয়ে বিভিন্ন মানুষের নাম ও আইডি ব্যবহার করে শত শত মানুষের মাসিক টাকা উত্তোলন করতেন। এছাড়াও রংপুরের বদরগঞ্জ ও গঙ্গাচড়া উপজেলায় একই কায়দায় প্রতি মাসে কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। রাজস্ব বোর্ড (ইনকামট্যাক্স) রাজশাহী অফিসে (তৃতীয় শ্রেণির) অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করে ঞড়ুঃধ ঈ-ঐজ ব্র্যান্ডের ঢাকা মেট্রো ঘ-১২-৩১১০ অর্ধকোটি টাকা মূল্যের হলুদ রঙের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন। শুধু তাই নয়; রাজশাহী শহরে তার মাইক্রোবাসের শোরুম, নিজ নামে, স্ত্রী-ভাই ও আত্মীয়-স্বজনের নামে ডিমলা উপজেলা সদরে দুটি বাড়ি, রংপুর শহরের রাধাবলস্নভ এলাকায় বহুতল রাজকীয় বাড়িসহ দুটি বাড়ি ও ঢাকায় নিজস্ব ফ্ল্যাটসহ স্ত্রী ও নিকটাত্মীয়দের বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে অঢেল টাকা জমা রেখেছেন। তার স্ত্রী রাশেদা আলমের নামে অর্ধকোটি টাকার এফডিআর রয়েছে।
তার এই অঢেল সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান করে জানা যায়, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করলেও তিনি নিজ এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে কর কমিশনার পরিচয় দিতেন। তিনি সহজ-সরল মানুষকে বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। চাকরির পরীক্ষার প্রক্সি, প্রশ্নপত্র ফাঁস সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী এমন অভিযোগ করেছেন।
জাহাঙ্গীর আলম ২০২২ সালের (১০ ডিসেম্বর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, রংপুরের তৃতীয় শ্রেণির নিয়োগ পরীক্ষায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদের পরীক্ষায় নীলফামারী জেলার সদর থানার কাহানীপাড়া গ্রামের সামাদ আলীর ছেলে নুরুজ্জামান ইসলামের (২৫) লিখিত পরীক্ষায় মোটা অঙ্কের টাকা চুক্তির বিনিময়ে প্রক্সি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অপরাধে মৌখিক পরীক্ষার বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সদস্যসচিব ও উপকমিশনার কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে রংপুর কোতোয়ালি (আরএমপি), রংপুর মেট্রোপলিটন থানার মামলা নং-২৫, তারিখ-১০/১২/২০২২ইং দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি রংপুর আদালতে বিচারাধীন।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ। তিনি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার স্বামী পরিত্যক্ত এক সহকারী শিক্ষিকার সঙ্গে রংপুরের লালবাগ এলাকায় নিজের বাসায় সময় কাটান। বিনিময়ে ওই শিক্ষিকাকে দুটি গাড়ি কিনে দেওয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি নিজেকে ঢাকা রাজস্ব বোর্ডের পেশকার হিসেবে দাবি করে বলেন, 'ধামার পেছনে লেগে কোনো লাভ নেই, আমার হাত অনেক লম্বা।'