রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

চট্টগ্রামে উন্নতি, মোংলা ও পায়রায় স্বাভাবিক

দেশের বন্দর পরিস্থিতি চট্টগ্রামের ১৯টি অফডকে জমে আছে প্রায় পাঁচ হাজার কনটেইনার তিন দিনে ৬৬ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত কাস্টমস হাউস
যাযাদি ডেস্ক
  ২৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
আপডেট  : ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৫
CTG

কোটা আন্দোলন ঘিরে ঘটে যাওয়া সহিংসতার জেরে মহাসড়কে পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ হওয়া এবং ইন্টারনেট সেবা না থাকায় দেশের প্রধান নদী বন্দরগুলোয়ও এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। ব্যাহত হয় সার্বিক কার্যক্রম। তবে ইন্টারনেট সেবা ও পণ্যপরিবহণ চালু হওয়ায় এসব বন্দরের কাজে ছন্দ ফিরতে শুরু করেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অন্যদিকে মোংলাবন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আর গত ৫ দিনে কারফিউর মধ্যেও মংলাবন্দর থেকে ৯৩ হাজার ৭০০ মেট্টিক টন পণ্য খালাস হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে তাই বন্দরের কার্যক্রমে গতি বেড়েছে।

এদিকে পায়রা সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বুধবার সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ায় বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমেও গতি ফেরার আশা জেগেছে। ব্যবসায়ীরা এখন আমদানি ও রপ্তানির সব পণ্য খালাস করতে পারছেন বলে দাবি করেন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপ-কমিশনার ইমাম গাজ্জালী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'কাল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত ম্যানুয়ালি পচনশীল মাল শুল্কায়ন করেছি।

আজ (বুধবার) ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হওয়ায় সব কার্যক্রম স্বাভাবিক হচ্ছে।' চট্টগ্রাম কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আকতার হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাস্টমস হাউজে সমস্যা হচ্ছে না। সমস্যা হলো আমরা শিপিং এজেন্টদের থেকে ডিউ না পাওয়ায় মাল খালাস করতে পারছি না। তারা নাকি ইন্টারনেট পাচ্ছে না।' এ বিষয়ে উপ-কমিশনার ইমাম গাজ্জালী বলেন, 'কারও পে-অর্ডার ও চালান না থাকলে আমরা অঙ্গীকারনামা নিয়ে মাল খালাস করতে দিচ্ছি।' এদিকে, চট্টগ্রামের ১৯টি অফডকে রপ্তানি পণ্যবাহী প্রায় পাঁচ হাজার কন্টেইনার জমে আছে। এর পাশাপাশি তৈরি পোশাক কারখানাগুলো থেকে নতুন কোনো রপ্তানি পণ্য গত কয়েক দিনে অফডকে আসেনি। অফডকগুলো থেকে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার শিল্প-কারখানার পাঠানোর কাজও আটকে ছিল। বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর এম সোহায়েল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'বন্দরের সব জেটিতে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু ডেলিভারিতে সমস্যা হয়ে যায়। সে কারণে বন্দরে থাকা কন্টেইনারের সংখ্যা বেড়ে গেছে।' বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, 'শনি থেকে সোমবার ডেলিভারি কম হওয়ায় কন্টেইনার জমে গিয়েছিল। এটা আরও বাড়লে হয়তো সমস্যা হতো। কিন্তু মহাসড়কে যানবাহন চলতে শুরু করায় মঙ্গলবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বন্দরের ভেতরে সব কার্যক্রম যেমন- জাহাজ থেকে কন্টেইনার লোড-আনলোড, জাহাজের আসা-যাওয়া সবই স্বাভাবিক ছিল এবং আছে। তবে ইন্টারনেট ডাউন থাকায় টার্মিনাল অপারেটিং ম্যানুয়ালি করতে হচ্ছে। এতে কর্মীদের বেগ পেতে হচ্ছে।' চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সোমবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি কোনো কন্টেইনার ডেলিভারি হয়নি। আর অফডকগুলোয় গিয়েছিল মাত্র ৪১৫ টিইইউএস (টুয়েন্টিফিট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট- ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনারকে একক ধরে) কন্টেইনার। সোমবার সকাল পর্যন্ত (আগের ২৪ ঘণ্টায়) চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে জাহাজ থেকে নেমেছে ২১০৭ টিইইউএস কন্টেইনার। আর জাহাজে ওঠানো হয়েছে ২৯৭২ টিইইউএস কন্টেইনার। এর মধ্যে খালি কন্টেইনার ১০৯৬ টিইইউএস। বাকি ১৮৭৬ টিইইউএস কন্টেইনার ছিল রপ্তানি পণ্যের। মঙ্গলবার বন্দর থেকে সরাসরি ডেলিভারি হয়েছে মাত্র ৬৫টিইইউএস কন্টেইনার আর অফডকে গেছে ১১১০ টিইইউএস কন্টেইনার। স্বাভাবিক সময়ে বন্দরের জেটিগুলোয় সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টিইইউস কন্টেইনার থাকে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত (আগের ২৪ ঘণ্টায়) চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে জাহাজ থেকে নেমেছে ৯৪৮ টিইইউএস কন্টেইনার। মঙ্গলবার দিনশেষে বন্দরে থাকা কন্টেইনারের ছিল ৪১৬২০ টিইইউএস। বন্দরের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ৫৩৫১৮ টিইইউএস। আর জাহাজে ওঠানো হয়েছে ২০৪৪ টিইইউএস কন্টেইনার। এর মধ্যে খালি কন্টেইনার ৮২৪ টিইইউএস। বাকি ১২২০ টিইইউএস কন্টেইনার ছিল রপ্তানি পণ্যের। ইন্টারনেট সেবা বন্ধের আগে যেসব পণ্যের শুল্কায়ন শেষ হয়েছিল, এমন পণ্যই এখন খালাস হচ্ছে। নতুন করে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় বন্দরে পণ্যের জটলা তৈরি হয়েছে।

বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করেছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগ) মো. মাকরুজ্জামান। তিনি জানান, আমদানি-রপ্তানিকারকরা বন্দরে এলে তাদের পণ্য ডেলিভারি নিতে পারবেন। এজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সব রকমের প্রস্তুত রেখেছে।

মোংলা কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষের কমিশনার কে এম মাহাবুবুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে জানান, 'স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তাদের প্রতি মাসে রাজস্ব আয় হয় ৩০০ কোটি টাকা। আর প্রতিদিন রাজস্ব আদায় হয় ১৫-১৬ কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, 'শুধু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নয়, এই পরিস্থিতিতে আমদানি-রপ্তানিকারকরাও চরম বিপাকে পড়ে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ইন্টারনেট না থাকায় অনলাইনে শুল্কায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পচনশীল পণ্য যাতে খালাস করা যায়, সেজন্য সনাতন পদ্ধতি 'লোকাল এরিয়া ইন্টারনেট' চালু রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা চাইলে তাদের পচনশীল পণ্য খালাস করতে পারবেন।' কিন্তু এই তিনদিনে আমদানি-রপ্তানিকারকদের কেউ আসেননি বলেও জানান তিনি।

মোংলা বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'গত বৃহস্পতিবার থেকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় কাস্টমসে 'বিল অব এন্ট্রি' করা যাচ্ছে না। ব্যাংক ট্যাক্সের টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে না।

ট্রাকে বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাচ্ছে না।' মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'চলমান পরিস্থিতিতে মোংলা বন্দরকে ঘিরে নাশকতা এড়াতে নৌবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। স্বাভাবিক রয়েছে বন্দরে অবস্থান করা দেশি-বিদেশি জাহাজের কার্যক্রম। গাড়ি আমদানিকারকরা চাইলে মোংলা বন্দর থেকে গাড়ি খালাস করতে পারতেন। সে ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষ সড়ক-মহাসড়কে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে তাদের সহযোগিতা করত।' পায়রা বন্দর কার্যক্রম স্বাভাবিক অন্যদিকে, বিকল্প ব্যবস্থাপনায় পায়রা বন্দরের সব কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্মকর্তারা।

পায়রা বন্দরের পণ্য লোডিং-আনলোডিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। এ ছাড়া জুলাই মাসে এ পর্যন্ত বন্দরে আটটি মাদার ভ্যাসেল পায়রা বন্দরে আগমন করে। এ থেকে সরকারের প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।' এদিকে বন্দরের প্রথম জেটি, ছয় লেনের সড়ক, সেতুসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে স্বাভাবিক গতিতে। পায়রা সমুদ্র বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল আব্দুলস্নাহ আল-মামুন চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, 'বন্দরে এখন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। শ্রমিকদের নিরাপত্তা, কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ সরকারের জারি করা কারফিউ, সবকিছু মাথায় রেখেই পুরো কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছে। বন্দরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা এবং বন্দর সচল রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।' আর এ কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়নি বলেও জানান বন্দর চেয়ারম্যান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে