কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজশাহী ও নাটোরে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শিক্ষার্থী, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদশীরা জানান, বেলা সাড়ে ১০টার দিকে কোটা সংস্কারের নামে আন্দোলনকারী রাজশাহীর শিক্ষার্থীরা লাঠি হাতে নিয়ে সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে জড়ো হন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন। আন্দোলনকারীরা পালানোর সময় হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় দুই তিনজনকে ধরে মারধর করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পরে সেখানে উপস্থিত হয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন আন্দোলনকারীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার আহবান জানান। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহীর সমন্বয়ক রাফিন হাসান অর্নবও মাইকিং করে শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলেন।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, 'আন্দোলন এখন ছাত্রদের হাতে নেই। কোটাবিরোধী আন্দোলন ছাত্রদের কাছ থেকে বিএনপি-জামায়াত চক্র ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা এখন পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটি মেনে নেওয়া হবে না। অরাজকতা করলে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। কোনোভাবেই কাউকে বিশৃলঙ্খা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না।'
এদিকে, সংঘর্ষের কারণে সাহেববাজার এলাকার দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে শহরে যানবাহন চলাচলও কম ছিল। অবরোধের কারণে রাজশাহী থেকে দূরপালস্নার বাস চলাচল করেনি। তবে আন্তঃনগর বাস চলাচল করে। অন্যদিকে, রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় মহিলা কলেজের সামনে পুলিশের গাড়ির ওপর হামলা করে ভাঙচুর চালিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়া হয়।
পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভার নিজেকে রক্ষা করেন। পরে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় তিন পুলিশসহ আটজন আহত হন। আহতদের মধ্যে পাঁচজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী।
বোয়ালিয়া থানার ওসি হুমায়ন কবীর বলেন, 'দুপুর ১টার দিকে রাজশাহীর নিউ মার্কেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিলে তারা অংশ নেয়। মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মহিলা কলেজের সামনে পুলিশের গাড়িতে হামলা চালান। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে তিন পুলিশ আহত হন। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের ধাওয়া দেয়। প্রায় ১০ মিনিট ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে।'
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলাকালে এখানে শতাধিক পুলিশ বিজিবি মোতায়েন করা হয়। শিক্ষার্থীরা 'হৈ হৈ রৈ রৈ ছাত্রলীগ গেল কই', 'আমার ভাইয়ের রক্ত কেন? প্রশাসন জবাব চাই', 'কুমিলস্নায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই', 'মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা' ইত্যাদি স্স্নোগান দেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবির বলেন, 'মনে অনেক কষ্ট নিয়ে আজকে রাজপথে দাঁড়িয়েছি আমরা। আমাদের ভাই বোনদের মৃতু্য বৃথা হতে কখনো দেব না। প্রয়োজন হলে আমরাও রাজপথে জীবন দেব। বুধবারও আমাদের উপর পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। আমরা সবাই রাজপথে জীবন দিতে চাই, তবুও আমাদের আন্দোলনের যে দাবি রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করে ছাড়ব।'
রুয়েট শিক্ষার্থী সাকিবুল হাসান বলেন, 'সরকার জেনেশুনেই আমাদের সঙ্গে নাটক শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মন্তব্য করেছেন তা আমাদের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। আমাদের যৌক্তিক দাবিকে সরকার ভিন্নখাতে নিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক দাবির জন্য রক্ত দিচ্ছে। আমাদের কয়েকজন ভাই ইতোমধ্যে মারা গেছেন। তাদের রক্তের বিনিময়ে হলেও ছাত্রদের দাবি বাস্তবায়ন হবে।'
এদিকে নাটোরে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
শহরের মসজিদ মার্কেট এবং বড়াইগ্রাম উপজেলার আহম্মেদপুর এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর নাটোর শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
অন্যদিকে জয়পুরহাটে কোটা আন্দোলনকারীরা রামদেও বাজলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের দিকে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। আন্দোলনকারীরা পুলিশের বেরিকেড ভেঙে শহরের প্রাণকেন্দ্র পাঁচুর মোড়ে অবস্থান নিয়ে কোটা বিরোধী বিভিন্ন স্স্নোগান দেয়।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ২ জন আহত হন। আন্দোলনকারীরা বেলা ১টা পর্যন্ত অবস্থান নেয়ার পর তারা শহরের বাটারমোড় এলাকার দিকে চলে যান। শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। শহরে ২ পস্নাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।