রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

পাঁচ দিন পর প্রাণ ফিরেছে সচিবালয়ে, ছিল কড়াকড়ি

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
টানা ৫ দিন ছুটির পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বুধবার সচিবালয়ে প্রবেশ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা -ফোকাস বাংলা

দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি ও তিন দিন সাধারণ ছুটির পর সীমিত পরিসরে খুলেছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়। তবে প্রবেশে ছিল কড়াকড়ি। তলস্নাশি করেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢুকতে দেওয়া হয়। এদিন দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনে সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতা ও কারফিউয়ের মধ্যে অফিসের সময়সূচি ৪ ঘণ্টা নির্ধারণ করে বুধবার ও বৃহস্পতিবার অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পাঁচদিন পর অফিস খোলার প্রথমদিন সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাভাবিক উপস্থিতি দেখা গেছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এদিন বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস খোলা ছিল। আজও একই সূচিতে অফিস চলবে।

এদিন সকালে সচিবালয়ের সবকটি গেট খোলা থাকলেও এক এবং দুই নম্বর গেটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। এক ও দুই নম্বর গেটের মাঝের অভ্যর্থনা কক্ষে দর্শনার্থীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে এদিন দর্শনার্থীদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। টেলিভিশন ও অন্যান্য গণমাধ্যমের গাড়িগুলো থেকে সাংবাদিকদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিয়ে গাড়িগুলোকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। দায়িত্ব পালনরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের এভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।'

সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের নিচে লিফটের সামনে দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন। এই ভবনের একটি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের একজন উপসচিব বলেন, 'আমাদের মন্ত্রণালয়ে কর্মীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।'

এদিন যারা ব্যাগ নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করেছেন, তাদের ব্যাগও তলস্নাশি করা হয়েছে। নারীদের তলস্নাশি করার জন্য নারী পুলিশও কাজ করেছেন। সচিবালয়ে গাড়ির সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে।

এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইফতেখান হোসেন বলেন, 'পাঁচ দিন পর অফিস করছি। তবে এই কয়দিন আমাদের কার্যক্রম থেমে থাকেনি। আজকে রাস্তায় যানজট দেখা গেছে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারণ মানুষ বেরিয়েছেন।'

সচিবালয়ে দায়িত্বরত পুলিশের একজন সদস্য জানান, 'অন্যান্য দিনের মতো আজ সকাল থেকেই আমরা তৎপর রয়েছি। সচিবালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।'

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, আজকে রাস্তায় যান চলাচল করছে। অবশ্য অন্য দিনের তুলনায় কম দেখা গেছে। আমাদের মন্ত্রণালয়ে প্রায় সবাই সঠিক সময়ে উপস্থিত হয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই অফিসে আসতে পেরেছি।

নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সচিবালয়ে উপস্থিত হন বেলা ১১টায়। এরপর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি কিছু কাজ শেষ করে দুপুর ১টার দিকে বের হয়ে যান।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, 'অর্থ প্রতিমন্ত্রী মহোদয় সকাল ১১টায় অফিসে এসেছেন, এখনো আছেন। আমাদের মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা কর্মচারীই নিজ নিজ কাজ করছেন। তবে ৩টা পর্যন্ত যেহেতু অফিস চলবে, আমাদের একটু দ্রম্নতই কাজ করতে হচ্ছে।'

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অফিস সহকারী বলেন, 'একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন পর অফিস চালু হওয়ায় স্বস্তি লাগছে। জনজীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।'

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। এরপর রোববার থেকে শুরু করে মঙ্গলবার পর্যন্ত সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কারফিউ শিথিলের সময়ও বাড়ানো হতে থাকে।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবারও সরকারি-বেসরকারি অফিস চলবে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত। আজ ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে বলে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে পরিস্থিতি বুঝে কারফিউয়ের সময়সীমা নির্ধারণ করবে স্থানীয় প্রশাসন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে